সরকারী কুনজর পরেছে প্রথম আলো পত্রিকার উপর। মাঠ প্রায় প্রস্তুত, এবং যে কোন সময় নেমে আসতে পারে সর্বাত্মক আক্রমন। জনগণের ম্যান্ডেট প্রাপ্ত নির্বাচিত একটা সরকার যখন ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে যায় উদ্বারের জন্যে তাকে বলির পাঠা খুঁজতে হয়। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসের পর এবারের পাঠা দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান। RAB নামের সরকারী দস্যু দলের বর্বরতা নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকা ধারাবাহিক ভাবে লিখে যাচ্ছে। বিশেষ করে হতভাগা লিমনের উপর দিয়ে যা ঘটে গেল তার ঢেউ দূরের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আছড়ে পরছে এই পত্রিকার বদৌলতে। মার্কিন মিডিয়া একটার পর একটা কলাম লিখছে এর উপর, পাশাপাশি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনীতির নৈতিকতা ও তার ওপেন এয়ার মার্ডারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। RAB নিয়ে দেশে বিদেশে সরকার এখন বেকায়দায়। ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে গিয়ে সরকার প্রধান গ্রামীন ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাতা এমডি ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসের উপর দিয়ে যে কালবৈশাখী বইয়ে দিয়েছেন তা বিশ্বের কোন সরকারই (ভারতের কথা বলতে পারব না) সহজভাবে নেয়নি। আন্তদেশীয় রাজনীতি ও কূটনীতির যাবতীয় শিষ্টাচার লংঘন করে ওবামা সরকারের প্রতিনিধি মি ব্লেইক সরাসরি ধমকিয়ে গেছেন হাসিনা সরকারকে। বাদ যায়নি ফ্রান্স সহ ইউরোপের অনেক দেশ। একই কারণে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পৃথিবীর অনেক দেশে এখন Persona non grata। প্রধানমন্ত্রীর জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী দুয়ার বলতে গেলে বন্ধ। দেখা করা দূরে থাক ওবামা প্রশাসন নাম শুনতেও রাজী নয় বাংলাদেশি এই প্রধানমন্ত্রীর। মার্কিন কংগ্রেসের অনেক সদস্য চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন নেত্রী শেখ হাসিনার কর্মকান্ড নিয়ে। এমন একটা প্রেক্ষাপটে পায়ের নীচে মাটি ফিরিয়ে আনতে হাসিনা সরকারের প্রয়োজন পশ্চিমাদের আতংক ইসলামী মৌলবাদকে সামনে আনা। এই কাজটাই হাত দিয়েছেন হাসিনা সরকার। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা কাজটার শুভ উদ্বোধন করলেন সেদিন। হত দরিদ্র লিমনের পরিচয়ে সন্ত্রাসী সাইনবোর্ড লাগাতে গিয়ে টেনে আনলেন মৌলবাদ প্রসঙ্গ এবং এর সাথে জুড়ে দিলেন জনাব মতিউর রহমানের সম্পৃক্ততা। এর পরের সিনারিও কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশি কাউকে আশাকরি নতুন করে বর্ণনা করতে হবেনা। সাজানো নাটকের অংক হিসাবে দৈনিক কালের কণ্ঠ উপদেষ্টার সুরে তাল মিলিয়ে দাবি জানাচ্ছে মতিউর রহমানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে। এ আওয়াজে দৈনিক আমাদের সময় সম্পাদক জনাব নাইমুল ইসলাম খান সুর মেলালে অবাক হবনা। এরপর আসবে নেত্রকোনা অথবা কুমিল্লার কোন গ্রাম্য আদালতে সরকারী উকিলের মানহানির মামলা। পাশাপাশি মুফতি হান্নানের মুখ হতে নিশ্চিত করা হবে জনাব রহমানের সমপৃক্ততা। কোন এক রৌদ্রজ্জ্বল সকালে গ্রেফতার হবেন জনাব মতিউর রহমান এবং হরেক রকম অনিয়মের অভিযোগে কেড়ে নেয়া হবে প্রথম আলো পত্রিকার ডিক্লারেশন। গাফফার চৌধুরি, আবেদ খান আর নাইমুল ইসলাম খানদের মত গোয়েবলস নেটেওয়ার্ক লেখার উপর লেখা দিয়ে প্রথম আলো পত্রিকা ও এর মালিকদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। সরকারী ব্যর্থতার এ স্বরলিপির সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথম আলো পত্রিকা ও এর সম্পাদকরা কতটা তৈরী সরকারী আক্রমন প্রতিহত করতে।
এমন একটা সময় আসতে পারে যখন ব্লগ সহ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা ঠাই নেবে সরকারী জেলখানায়। তথ্য মাধ্যমের কতিপয় ব্যক্তি ছাড়া মনে হয়না মতিউর রহমানের ভাগ্য নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করবে। রাজনৈতিক কানেকশন না থাকলে সরকারী সন্ত্রাস একজন সাধারণ নাগরিককে কোন গলিতে নিয়ে যায় তার প্রমান অবস্থাসম্পন্ন ডক্টর মো ইউনূস ও গরীব দিনমজুর লিমন। আমরা যারা প্রবাসী প্রতিবারের মত আবারও হজম করব সরকারী স্পন্সরে প্রচারিত মিথ্যাচার। খারাপ সময় এগিয়ে আসছে প্রথম আলোর জন্যে সন্দেহ নেই। ক্ষমতার দাপট ও রাজনৈতিক দস্যুতা বাংলাদেশের জন্যে নতুন কিছু নয়, এ অপরাধ শেখ মুজিবের আমল হতেই চলে আসছে। একটা জিনিস ভাবতে গেলে অবাক হই, আমাদের সংবাদ মাধ্যম কি কোনই শিক্ষা নেয় না ক্ষমতাসীনদের দস্যুবৃত্তি হতে? রাজনৈতিক লুটপাটের জরায়ুতে জন্ম নিয়েও কি একসময় স্বাধীনভাবে হাটা যায়না? শুনেছি বিপদ মানুষকে পথ চেনায়, আশাকরি প্রথম আলোও পথ চিনবে এবং সে পথ হবে সকালের আলোর মতই আলোকিত। হয়ত রাস্তা উন্মুক্ত থাকবেনা মত প্রকাশের, তাই আগ বাড়িয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে রাখছি প্রথম আলো পত্রিকার সাথে। মিথ্যাচারের জয় হয়না, চিরন্তন এ সত্যটা মাথায় রেখে এগিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করব প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে।