৪২ বছরের শাসনও সন্তুষ্ট করতে পারেনি তাকে। চেয়েছিলেন আজীবন টিকে থাকতে। শুরুটা ১৯৬৯ সালে। দেশের রাজাকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল নিয়ে দেশবাসীকে শুনিয়েছিলেন স্বপ্নের কথা। একদিকে ইসলামী সমাজতন্ত্র, প্যান-আরব জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে জেহাদ, মুসলিম দুনিয়ার উপেক্ষিত ও বঞ্চিত মানুষদের মন জয় করায় বারুদ হিসাবে কাজ করেছিল এসব বিপ্লবী কথাবার্তা। কিন্তু বারুদ যে একদিন বুমেরাং হয়ে নিজ ঘরে ফিরে আসবে তা বুঝতে তাকে ৪২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। হ্যাঁ, আমি আরব বিশ্বের স্বঘোষিত মুক্তিদূত মুয়াম্মার গাদ্দাফির কথা বলছি। আজ এ মুহূর্তে হতে কেবল মুয়ামার গাদ্দাফি বললেই যথেষ্ট হবে, প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি বলার প্রয়োজন হবেনা। ৪২ বছরের স্বৈরশাসন আজ হতে কেবল ইতিহাস। পতন হয়েছে এই জল্লাদের। ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মত তিনিও লুকিয়েছেন। যে ছেলেদের তর্জনীতে গতকালও লিবিয়ার আকাশ বাতাস আন্দোলিত হত আজ তারা বন্দী। শুরুটা তিউনেশিয়ার বেন আলী দিয়ে। মিশরের হোসনি মোবারকের হয়ে এবার লিবিয়ার গাদ্দাফি। পাইপ লাইনে আছেন সিরিয়ার বাশার আল আসাদ গং।
হত্যা, ষড়যন্ত্র আর গণতন্ত্র হোক, ক্ষমতার সীমাহীন স্বাদ একজন স্বাভাবিক মানুষকে কতটা অমানুষে পরিনত করতে পারে তার উদাহরণ আরব বিশ্বের দেশে দেশে। নিজে ৪২ বছর, সন্তানদের জন্যে আরও ৮৪ বছরের শাসন নিশ্চিত করার সব রাস্তা পাকা করেছিলেন লিবিয়ান নে্তা। কিন্তু সে পাকা রাস্তায় এখন জনতার পদভারে প্রকম্পিত। হোক তা ট্রাইবাল লড়াই, গাদ্দাফির মত একজন লৌহমানবের পতন বিশ্বের বাকি স্বৈরশাসকদের জন্যে স্টার্ন ম্যাসেজ হিসাবে বিবেচিত হবে।
একটা দেশ বিশেষ কোন পরিবারের সম্পদ হতে পারেনা, লিবিয়ায় গাদ্দাফির সর্বশেষ পরিণতি নতুন করে তা প্রমান করে গেল।
এ পর্যন্ত গাদ্দফির ৩ পুত্রকে গ্রেফতার করেছে বিদ্রোহীরা।