এত দ্রুত ঘটছে ঘটনা লেখালেখির সাথে তাল মেলানো মুস্কিল হয়ে যাচ্ছে। কদিন আগের একটা খবরে পড়লাম স্কুলের এক শিক্ষক তৃতীয় শ্রেনীর এক ছাত্রীকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বানিয়ে বহাল তবিয়তে চাকরী করছে। গালাগালি করে একটা লেখাও দিয়েছিলাম এর উপর। ঢালাও ভাবে গুষ্টি উদ্ধার করে গোটা শিক্ষক সমাজকে ঐ ধর্ষকের সাথে এক কাতারে দাড় করানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু নিজের ভুলটা বুঝতে বেশিক্ষণ লাগেনি। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষক নিয়োগের ক্রাইটেরিয়া কি, তার উপর একটা আর্টিকেল পড়ে কিছুটা হলেও হাল্কা লাগছে। আমার নিজেরও কজন শিক্ষক ছিলেন যাদের হাত ধরে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে নিজকে আজ সুস্থ মানুষ হিসাবে দাবি করতে পারছি। লেখাটা মুছে দিয়েছি ভেতরের তাগাদা হতে। এ জন্যে কাউকে অনুরোধ করতে হয়নি। শিক্ষক পর্ব হজম হতে না হতে সূত্রপাত হয়ে গেল একাধিক পর্ব। RAB কর্তৃক উত্তরা হত্যাকান্ড দিয়েই শুরু করি আজকের লেখা।
ঘটনায় প্রকাশ, কথিত এলিট ফোর্স RAB'এর সাথে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে ৫ জন সন্দেহজনক ডাকাত ও ছিনতাইকারী। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় এ নিয়ে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে প্রতিবাদ করলেও বেশিরভাগ মানুষের কলম হতে বেরিয়ে এসেছে প্রশংসা বানী। RAB'এর সাথে গোলাগুলি নাটক এর আগেও বহুবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এনকাউন্টারের উপর সরকারী ভাষ্য মানুষ দুরে থাক দেশের কুকুর বিড়ালও এখন বিশ্বাস করেনা। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম সরকারী ভাষ্য। ধরে নিলাম ওরা আসলেই ছিনতাইকারী ও ডাকাত। জনমনে শান্তি ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্যে এদের শাস্তি জরুরী। সন্দেহই যদি মানুষ খুন করার ভিত্তি হয় থাকে তাহলে প্রশ্ন জাগে ১/১১ আমলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নামে যে সব মামলা হয়েছিল সে গুলোর ভিত্তিও ছিল সন্দেহ। কাগজে কলমে প্রকাশ না করলেও আমাদের সবার জানা আছে দেশের মেগা চোর, ছিনতাইকারী আর লুটেরাদের নাম। উত্তরা সহ বাংলাদেশের অলিগলিতে রাজত্ব করা ডাকাত আর ছিনতাইকারীদের জন্মদাতা আর তাদের গডফাদারদের পরিচয়ও আমাদের অজানা নয়।
সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানুষ খুন করা যদি জরুরী হয় তাহলে হাসিনা, খালেদা আর তাদের দোসরদের খুন করা কেন জরুরী হবেনা? দেশের আসল চাঁদাবাজ তো এরাই। শেখ হাসিনার চাঁদাবাজির মামলায় ব্যাংকের চেক পর্যন্ত উপস্থাপন করা হয়েছিল। খালেদা জিয়া এতিম ফান্ডের নামে সৌদি আরব হতে আড়াই কোটি চাঁদা এনে আলি গলি ঘুরিয়ে পৌছে দিয়েছিলেন নিজের দুই এতিম সন্তানের পকেটে। এগুলোর সবটাই কি মিথ্যা ছিল? তর্কের খাতিরে আবারও ধরে নিলাম সবই ছিল মিথ্যা। হতে পারে নিজদের মিশন চরিতার্থ করার লক্ষ্যে ১/১১ সরকার সন্দেহের বীজ বুনেছিল জাতির মগজে। কত টাকা ছিনতাই আর চাঁদাবাজির সন্দেহ ছিল উত্তরার আসামীদের উপর? এক লাখ? দশ লাখ? এক কোটি? খালেদা জিয়ার সন্তানদ্বয় আজ কত টাকার মালিক? আমেরিকা আর কানাডায় বাস করে শেখ হাসিনার সন্তানরা কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাষ্ট্রের পকেট হতে? খুব কি কম হবে উত্তরার ছিচকে চোর আর ছিনতাইকারীদের তুলনায়? বানিজ্য মন্ত্রী ফারুখ খানের বিরুদ্ধে আভিযোগ আছে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের। যোগাযোগ মন্ত্রীর ভান্ডারে জমা আছে সরকারী ফান্ডের হাজার কোটি টাকা। কোত্থেকে এলো বিত্ত বৈভবের এই পাহাড়? প্রতিদিন খবরের কাগজে যেসব রাজনৈতিক হাতি-ঘোড়ার ছবি ছাপা হয় তাদের সবাই কি জনশান্তি আর সামাজিক নিরাপত্তার জন্যে হুমকি নয়? খুনই যদি সমস্যার একমাত্র সমাধান তাহলে কেন খুন করা হবেনা তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর হাসিনাকে। উত্তরার ডাকাতদের মত কেন মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে মাটিতে লোটাতে হবেনা তারেক, ককো আর জয় ওয়াজেদদের? নাজমুল হুদা, ফারুক খানদেরই বা ছাড়া হবে কেন? এদের অপকর্ম আর ব্যর্থতার জরায়ুতেই কি জন্ম নেয় না খুচরা ছিনতাইকারীর দল? নাকি এরা ভিভিআইপি চাঁদাবাজ?
আগষ্ট মাসকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে শোকের মাস হিসাবে। পাশাপাশি বাঙ্গালিকে বলা হচ্ছে কাঁদতে। ক্ষমতার মধু সরোবরে যারা বাস করেন তাদের হয়ত জানা নেই, দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্যে ১২টা মাসই এখন শোকের মাস। বিশেষ একট দিন নয়, বছরের ৩৬৫টা দিনই এখন কান্নার দিন। প্রতিদিন কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও খুন হচ্ছে। যারা খুন হচ্ছে তারাও কারও না কারও পিতা, মাতা, সন্তান, ভাই অথবা বোন। ।