বিচারপতি হাসান, বিচারপতি আজিজ, ইয়েস উদ্দিন আর লাশের উপর ব্রাজিলিয়ান সাম্বা নাচের জরায়ুতে জন্ম নিয়েছিল সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। হরতালের পর হরতাল, দানবীয় ভাংচুর, সীমাহীন নৈরাজ্য আর লাশের মিছিলে পথ পাকা করে ক্ষমতা নামক সোনার হরিনের দেখা পেয়েছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু হায়, ক্ষমতার স্বাদ তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর মুখে আজ একি কথা? উনি বলছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণেই না-কি ১/১১ এসেছিল। বাক্যটা তিনি অসম্পূর্ণ রেখেছেন হয়ত ইচ্ছে করেই। কিন্তু আমরা যারা শেখ আর রহমান পরিবারের নেশায় নেশাগ্রস্ত নই তাদের ভাল করেই জানা আছে এই ১/১১’র কারণেই আওয়ামী লীগ আজ ক্ষমতায়। ’এই সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল, এদের সব কাজের বৈধতা দেব আমরা’ - কথাগুলো কি অন্য গ্রহের এলিয়ন শেখ হাসিনার কথা ছিল? হয়ত চাটুকার আর মোসাহেবদের বলয় ভেদ করে খবরটা পৌছে গেছে প্রধানমন্ত্রীর অন্দরমহলে, নৌকায় চড়ে নির্বাচনী বৈতরনী পাড়ি দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা এ যাত্রায়। একই ম্যাসেজ বেগম জিয়াও হাতে পেয়েছিলেন এবং যথাযত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন ক্ষমতার জোরে আইন পাশ করিয়ে পছন্দের বিচারপতিকে ক্ষমতায় বসালেই নিশ্চিত হয়ে যাবে তারেক জিয়ার রাজত্ব। কিন্তু হয়নি, কারণ আইনের জন্যে মানুষ নয়, মানুষের জন্যে আইন, আর ক্ষমতাও পারিবারিক সম্পত্তি নয়। এ সহজ সত্যগুলো রাজনীতিবিদেরা কেন জানি ক্ষমতারোহনের প্রথম দিনেই ভুলে যান। সরকারী কোষাগারের চাবিটা হাতে পেয়েই ভাবতে শুরু করেন এ আমার, এ আমার সন্তানের, এ সন্তানের সন্তানের। হাসান আর খয়রুলরা এ দেশেরই সন্তান। বিচারপতি প্রফেশন হলেও এদের আসল পরিচয় পারিবারিক দাস হিসাবে। প্রভুর আইনী স্বার্থ দেখভাল করার জন্যেই এদের ক্ষমতায় বসানো হয়। খায়রুল সে দাস বংশেরই একজন। কলমের এক খোচায় ১৭ কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেয়ার কোন অধিকার নেই এসব গোলামদের।
আগত দিন নিয়ে উদ্বেগ শুরু হয়েছে সুশিল সমাজে। এ নিয়ে সেমিনারের হিড়িক পরে গেছে ইতিমধ্যে। ব্যবসায়ীরা বলছে তত্ববাধায়ক সরকার হলে তাদের অর্ধেক দেশ ছেড়ে পালাবে। রাজনীতিবিদেরা মুখ খুলে না বললেও আমরা বুঝতে পারি নাজিম উদ্দিন রোডের স্মৃতি তাড়া করছে উনাদের। ক্ষমতায়নের মোক্ষম অস্ত্র শেখ হাসিনার হরতাল এখন বেগম জিয়ার হাতে। এ কেবল শুরু। বেগম জিয়া আসলেই যদি ক্ষমতা ফিরে পেতে চান উনাকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। সে পথে থাকবে হরতাল ম্যারাথন, ভাংচুরের মহাপ্রলয়, জীবন্ত পুড়িয়ে মারার দানবীয় চিত্র আর লগি-বৈঠার তান্ডব। এ গুলোই আমাদের রাজনীতি। এ সব নিয়ে উদ্বেগ করার কোন কারণ দেখি না। শেখ হাসিনার বেলায় যা বৈধ তা অন্য কারও বেলায় বৈধ হতে বাধ্য। বেগম জিয়া এই অন্যদেরই একজন। আসুন উপভোগ করতে শিখি রাজনীতি নামের এই পশুত্ব। কেবল হাসান বা খয়রুলই নয়, আমরা বাকিরাও রাজনীতির কেনা গোলাম, শেখ আর রহমান পরিবারের কুন্তাকিন্তে।