নিকট অতীতে বিষয়টা নিয়ে লেখালেখি হয়ে থাকলে আমি মিস করেছি। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ঐ সব পাঠকদের কাছে যারা অবহিত আছেন আমার লেখার স্থান, কাল ও পাত্র সম্পর্কে। আর যারা আমার মত অজ্ঞ তাদের জন্যে ভাবনার বিষয় হতে পারে লেখার তথ্যগুলো। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় নেতা-নেত্রীদের স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানদের লাগামহীন দুর্নীতি নতুন কোন খবর নয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ রোগের ব্যাপ্তি পৃথিবীর প্রায় সব দেশে। যেহেতু দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশ পরপর ৪ বার বিশ্ব জয় করেছিল তাই ধরে নিতে পারি এ তালিকায়ও আমরা এগিয়ে। চোখের সামনে বদলে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী। গায়ের জোর আর গোয়েবলসীয় প্রচারণার মাধ্যমে ন্যায় অন্যায় ধামাচাপা দেয়ার দিন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। বেগম খালেদা জিয়া যতই সাফাই গান না কেন জোট সরকার পতনের অন্যতম আর্কিটেক্ট হিসাবে উনার সন্তানদের নামই এগিয়ে থাকবে। বাংলায় একটা কথা আছে, ’পাপ বাপকেও ছাড়ে না’। ক্ষমতার রাজনীতিতে শক্ত প্রতিদ্বন্ধী হয়ে টিকে থাকলে চাইলে বেগম জিয়াকেও সন্তানদের কলংক বইতে হবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা, খালেদা জিয়াকেও করবে না। দুই পরিবারের মালিকানা আগ্রাসন হতে দেশ যেদিন বেরিয়ে আসতে পারবে সেদিনই বোধহয় জানা যাবে লুটপাটের আসল কাহিনী।
আমার এ লেখা জিয়া পরিবারকে ঘিরে নয়। ক্ষমতার হানিমুনে থাকাবস্থায় ৪ দলীয় জোটকে নিয়ে প্রচুর লিখেছি, সাবধান বানী উচ্চারণ করেছি। দলীয় সমর্থকদের অনেক গাল-মন্দ শুনেছি, কিন্তু তাতে থেমে যায়নি আমার কলম। ক্ষুদ্র ওয়াচডগ টিকে আছে আগের মতই, কিন্তু টিকে নেই ক্ষমতার পরাক্রমশালী বীরদের অনেকে। যেহেতু ক্ষমতার সোনার কাঠি এখন আর জিয়া পরিবারের হাতে নেই তাই এ নিয়ে লেখালেখি হবে ইতিহাস ঘাটা ঘাটি। আমি ইতিহাস প্রেমী নই, বর্তমান প্রেমী। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রায় সবটাই ইতিহাস কেন্দ্রিক। পিতা, ঘোষক আর ’৭১ তর্ক-বিতর্ক জাতির মেরুদণ্ডে এতটা স্থায়ী আসন করে নিয়েছে যা মরণব্যাধি ক্যান্সারের সাথে তুলনা করলেও কম করা হবে। এ নিয়ে ম্যারাথন চলছে জাতীয় সংসদে, ইতিমধ্যে ঝরে গেছে শত শত প্রাণ। হয়ত অনেকের পছন্দ হবেনা আমার মন্তব্য, কিন্তু ভার্চুয়াল দুনিয়ার সূযোগ কাজে লাগিয়ে জোর গলায় বলতে পারি, পিতা আর ঘোষক এখন আমাদের ন্যাশনাল লায়াবিলিটি। মন্তব্যটার ব্যাখ্যা জানতে যারা আগ্রহী তাদের অনুরোধ করব সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর ’লাল সালু‘ উপন্যাসটা পড়ে নিতে। এই লেখক কয়েক দশক আগেই বলে গেছেন আমার মনের কথা।
একজন প্রবাসী হাফ-বাংলাদেশির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই পাঠকদের। ভদ্রলোকের নাম রিক রহিম। বাবা এনায়েতুর রহিম ও মা জয়েস। নাম হতেই ধারণা করা যায় কে দেশি আর কে বিদেশি। মা বিদেশি মানে আমেরিকান বিদেশি। রিকের জন্ম নিয়ে একটু খটকা আছে। ভদ্রলোকের মতে উনার জন্ম বাংলাদেশে। বাবা এনায়েতুর রহিমের সাথে মা জয়েসের পরিচয় প্যানসেলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে। মাতা-পিতার আবাস মার্কিন মুলুকে হলেও পুত্রের জন্ম কেন বাংলাদেশে তার কোন ব্যাখ্যা নেই। পুত্র রহিমের দাবি মতে পিতা রহিম ছিলেন শেখ মুজিবর রহমানের একান্ত আপনজন। ১৯৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে এই দম্পতির অবদানকে বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে রিক রহিমের ওয়েবসাইটে। ৭৫’এর পট পরিবর্তনের পর পারিবারিক সম্পর্ক না-কি আরও দৃ• হয় মৃত নেতার দুই কন্যার মাধ্যমে। এ পর্যন্ত সব ঠিক আছে। বিদেশ বিভূঁইয়ে শেখ পরিবারের আপনজন থাকবে এ নিয়ে ত্যানা পেঁচানোর সুযোগ নেই। কিন্তু এরপর যে তথ্যগুলো দেব তাতে কিছুটা হলেও ভাবনার খোরাক আছে।
রিক রহিম মালটি মিলিয়নার। ওয়েবসাইট হতে যতটা ধারণা পাওয়া যায় তাতে বুঝতে অসুবিধা হয়না ব্যবসার সবটাই বাংলাদেশকে ঘিরে। ভদ্রলোকের মুখেই শোনা যাক তার বাংলাদেশি কানেকশনের কিছুটা বিবরণঃ
Rick has followed in his parent's footsteps by maintaining close personal ties to Sheikh Hasina and her son. Rick has a deep personal relationship with Joy and his mother, and simply calls Sheikh Hasina "auntie." ,,,,Rick's personal successes include several billion in sales (US Dollars) through companies he founded and managed. Rick's various companies currently employ approximately 240 people and enjoy millions in annual sales.
