প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারকে নিয়ে লেখালেখির মাত্রাটা বোধহয় একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে, অন্তত আমার তরফ হতে। বিএনপি আমলে একই সুরে ব্লগিং করেছি এমন একজন আওয়ামী সমর্থক ব্লগার একটু রাগতস্বরেই জানালেন যে সুরে লিখছি তাতে শেখ হাসিনার শারীরিক বিদায় আমার কাম্য কিনা প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। সাথে এও মনে করিয়ে দিলেন শেখ ও আওয়ামী লীগের বিদায় মানে ক্ষমতার দিগন্তরেখায় তারেক ককো সহ আলীবাবা ৪০ চোরের বাকি গংদের পুনরুত্থান মাত্র। এই গুস্টির অপকর্মের উপর কম করে হলেও শতাধিক ব্লগ লিখেছি আর প্রতিপক্ষের সাথে বিরামহীন লড়াই করেছি। এ সব লড়াই সব সময় ভদ্রতার সীমারেখায় সীমাবদ্ধ ছিল তা বলা যাবে না। না, রাজনীতিবিদদের শারীরিক বিদায় আমার লেখার থিম নয়। শুধু আমার কেন, কারও লেখায়ই এমনটা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। একজন হাসিনার ট্রাজিক বিদায় তাকে শুধু ইতিহাসেই অমর করে রাখবে না, বরং জন্মদিবস আর মৃত্যু দিবসের যাঁতাকলে নির্যাতিত করবে জাতির ক্যালেন্ডার। রাজনৈতিক অপমৃত্যু একজন অপদার্থদের পদার্থ বানায়, খুনিকে শহীদ বানায়। ৪০ বছর ধরে যথেষ্ট দেখেছি এ খেলা। এ মুহূর্তে ইতিহাসে নতুন কোন হিরো সংযোজন হবে এর প্রতি আমার মত ম্যাংগো পিপলদের অনীহা আর অশ্রদ্ধা বাড়ানোর নতুন অধ্যায়। রাজনৈতিক পতন দেখতে চাই এসব অপদার্থ শাসকদের। বাবা নামের ঘুড়িতে চড়িয়ে ১৭ কোটি মানুসকে কতদূর নেয়া যায় তার শেষ না দেখার আগে শেখ হাসিনার বিদায় হবে বেদনাদায়ক। হাসিনা সাগার শেষটা দেখা আমার জন্যে ফরজ। ওজু আর গা গতর পরিস্কার করে অপেক্ষায় থাকব ইতিহাসের এ অধ্যায়কে বরন করার জন্যে।
সংবিধান। এ যেন হেরা পর্বতের বাঁকে নাজিল হওয়া বাই দ্যা শেখ, অব দ্যা শেখ এন্ড ফর দ্যা শেখ নামের আমলনামা। অবস্থাদৃষ্টে মন হচ্ছে ঈশ্বরের ম্যাসেঞ্জার হয়ে শেখ হাসিনা জাতিকে পৌছে দিচ্ছেন তার ভাগ্যলিপি। মানব আইন নয়, এ যেন সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে, শাসন ব্যবস্থায় যখনই শেখ নাম অনুপস্থিত থাকবে তা হবে অন্যায়, অবৈধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ যা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত গড়াতে পারে। খায়রুল আর সুরঞ্জিত বাবুদের কাধে বন্দুক রেখে এমন একটা উচ্চতাই পদানত করেছেন নেত্রী আর সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। খবরে প্রকাশ, সংবিধান সংশোধন চূড়ান্ত হওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে আছেন প্রধানমন্ত্রী। মাঝে মধ্যে নাকি কবিতা আওড়াচ্ছেন আর রবীন্দ্র সংগীত চর্চার চেষ্টা করছেন। একই মেজাজে আছেন সুরঞ্জিত বাবু আর হানিফ-আশারাফ নামের পাইক, পেয়াদা, আন্দাজ-বরকান্দাজের দল। ভাবটা এমন আগামী ১০০ বছরের জন্যে নিশ্চিত করা গেছে রাজনৈতিক ক্ষমতা! প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে সংশোধনের মাধ্যমে, যা কেউ কোনদিন কেড়ে নিতে পারবে না। শুনতে অবশ্যই ভাল লাগে। আমিও জনগণ, সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর দাবি মতে আমার ক্ষমতা আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে একটা জিনিষ পরিস্কার নয়, কি এমন ক্ষমতা যা কেড়ে নিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে? মলমূত্র ত্যাগের জরুরি তাগাদায় একবার চিরুনী অভিযান চালাতে হয়েছিল প্রিয় ঢাকা শহরে। কোটি মানুষের এই মেগা শহরে একটাও সুস্থ মুতখানা পাওয়া যায়নি যেখানে বসে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সুবিচার করা যেত। অন্যের কাছে ব্যাপারটা কেমন জানিনা, আমার কাছে ক্ষমতা মানেই সুস্থভাবে মলমূত্র ত্যাগ করার ক্ষমতা। সংবিধানে ঈশ্বর না খোদা, মুজিব না জিয়া, এর চাইতেও জরুরি একটা গন্ধহীন মুতখানার নিশ্চয়তা। যতদিন এ ক্ষমতা নিশ্চিত না করা হবে আমার চোখে সংবিধান একদলা কাগজ হিসাবেই বিবেচিত হবে, যা আপদকালীন টয়লেট পেপার হিসাবে ব্যবহার করতে সামান্যতম দ্বিধা করব না। গেল আড়াই বছরে শেখ হাসিনা কি ফিরিয়ে দিয়েছেন সে অধিকার?