বেরিয়ে আসছে ৭২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ৩১ মামলার আসামী

Submitted by WatchDog on Monday, March 21, 2011

Bangladesh

একজনকে চিনলেও ছবিটার দ্বিতীয়জনকে চিনতে অনেকেরই বোধহয় কষ্ট হবে। কেউ হয়ত বলবেন কোথায় আগরতলা আর কোথায় চৌকিরতলা! কোথাকার কোন মদনের পাশে বিশ্বখ্যাত ’সুদখোর’ ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে দেখে নিশ্চয় কৌতূহলী হবেন অনেকে। ধৈর্য্য ধরুন, কিছুটা সময় নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেব এই ’বীরের’ সাথে। নিশ্চয়তা দিতে পারি, ডক্টরের পাশে যার ছবিটা দেখছেন বিশেষ একটা এলাকায় তার পরিচিতি নোবেল বিজয়ী এই বাংলাদেশির চাইতে কোন অংশে কম নয়। চুয়াডাঙ্গা নামের একটা জেলা আছে বাংলাদেশে। দামূড়হুদা সে জেলারই একটা গ্রাম। এ গ্রামের কোন এক খুনের ঘটনায় ৩০ বছর করে মোট ৬০ বছরের জেল হয়েছিল ছবির মানুষটার। সাথে যোগ হয় অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে আরও ১২ বছর। মোট ৭২ বছরের জেল। খবরে প্রকাশ জামিন নিয়ে খুব শীঘ্রই বেরিয়ে আসছেন এই খুনি। যে আদলতের রায়ে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল একই আদালত তাকে জামিন দিতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ? বাংলাদেশী বিচার ব্যবস্থার সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আর যারা বুঝেও না বুঝার ভাণ করেন তাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্যেই এ লেখা। হ্যাঁ, মূল কারণ রাজনৈতিক বিবেচনা। বাংলায় অনুবাদ করলে তা হবে আওয়ামী কানেকশন। তবে এখানে একটা কিন্তু আছে। নাদুস নুদুস আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এই খুনি কিন্তু কোনোদিনও আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। কৌতূহলী পাঠক মাত্রই প্রশ্ন করবেন, তাহলে আসল কারণটা কি?

উনি আবদুস সালাম। এলাকায় বিপ্লব নামে পরিচিত। দ্ধিতীয় নামটার উলটো পিঠেই লুকিয়ে আছে একজন আবদুস সালামের আসল কাহিনী। শ্রেনী শত্রু খতমের মাধ্যমে সর্বহারাদের একনায়কতন্ত্র কায়েমে মাওবাদি তত্ত্বের নিবেদিত সৈনিক আমাদের আবদুস সালাম। বলে রাখা ভাল আবদুস সালাম বিপ্লব এলাকার ত্রাস লালটু বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। বাহিনী প্রধান নুরুজ্জামান লালটু সম্পর্কে বিপ্লবের চাচা। চাচার বাবা এলাকার কুখ্যাত সিরাজ ডাকাত বিপ্লবের দাদা। ভারতীয় চারু মজুমদার আর কম্বোডিয়ার পলপট-ইয়াং সারিদের কায়দায় সর্বহারাদের বিপ্লব বাস্তাবায়ন করতে গিয়ে একই পরিবারের অনেকে হয় নিহত অথবা জেল খাটছেন লম্বা সময় ধরে। পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি এমন একটা ভাবধারার রাজনৈতিক দল যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে স্বীকার করেনা। দলটার তাত্ত্বিক গুরু মাও সে তুং’এর দেশ চীন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিল। হয়ত এ কারণেই শ্রেণীশত্রু খতমের রাজনীতি পূর্ব বাংলা হতে বেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারেনি। অনেকের মত সালাম পরিবারের শুরুটাও ছিল জাসদের গণবাহিনীর হাত ধরে। এর পর আর পিছু ফিরতে হয়নি কথিত এই কমিউনিষ্ট বিপ্লবীর। অভিযোগ আছে আবদুস সালাম অর্ধশতাধিক মানুষ হত্যা করেছে ইটের ভাটায় পুড়িয়ে। তার নামে দায়ের হয়েছিল চুয়াডাঙ্গায় ২৮টি ও মেহেরপুরে ৩টি মামলা। স্বাক্ষী প্রমানের অভাবে ৩টা বাদে বাকি সবগুলো হতে খালাস পেয়ে যায় সে। তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেয়া মানে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, এ খেলা সহজে কেউ খেলতে যায়নি।

বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে সর্বহারা বিপ্লবের আসল উদ্দেশ্য কি তার সাথে কিছুটা হলেও পরিচয় আছে ভুক্তভোগীদের। মেইনস্ট্রিম আওয়ামী-বিএনপি রাজনীতির মার্সেনারী হিসাবে ভাড়া খাটাই তাদের আসল প্রফেশন। মূলত হত্যা, গুম, ব্ল্যাক মেইলিং, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই সহ গণতান্ত্রিক রাজনীতির ডার্টি লন্ড্রি হ্যান্ডেল করার জন্যে লালন করা হয় এসব পশুদের। আমাদের নায়ক আবদুস সালাম ওরফে বিপ্লব একই গুষ্টির সদস্য। সংসদে অ্যাবসলিউট মেজরিটি ধরে রাখতে চাইলে বিপ্লবদের কোন বিকল্প নেই, এমনটাই বুঝিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আবদুল মান্নান। বলে রাখা ভাল এই আবদুল মান্নানের ঘনিষ্ট আত্মীয় ৩১ মামলার আসামী আবদুস সালাম। সামনের সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে না-কি আওয়ামী লীগ জেল হতে বের করে আনছে তাদের ক্যাডারদের। আর এ নির্দেশনা এসেছে খোদ শান্তিকন্যা ও নোবেল পুরস্কার দাবিদার শেখ হাসিনার মুখ হতে। নিম্ন আদালতের ৫০০ টাকায় বিক্রী হওয়া বিচারকগন সহ এ কাজে শেখ হাসিনাকে সহযোগীতা করছে দেশের উচ্চ আদালত ও রাস্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট। এ পর্যন্ত বিভিন্ন জেল হতে প্রায় ২০ হাজার খুনি, ধর্ষক, চাঁদাবাজ, ব্ল্যাকমেইলার মুক্তি পেয়েছে কথিত রাজনৈতিক বিবেচনায়। আবদুস সালাম বিপ্লবকেও ৩১ মামলার অবশিষ্ট ৩টা হতে মুক্তি দিয়েছে দেশের উচ্চ আদালত।

আমার এ লেখায় ’বিপ্লবী’ আবদুস সালামের পাশে বিশ্ববরেণ্য ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে কেন টেনে এনেছি এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর কারণ বোধহয় বেশ কয়েকটা। প্রথমত, আবদুস সালামকে ৭২ বছরের জন্যে জেলে যাওয়ার কথা ছিল। অন্যদিকে প্রফেসর ইউনূসের বয়সও ৭০ বছর। চাইল সুক্ষ্ম একটা আয়রনি খুঁজে পাওয়া যাবে ৭০ ও ৭২ সংখ্যা দুটোর ভেতর। দ্বিতীয়ত, ডক্টর ইউনূসকে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হতে টেনে হিঁচড়ে নামানো হয়েছে বয়সের কারণ দেখিয়ে। সরকার ও তার সেবাদাসী মিডিয়া কথিত বুদ্ধিজীবীদের সাথে এক হয়ে দোহাই দিচ্ছে আইনী শাসনের বাধ্য বাধ্যকতার। বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে রব উঠছে আইন সবার বেলায় সমান এবং নোবেল পুরস্কার পেলেই তা হতে ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস রেহাই পেতে পারেন না। ৫০ জন জ্বলজ্যান্ত মানুষকে ইটের ভাটায় পুড়িয়ে মারার আসামী আবদুস সালামকে রক্ষার জন্যে উচ্চ আদালতের আইন কি তাহলে আলাদা হয়ে গেল? কোথায় গেল দোহাই? কোথায় গেল সবার জন্যে সমান আইনের ঐশ্বরিক দাবি? শান্তিতে নোবেল চাইলে এসব প্রশ্নের উওরও দিতে হবে শান্তিকন্যাকে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে পেটিকোটের তলায় আটকে রেখে ১৭ কোটি মানুষকে বিভ্রান্ত করে গেলেও বিদেশি নোবেল কমিটিকে করা যাবে বলে মনে হয়না। কারণ ওরা জাতির পিতা রোগে আক্রান্ত নয়।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন