লেখাটা যখন লিখছি ক্যারিবিয়ানদের রান ৪ উইকেটে ৩২৮। দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা চলছে। সন্দেহ নেই প্র্রথম ইনিংসের লীড যোগ করে বড় ধরণের লীড নিতে যাচ্ছে সফরকারী দল। প্রায় দুই দিন বাকি থাকতে খেলার ফলাফল কোন দিকে যাচ্ছে তা ৭ বছরের একটা শিশুও বলে দিতে পারবে। এমনটাই বাংলাদেশের ক্রিকেট। এ নিয়ে দেশে বিদেশে কথা হচ্ছে। ক্রিকেটের এলিট পরিবারের বাংলাদেশের স্থান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। প্রশ্ন উঠছে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট বাংলাদেশের যোগ্যতা নিয়ে, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। নিজেদের ক্রিকেটকে আমরা অন্ধভাবে ভালবাসি এবং এর সাফল্য ব্যর্থতাকে নিজেদের জটিল আর্থ-সামজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দেখি। আমাদের প্রত্যাশা পূরণে সরকারও খরচ করতে কার্পণ্য করছে না। বিদেশি কোচ, ফিজিও সহ সম্ভব সবাইকে আনা হচ্ছে বিদেশ হতে। তাদের পেছনে খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি ক্রিকেটাররাও আর্থিক নিশ্চয়তা সহ সরকার হতে পাচ্ছে হরেক রকম সুবিধা। সবকিছুই হচ্ছে ক্রিকেট বাংলাদেশের উন্নতির নামে। গেল ক’বছরে কতটা উন্নতি করেছি আমরা?
অন-লাইনের বদৌলতে ঢাকা টেস্ট দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে। ক্যারিবিয়ানদের ৩৫৫ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবালের এক ওভারে ৩ বাউন্ডারি মারার ধরণ দেখেই ধরে নিয়েছিলাম কি ঘটতে যাচ্ছে। স্ক্রিন হতে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম ’বিখ্যাত’ এই খেলোয়ারের করুণ পরিণতি এড়ানোর জন্যে। কিছুক্ষণের ভেতর ফিরে এসে যা দেখার তাই দেখলাম, তামিম ইকবাল নেই। এর পরের দৃশ্যগুলো ছিল খুবই পরিচিত। জায়ান্টদের এক একজন মহাসমারোহে আসছেন এবং বিশ্বজয় শেষে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। এসব দেখে হতাশ অথবা রাগ করার পর্ব অনেক আগেই উঠিয়ে রেখেছি। কারণ আনপ্রেডিক্টেবল খেলার প্রেডিক্টটেবল দল বাংলাদেশ। এই দলের বিরুদ্ধে যারাই খেলবে স্ট্রাটেজি ঠিক করতে তাদের খুব একটা মাথা ঘামাতে হয়না। ৩/৪টা ডট বল এবং ৫ম বলটা স্ট্যাম্পের বাইরে, এবং রাগান্বিত ও ক্রোধান্বিত হিরো ১৬ কোটি মানুষের রাগ ঝাড়তে দরকার হলে স্ট্যাম্প হতে ৫ হাত ডানে বায়ে বেরিয়ে প্রচন্ড মারে বলকে মীরপুর হতে মোহম্মদপুর পাঠানোর চেষ্টা করবে। এ যেন ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজির স্পোর্টস ভার্সন। মাসের পর মাস ট্রেনিং ও শত শত ঘন্টার কোচিং শেষে মাঠে নেমে ২/৩ ওভার খেলার আগেই আউট। এ আউটের জন্যে মোটেও দুঃখিত নন তারকা খেলোয়ার তামিম ইকবাল। কারণ এটাই নাকি তার ন্যাচারাল খেলা। ইদানিং এই খেলোয়াড়ের মুখে দেখা দিয়েছে নতুন রোগ, গালাগালি। অস্ট্রেলিয়ান জয়ের অর্ধেকটাই নাকি আসে মাঠের গালাগালি হতে। তাই তামিম ইকবালও চেষ্টা করছেন অস্ট্রেলিয়ানদের টেকনিক কাজে লাগাতে।
এসব ছেলেমানুষীর ক্রিকেট খেলতে খেলতে অনেক বেলা হয়ে গেছে আমাদের। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আর ১৬ কোটি সমর্থকদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমাদের হিরোরা মাঠে যা করছেন তা ক্রিকেটের পরিভাষায় অনুবাদ করা খুবই কঠিন। স্বভাবতই পণ্ডিতরা প্রশ্ন তুলছেন যোগ্যতা নিয়ে। আর আমরা বোকা হাবার মত বছরের পর বছর ধরে আশাহত হচ্ছি। প্রশ্ন হচ্ছে, আর কত কাল চলতে থাকবে ক্রিকেট নামের এই কমেডি?