একই সময়ে একই প্যারালালে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়ে গেল ঢাকার মাঠে। একদিকে কর্মমুখর সরকারী মাঠ, অন্যদিকে আনন্দমুখর খেলার মাঠ। বিপরীতমুখী দুই মাঠের নায়কও ছিলেন ভিন্নমুখী দুই বিদেশি। সরকারী মাঠের মনমোহন সিং আর খেলার মাঠের লাইওনাল মেসি। উভয়ই আসলেন, দেখলেন এবং জয় করে গেলেন। নিরামিষভোজি মনমোহন বাবুকে ইলিশ দিয়ে বরণ করা হলেও মেসি বাহিনীর আপ্যায়নে কোন মাছ ব্যবহার করা হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা একদল প্রফেশনাল ফুটবলার বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল আহারাদি নিয়ে খুব যে একটা উন্মাদনা দেখাবে এমনটা মনে করার কারণ নেই। মেসিরাও হয়ত দেখায়নি। আশাকরি তা সত্বেও ’রূপসি বাংলা’ ত্রুটি দেখায়নি এসব নামি দামি তারকাদের আথিতেয়তায়। জাতিকে ৯০ মিনিটের আনন্দ দিতে ৩০ কোটি খরচ করে উড়িয়ে আনা হল দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা আর আফ্রিকার নাইজেরিয়ান ইগলদের। পাশাপাশি জাতি হিসাবে আমাদের ভাগ্য বদলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে উড়ে এলেন প্রতিবেশি দেশের মনমোহন সিং। মনমোহন বাবুদের আতিথেয়তায় অবশ্য ত্রুটির সুযোগ ছিলনা, কারণ এ কাজে নিয়োজিত ছিল সরকারের সবকটি প্রতিষ্ঠান।
ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত নাটক দুটি হতে জাতি হিসাবে আমাদের প্রাপ্তির কিছু রূপরেখা আগ বাড়িয়েই প্রকাশ করা হয়েছিল। মনমোহন বাবুর বাংলাদেশের সফর ও এর রাজনৈতিক ও আর্থিক লেনদেনের আগাম হিসাবে বলা হয়েছিল পানি চুক্তি হবে, সীমান্ত চুক্তি হবে, চুক্তি হবে ট্রানজিটের উপর এবং কথা হবে দুই দেশের অসম ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে। চাওয়া পাওয়ার সমীকরণ করার জন্যে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে দেশের গোটা সুশিল সমাজ। আমরা হয়ত খুব শীঘ্রই জানতে পারব এর চূড়ান্ত ফলাফল। ফুটবলের হিসাবটা কেন জানি একটু ঘোলাটে মনে হচ্ছে। সাউথ আমেরিকার দেশ পেরুর একট দৈনিকে প্রকাশিত একটা খবর পড়ে চমকিত না হয়ে পারলাম না। খবরটা ছিল মেসি বাহিনীর বাংলাদেশ সফরের উপর। গোটা আর্টিকেলটা ছিল ঠাট্টা, তামাশা, পরিহাস-উপহাসে ভরা। আর্জেন্টাইন ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশি উন্মাদনাকে তুলনা করা হয়েছে সস্তা মাতলামির সাথে। বিদেশিদের কাছে ঠাট্টা মনে হলেও আমাদের ফুটবল কর্তাদের কাছে এই সফর ছিল দেশিয় ফুটবলকে বদলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি হিসাবে। বলা হয়েছিল মেসি যাদু শুধু ষ্টেডিয়ামে নয় বরং ছড়িয়ে পরবে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। ফুটবলের নতুন বস সালাউদ্দিন বলছেন এ কেবল শুরু, এরপর আসতে শুরু করবে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, বার্সিলোনা, ব্রাজিল, স্পেনের মত নামি দামী ক্লাব আর দেশের ফুটবল দল। ৩০ কোটি টাকার মত অংক খরচ করলে পৃথিবীর যে কোন দেশের যে কোন ফুটবল দলকে বঙ্গবন্ধু ষ্টেডিয়ামে নামিয়ে আনন্দ উল্লাস করা যাবে। তাতে বাংলাদেশের কংকালসার ফুটবল কতটা লাভবান হবে তার উওর পেতে আমাদের বোধহয় একটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই ৩০ কোটি টাকার একটা বিরাট অংশ আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ঘুরে শেষ পর্যন্ত কার পকেটে যাবে তার হিসাব কষতে আমাদের বোধহয় সময়ের প্রয়োজন হবেনা। ফুটবল নয়, সদ্য সমাপ্ত আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচকে বরং নাইজেরিয়ান স্ক্যাম হিসাবে আখ্যায়িত করলে বোধহয় যথার্থ হবে।