Rick has vast experience in consulting, public speaking, business startup and development.
Rick has an extensive personal address book in his arsenal that includes captains of industry, sophisticated bankers, and even leaders of nations.
Currently, we are working or consulting on projects in Bangladesh that include electric power generation plants, telecommunications, IT, broadband, television broadcasting, satellite technology, solar energy, and highway construction.
Because of Rick's unique access to both government decision-makers and Bangladesh's elite business leaders, he is uniquely qualified to consult on most any large-scale project in Bangladesh. Moreover, he is capable of executing your business plan and ensuring its success in Bangladesh.
We can offer simple advice, guidance in banking, assistance in contracts or bids, legal referrals, and even top-tier political assistance.
ব্যবসায়িক দাঁড়িপাল্লায় দাড় করিয়ে উপরের সাফল্য গুলোকে বিচার করলে একটা সন্দেহ দানা বাধতে বাধ্য, রিক রহিম কি খাম্বা মামুনের সাক্ষাৎ প্রতিকৃতি নয়? আমেরিকায় বসে বাংলাদেশি ব্যবসা এবং তা হতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয়, আমাদের কি অতি পরিচিত নয় এ ছবি? রিক রহিমের দাবিতে কোন রাখ ঢাক নেই, সোজা সাÌটা বলে দিয়েছেন ব্যবসায়ী কানেকশনের মূল উৎস। ঘটনার এখানেই শেষ হলে বেশি কিছু বলার ছিলনা। আসুন রিক রহিমের আরও কিছু ’সাফল্যের’ দিকে নজর দেই।
২৩ শে ডিসেম্বর ২০০৫ সাল। স্থান ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফেয়ারফেক্স কাউন্টির একটা বাসা। বাসার মালিক আমাদের তারেক রিক রহিম। এখানে একত্রিত হয়েছে সমাজের উঁচুতলার ৬০ জন। উদ্দেশ্য হাই স্টেক পোকার খেলা। ৩০০ ডলারের বাই-ইন এবং ৫টা টেবিল। অফ-ডিউটির দুজন পুলিশকে ভাড়া করা হয়েছে পাহারার জন্যে। ওরা অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছে অনাহূত অতিথিদের আগ্রাসন। অনেকদিন ধরেই পুলিশের নজরে ছিল রিক রহিমের এই অবৈধ আয়োজন। শেষ রক্ষা হয়নি তার। পুলিশ হানা দেয় আড্ডায়। পাপের শহর লাস ভেগাসকেও না-কি হার মানিয়েছিল হাফ-বাংলাদেশির এই রাজকীয় আয়োজন। গ্রেফতার করা হয় শেখ পরিবারের এই অতি ঘনিষ্ঠজনকে। http://www.washingtonpost.com/wp-dyn/content/article/2005/12/22/AR2005122201846.html
দূরের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন হাফ বাংলাদেশি তার ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একটু আমোদ ফুর্তি করবে তা নিয়ে অভিযোগ করার বোধহয় বিশেষ কিছু নেই। এসব সামাল দেয়ার জন্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষই যথেষ্ট। এবার দেখুন নীচের ছবিটা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সপরিবারে মেহমান হয়েছেন মাফিয়া লিডার জনাব তারেক রিক রহিমের
http://www.businessinbangladesh.com/aboutus.cfm
উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রীর তনয় বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিকও বাস করেন এই কাউন্টিতে এবং তিনিও রিকের ঘনিষ্ট বন্ধুদের একজন। বাংলায় একটা কথা আছে, ’গু খায় সব মাছে, বদনাম হয় টাকি মাছের’। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারেক জিয়া একাই টাকি মাছ নন।
কৃতজ্ঞতায় ব্লগার সঞ্চয় রহমান।