বড় হচ্ছে ভার্চুয়াল পৃথিবী। উন্নত বিশ্বের কথা না হয় বাদই দিলাম, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দেশ বাংলাদেশেও এর প্রসার বাড়ছে হু হু করে। সে দিন বোধহয় খুব একটা দুরে নয় যেদিন কোটি টাকা ব্যয়ে পল্টন ময়দানে বি-শা-ল জনসভায় মহান নেতা-নেত্রীদের রাজনৈতিক বয়ান মাঠে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নেবে। পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার, বিরামহীন প্রচারণা আর একবেলা উদরপূর্তির ফাঁদে ফেলে রাজপথে লাখ মানুষের ঢল নামানোর সংস্কৃতিতে কিছুটা হলেও ভাটা নামবে যখন বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে হানা দেবে ভার্চুয়াল উৎপাত। অনেক দিন আগের একটা ঘটনা। তৃতীয় একটা ভাষায় লেখাপড়া করার কারণে ইংরেজিটা ভাল করে রপ্ত করা হয়নি। চাকরিতে ঢুকে এর কুফল উপলদ্ধি করতে খুব একটা সময় লাগেনি। আদাজল খেয়ে চেষ্টা করছি ইংরেজি শেখার। এক পর্যায়ে নিজের জ্ঞান পরীক্ষা করার জন্যে ঢাকার একটা ইংরেজী সাপ্তাহিকে দু’চার লাইন লেখার চেষ্টা করছি। লিখি আর নিজের লেখা ছাপানো অক্ষরে দেখে নিজেই মুগ্ধ হই। এসব করতে গিয়ে এক ফাঁকে ঝামেলায় জড়িয়ে যাই অনেকটা অনিচ্ছায়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নামের একটা সন্ত্রাসী গ্রুপের (অন্তত আমার দৃষ্টিতে) প্রধান জেনারেল সি আর দত্তের একটা লেখার উপর মন্তব্য করতে গিয়ে গ্যাঁড়াকলে আটকে যাই। লেখার শেষে নিজের নাম ও আসল ঠিকানা থাকার কারণে কোন এক কাক ডাকা ভোরে হাজির হয় গুরুর দুই চামুণ্ডা। দু মাসের জন্যে নিখোঁজ হয়ে যাই প্রিয় শহর হতে। আর ইংরেজি গবেষণায় টানতে হয় অকাল ইতি। কত দ্রুত বদলে গেছে সে দুনিয়া! দেশ হতে হাজার হাজার মাইল দুরে পৃথিবীর কোন এক অখ্যাত কোনায় বসে শুধু সি আর দত্ত কেন, তার তাবৎ চামুন্ডাদের পশ্চাৎদেশে তৈলাক্ত বাশ ঢোকালেও অধমের টিকিটা ছুঁতে পারবেনা হারাধনের দল। এটাই আজকের বাস্তবতা। পরিসংখ্যান বলে, আমরা যারা ব্লগে লেখালেখি করি পৃথিবীর প্রায় ৫০-৬০টা দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা প্রায় নিয়মিত পড়তে আসেন এ আড্ডায়। এর জন্যে প্রয়োজন হয়না ‘ভাইসব, আসছে শুক্রবার বিকাল ৪ ঘটিকায় ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে অমুক দলের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে বি-শা-ল এক জনসভা’ এ জাতীয় প্রচারণা। মাসে ২০ ডলার খরচ করে ৫০টা দেশের বাংলাদেশিকে বিনা নোটিশে একত্র করে দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করার এই অভাবনীয় সুযোগ কি পাঁচটা বছর আগে কল্পনা করা যেত? দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান নিয়ে রাজনীতিবিদ গন যতই তাড়াহুড়া করবেন নিজেদের গলায় ফাঁস লাগানোর ব্যবস্থা ততই বোধহয় দ্রুত করবেন। হুমকি, ধামকি আর ইশারা দিয়ে কিবোর্ড হতে হাত দুরে রাখার প্রেসক্রিপশন আবিস্কার করতে দেশিয় নেতাদের আরও হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে হয়ত। ততদিনে ধ্বস নামতে পারে পারিবারিক রাজত্বে। আর চামুণ্ডা পাঠিয়ে সুদূর নিউ মেক্সিকোতে কাউকে শায়েস্তা করে ক্ষমতা আকড়ে থাকার সাংস্কৃতি হবে হঠাৎ দেখা দুঃস্বপ্নের মত। বিদ্যুৎ প্রবাহে দৈন্যতা কাটিয়ে উঠা গেলে বাংলাদেশের প্রতি ঘর হবে পল্টন মাঠ, যা মিনিটে মিনিটে কেঁপে উঠবে গোলার আঘাতে। অপেক্ষায় রইলাম সে দিনের।
আমার এ লেখাটা নির্দ্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে নয়, বরং 'জনগুত্বহীন' একাধিক বিষয়ের উপর। পুরানো কিছু লেখা ঘাটতে গিয়ে আইডিয়াটা মাথায় এল। ভাবলাম শেয়ার করি ৫০টা দেশের ’পল্টন ময়দানে’ জমায়েত পাঠকদের সাথে।
এক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুরের সাথে ঘটে যাওয়া ট্রাজেডি নিয়ে দেশে জুড়ে শোকের মাতম চলছে। শোক ও সহমর্মিতা প্রকাশের ভাষাটা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় অন্য যে কোন মাধ্যমের চাইতে জোড়ালো ও শক্তিশালী। এর কারণও বোধহয় প্রকাশের স্বাধীনতা ও এর সহজলভ্যতা। ভদ্রমহিলার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা যে কোন মানদণ্ডে বর্বর, নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম। কোন কারণ দেখিয়েই এ ধরণের পশুত্বের পক্ষে সাফাই গাওয়ার উপায় নেই। বিয়ে মানেই দাসত্বের শৃঙ্খল নয় যা দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলা যাবে। সংসারে বিশ্বস্ততার অভাব থাকলে তা মেটানোর হাজারটা রাস্তা আছে, নখ দিয়ে চোখ খুবলে খাওয়া তার মধ্যে পরে না। ডমেসটিক ভায়োলেন্স একটা সমস্যা। শুধু আমাদের দেশে নয়, এর ব্যাপ্তি পৃথিবীর দেশে দেশে। তবে অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের বোধহয় কিছুটা মৌলিক পার্থক্য আছে। এখানে নির্যাতিতের পরিচয়কে ঘিরে প্রসারিত হয় এর শোক ও সহমর্মিতার ভাষা। ব্লগ দুনিয়ায় এ নিয়ে যারা লেখালেখি করেছেন তাদের ৫০ ভাগও যদি আন্তরিক হয়ে থাকেন বলতে হবে সমস্যা হতে উত্তরণের সঠিক পথেই এগোচ্ছি আমরা। বাস্তবতা কি আসলেই তাই? এই আমরাই কি উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে স্ত্রী বাছাইয়ের নামে সওদা করতে নামিনা? স্বপ্ন আর লোভ লালসায় বাধা আসলে এই আমাদের অনেকেই কি সাঈদ হয়ে যাই না? রুমানাদের সংখ্যা বাংলাদেশে আসলে কত? এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান চাইলেও পাওয়া যাবেনা, কারণ এ নিয়ে আমরা কেউ মাথা ঘামাই না। লেখা দিয়ে ব্লগ দুনিয়া মাতালে এ নিয়ে হূদয় নিংড়ানো মাতম করা যাবে, কবিতা লেখা যাবে, সেমিনার করে প্রতিবাদ করা যাবে উৎসব কায়দায়। কিন্তু ততক্ষনে বাংলাদেশের পথে প্রান্তে জন্ম নেবে নতুন এক রুমানা, যার পরিণতি নিয়ে কথা বলার কেউ থাকবেনা। অনেকটা কলেরার মত প্রতিদিন ঘটছে এসব ঘটনা। http://www.thedailysangbad.com/?view=details&type=gold&data=Software&pub_no=754&menu_id=13&news_type_id=1&val=70446 আমেনা মোমেনাদের ধর্ষণ করে পাট ক্ষেত আর ধান ক্ষেতে বেওয়ারিশ লাশ বানিয়ে কুকুর বেড়ালের খাদ্য বানানো হচ্ছে। এ নিয়ে কেউ কি সেমিনার করেছে? রুমান সমস্যা আমাদের জাতীয় সমস্যার অবিচ্ছেদ্য অংশ, একক এই ঘটনা নিয়ে আহাজারি করা হবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। http://www.ittefaq2.com/newspaper/2011/06/25/news0223.php জেন্ডার ফ্যাক্টর এখানে মূখ্য নয়, মূখ্য এর বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা আর সামাজিক দায়বদ্ধতা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না একজন খালেদা জিয়াকেও সংসার বাঁচানোর তাগাদায় দ্বারস্থ হতে হয়েছিল কারও কাছে। আর একজন সুধা মিয়াকে কেন বঙ্গভবনের সামনে পাগল অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাও আমাদের অজনা নয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের চালকের আসনে এখন মহিলাদের জয়জয়কার। কি করছেন উনারা আমেনা, মোমেনা রা রুমানাদের জন্যে?
দুই।
আরাফাত রহমান ককোর ৬ বছরের জেল হয়ে গেল দুর্নীতি মামলায়। ভাঙ্গা সুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জির এবরা-ক্যাডাবরা দেখিয়ে কত দ্রুত ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় জিয়া পরিবারের দুই সন্তান তার ঐতিহাসিক দলিল। ১৯৭১ সাল হতে ঢাকার একটা বাসায় ভাড়া থাকতাম আমরা। বাড়িওয়ালা ছিলেন সিলেটি এবং মনে প্রাণে পাকিস্তানি। ৭২ সালে ২১২ টাকার মাসিক ভাড়া কমিয়ে ১৮০ টাকায় নিয়ে আসেন বিশেষ একটা উপকারের কারণে। মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ বাড়িওয়ালাকে হত্যা করে তার সম্পদ দখল করার পাঁয়তারা করছিল। সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন আমাদের এক বড় ভাই। কিসের উপর দফারফা হয়েছিল জানা নেই, কিন্তু সন্দেহ নেই বড় ধরণের লেনদেন জড়িত ছিল এর সাথে। অনেকটা পারিবারিক সদস্যের মত বাস করতে থাকি একই কম্পাউন্ডে। নির্ঝঞ্ঝাট ভাড়াটিয়া হিসাবে ৩১ বছর বাস করার পর বাড়িওয়ালা ৭ দিনের নোটিশ দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বললেন হঠাৎ করে। অনুসন্ধান করে জানা গেল খরিদ সূত্রে এই বাড়ির মালিক এখন জিয়া পরিবার। সাড়ে ৫ কোটি টাকায় হাত বদল হয়ে গেছে ১০ কোটি টাকার সম্পদ। ককো লঞ্চ আর ডান্ডি ডাইং ছিল ছেড়া গেঞ্জি হতে বেরিয়ে আসা জিয়া পরিবারের প্রথম 'গৌরব'। এ সম্পদ সুদে আসলে কতটা বেড়েছে তার নমুনা চাইলে আমাদের হাত দিতে হবে এতিম সমিতি বানিয়ে সৌদি আরব হতে কয়েক কোটি হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায়। শোনা যায় পারিবারিক ডিনারে ককো জিয়া প্রায়ই নাকি মার সাথে রাগ করে থালাবাটি ভাঙ্গতেন। তাও আবার ব্যবসায়িক কারণে। রাজনীতির ধারে কাছে না এসে অনেকটা প্রফেশনালদের মত নীরবে নিভৃতে কামিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এমন এক ব্যক্তির সাজা হওয়ায় আমার মত অনেকেরই আনন্দিত হওয়ার কথা। কিন্তু বিশেষ কতগুলো কারণে আনন্দ দুরে থাক গোটা বিচার প্রক্রিয়াটাকে কেন জানি মেনে নিতে পারছিনা। খবরে প্রকাশ, মহাজোট আমলে ’রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় প্রত্যাহার কৃত মামলার সংখ্যা ইতিমধ্যে জোট সরকারের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। প্রকাশ্য রাজপথে খুন করে বিজয় মিছিল করা দন্ডিত আসামীদের মুক্তি দিয়ে গণ সম্বর্ধনা দেয়া হচ্ছে কেবল রাজনৈতিক পরিচয়ে। এবং এই অপকর্মে দেশের বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি যোগ করা হচ্ছে রাস্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রেসিডেন্টকে। ককো জিয়ার সাজা এ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক বিরোধী দল শায়েস্তা করার ধারাবাহিকতা হিসাবেই প্রতীয়মান মনে হচ্ছে। সুরঞ্জিত বাবুর সেই বিখ্যাত উক্তিটাই বোধহয় আমার বক্তব্যের সারমর্ম হতে পারে, ‘বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে শেখ হাসিনায় ধরলে ছাড়ে না’। দেশের বিচার ব্যবস্থা যখন ক্ষমতাসীনদের মলমূত্র পরিস্কার করার হাতিয়ার হয়ে যায় তাদের দেয়া রায়ের প্রতি সন্মান দেখানোর কোন গ্রাউন্ড থাকে না। একই কথা বলা যায় আরাফাত রহমান ককোর শাস্তির ব্যাপারে।
তিন।
তালেবান শাসনামলে আফগান স্ত্রীরা স্বামীর পেছনে বোরকা পরে মাথা নীচু করে হাঁটত। এরপর দেশটায় এল মার্কিনিরা। কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করল। রয়টার্সের এক সাংবাদিক তালেবানবিহীন আফগানিস্তানে গিয়ে দেখল, স্ত্রীরা এখন স্বামীর সামনে হাঁটে। ’এটা কি মৌলবাদ উৎখাতের সুফল? আফগান পুরুষকে প্রশ্ন করতে উত্তর দিল, ‘ল্যান্ড মাইন’। জানতে ইচ্ছা করে ১/১১ উত্তর করে কেমন আছেন আমাদের রাজনীতিবিদদের স্ত্রীসকল? ১/১১’র আউলা ঝাউলা বাউলা সরকার আমলের বদৌলতে আমরা জানতে পেরেছি স্বামীদের তুলনায় কতটা ধনী এই মহিলা সমাজ। মির্জা আব্বাসের তুলনায় উনার স্ত্রী ১০ গুন বেশি ধনী, সম্পত্তির পরিমান ২০ কোটি। নুরুল ইসলাম বাবুলের স্ত্রী ৪৫ কোটি। দুদকে দেয়া হিসাব মতে আমানুল্লাহ আমানের স্ত্রী, লোটাস কামালের স্ত্রী, নাজমুল হুদার স্ত্রী, মহিউদ্দিন খান আলমগীরের স্ত্রী সহ প্রায় প্রতিটা রাজনীতিবিদের স্ত্রীই কোটিপতির কোটিপতি। আমানুল্লাহ আমানের স্ত্রীকে লাশ বহনকারী খাটিয়ে দিয়ে আদালতে হাজির করা হত, নাজমুল হুদার স্ত্রীকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে। সাবার সাথেই থাকত অক্সিজেন সিলিন্ডার আর একজন ডাক্তার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হত আদালতে কেবল বিচারক নন, মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে খোদ আজরাইল উপস্থিত থাকতেন। কেমন আছেন উনারা? কেমন চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা? আজরাইলের সাথে কি দফারফা হয়ে গেছে এ যাত্রায়? স্বামীদের চুরি চামারির ল্যান্ড মাইন হয়ে বেচে থাকতে কেমন লাগে এই মহিয়সীদের, জানতে বড্ড ইচ্ছা করে।
চার।
শেখ আর জিয়া পরিবারের নাম শুনলেই যাদের আবেগ থরথরানিতে কাপড় নষ্ট হয়ে যায় তাদের জন্যে একটা খারাপ খবর, জাতিকে এই দুই পারিবারের ক্যান্সার হতে মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে ফেইসবুকে যাত্রা শুরু করেছে নতুন একটা গ্রুপ http://www.facebook.com/home.php?sk=group_221941637839794 । চাইলে আপনিও যোগ দিতে পারেন।