লোকমান হত্যাকান্ডের ময়নাতদন্ত

Submitted by WatchDog on Wednesday, November 16, 2011

Bangladesh

আগাথা ক্রিস্টির রহস্যোপন্যাস ’মার্ডার অন দ্যা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’ যাদের পড়া আছে তাদের জন্যে সহজ হবে লেখার প্রতিপাদ্য লুফে নিতে। ভুবন খ্যাত এই বৃটিশ লেখিকার প্রায় সব গুলো উপন্যাস নিয়ে ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে। ’মার্ডার অন দ্যা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’ও বাদ যায়নি। লেখিকার সাহিত্য কর্মের সাথে যাদের পরিচয় নেই তাদের অনুরোধ করব ছবিটা দেখে নিতে। নরসিংদীর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকান্ডের সাথে ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের সূক্ষ্ম একটা সমান্তরাল খুজে বের করার জন্যে আমার এ প্রয়াস। স্বাধীনতাত্তোর ৪০ বছর নরসিংদী সহ বাংলাদেশের শহর গুলোতে যা ঘটছে তার রহস্য উন্মোচন করায় মিস কৃষ্টির তৈরী হারকোয়াল পোয়ারো অথবা মিস মারফেলের মত অন্তর্ভেদী গোয়েন্দা হওয়ার দরকার হয়না, কারণ খুনাখুনি এখানে ভাগ্য তৈরীর প্রাতিষ্ঠানিক হাতিয়ার, ডাল ভাতের মত প্রয়োজনীয় খাদ্য। লোকমান হত্যা সে অধ্যায়েরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সরাসরি সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আসুন দেখে নেই সে রাতে কি ঘটেছিল ইস্তাম্বুল হতে ছেড়ে আসা লন্ডনগামী ট্রেনে।

বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল হারকিউল পোয়ারোর। বেলগ্রেডের কাছাকাছি কোথাও থেমে গেল ট্রেনটা। হাতঘড়িটার দিকে তাকাতে চমকে উঠল, ১টা বাজতে তেইশ মিনিট। এত রাতে ঘুম ভাঙ্গার কথা ছিলনা তার। বাইরে প্রচন্ড তুষার ঝড়। হুইসেলের মত শোনাচ্ছে ঝড়ের শোঁ শোঁ আওয়াজ। দরজায় কেউ একজন হাত রাখছে মনে হতে উঠে বসল সে। দরজা খুলে করিডোরের দিকে তাকাল। আলো আধারের রহস্যময় করিডোরে কিমোনো পরিহিত কারও ছায়া দেখে বিস্ময়ে জমে গেল তার শরীর। একদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা খোজার চেষ্টা করল। তেমন কিছু চোখে না পরায় এক গ্লাশ পানি হাতে ফিরে গেল নিজের কামরায়।

সকালে ঘুম ভাঙ্গল মিঃ রসেটের মৃত্যু সংবাদে। খুন করা হয়েছে তাকে। বেচারার শরীরে ১২টা আঘাতের চিহ্ন। ছুরির আঘাত গুলো বেশ রহস্যময় মনে হল পোয়ারোর কাছে। কোনটা বেশ গভীর, কোনটা আবার একেবারেই কাঁচা হাতের। বুঝতে অসুবিধা হলনা খুনি একজন নয়, একাধিক। লাশের পাশে ছিন্নভিন্ন হয়ে পরে থাকা চিঠিটা পুনর্গঠনের মাধ্যমে পোয়ারো উদ্ধার করতে সক্ষম হল রসেটের আসল পরিচয়। যুক্তরাষ্ট্রের নটোরিয়াস ফিউজিটিভ রসেটের আসল নাম কাসেট্টি। কর্নেল আর্মষ্ট্রং’এর কন্যা ডেইজী আর্মষ্ট্রংকে কিডন্যাপ করেই ক্ষান্ত হয়নি এই গ্যাংস্টার, মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়ের পরও তিন বছর বয়সী শিশুটিকে খুন করে পালিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র হতে। যাত্রীদের তালিকা ও তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই পূর্বক অদ্ভুত একটা মিল আবিস্কার করে পোয়ারো, ১১ জনের সবাই কোন না কোন ভাবে আর্মস্ট্রং পরিবারের সাথে জড়িত। কেউ আত্মীয়, কেউ পরিবারিক বন্ধু, কেউবা আবার শুভাকাঙ্ক্ষী। একমাত্র সন্তান হারানোর শোকে বেশিদিন বাঁচেননি মিঃ ও মিসেস আর্মস্ট্রং’। পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহজভাবে নিতে পারেনি অত্যন্ত ভদ্র একটা পরিবারের এমন করুণ পরিণতি। বছরের পর বছর ধরে ওরা পরিকল্পনা করেছে প্রতিশোধের ও অপেক্ষায় থেকেছে মোক্ষম সময়ের। শেষ পর্যন্ত ইস্তাম্বুল হতে ছেড়ে আসা ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটা এনে দেয় সে সুযোগ। চাপ দিতেই ১১ জন যাত্রীর সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পরে পোয়ারোর সামনে এবং অকপটে স্বীকার করে নিজদের অপরাধ। ১১ জনের সবাই একটা করে আঘাত করেছে কাসেট্টির গায়ে এবং ১২তম আঘাতটা ছিল তদন্তে বিভ্রাট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।

নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকান্ডের জট খুলতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। মৃত্যুর আগে মেয়র নিজেই নাকি দিয়ে গেছেন খুনিদের পরিচয়। মুখে মুখোশ আটা থাকলেও চিনতে অসুবিধা হয়নি মেয়রের, কারণ এদের সবাই কোন না কোন ভাবে জড়িত ছিল মেয়রের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে। কে এই লোকমান হোসেন, এমন একটা প্রশ্নের উত্তর খুজতে গেলে হয়ত লোকমান হোসেনের জীবনকে দুইভাগে ভাগ করতে হবে। এক, ছাত্রলীগের লোকমান; দুই, মেয়র লোকমান হোসেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে ছাত্রলীগের এই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে স্থানীয় লোকজন শুধু লোকমান নামেই চিনত, লোকমান হোসেন হিসাবে নয়। স্থানীয় ভাগদি এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নিলেও অল্প বয়সে পা বাড়ায় অন্ধকার দুনিয়ায়। চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, গুম, হত্যা, সম্পত্তি দখল সহ এমন কোন কাজ নেই যার সাথে নিজকে জড়িত করেনি পরিবর্তী কালের জনপ্রিয় এই মেয়র। লোকমান নামে হাঁটু কাঁপেনি এমন দাবী করলে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। কিন্তু সবকিছু বদলে দেয় মেয়র নির্বাচন।

একদিকে সন্ত্রাসের স্বঘোষিত গডফাদার প্রাক্তন মেয়র আবদুল মতিন সরকার, অন্যদিকে চরিত্রহীন সাংসদ শামসুদ্দিন এসহাকের ছত্রছায়ায় নরসিংদী পরিণত হয়েছিল সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে। পৌরসভার কোটি কোটি টাকার বাজেট, শহরের মাদক সাম্রাজ্য, ভারতীয় পন্যের চোরাচালান রুট সহ আপরাধ জগতের সবটাই নিয়ন্ত্রন করতেন মেয়র ও আওয়ামী নেতা জনাব আবদুল মতিন সরকার ও তার ভয়ংকর ক্যাডার বাহিনী। অস্ত্রের মুখে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একাধিক বার মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি নামের এই জানোয়ার জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছিল নরসিংদীর বুকে। কিন্তু অবস্থা বদলে যায় যেদিন লোকমান তার প্রার্থিতা ঘোষনা দেয়। আবদুল মতিনের সন্ত্রাস মোকাবেলায় লোকমান হোসেনের সন্ত্রাস কতটা কাজ দেবে বিষয়টা নিয়ে উদগ্রীব ছিল গোটা শহর। দুজনেই ছিল আওয়ামী ঘরনার। তবে পার্থক্য ছিল এক জায়গায়, একজন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বেপারী পাড়ার, অন্যজন বেপারী পাড়ার বাইরে। লোকমান হোসেনের বিজয় টলিয়ে দেয় আবদুল মতিন তথা বেপারী পাড়ার সাম্রাজ্য। গোটা বিশেক খুনের আসামী এই আওয়ামী লীগারের ইটের ভাট সহ ঠিকাদারী ব্যবসায় নেমে আসে গহীন অন্ধকার। রাতারাতি ধ্বস নামে তার সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে। ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকার গোপন জলসাঘরের বাতি গুলোও নিভে যায় এক ফুৎকারে। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হাজী সাহেবের মদ, জুয়া আর মেয়ে মানুষের জমজমাট আসর।

মোবারক হোসেন মোবা - বাংলা ভাষার কোন বিশেষণই যথেষ্ট নয় এই সন্ত্রাসীর চরিত্র হননে। ছাত্রলীগ নামের যে বিষাক্ত পুঁজ জাতির পিতা ও তার পারিবার আমাদের উপহার দিয়েছেন তার নিকৃষ্টতম উৎপাদ এই মোবা। লোকমানের ছোট কালের বন্ধু, তাবৎ অপরাধের ঘনিষ্ট সহযোগী হয়েও মেয়র লোকমানের সাথে দন্ধে জড়িয়ে যায় টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে। আশা ছিল মেয়র হয়েও লোকমান হোসেন থেকে যাবে তার আজীবনের বন্ধু ও ফ্রি পাস সরবরাহ করবে টেন্ডার সাম্রাজ্যের।

রাজিউদ্দিন রাজু - অনেকে ঠাট্টা করে বলেন মদ আর মেয়ে মানুষই নাকি কেন্দ্রীয় নেতার চালিকা শক্তি। এ দুটো আছে বলেই নাকি তিনি বেচে থাকেন। স্কুলের শিক্ষিকা, আমলাতন্ত্রের প্রতিনিধি, গ্রাম্য বধু হতে শুরু করে কাজের বুয়া পর্যন্ত হাত বাড়াতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করেন না নিজ অবস্থানের। নরসিংদী সদর আসনের সাংসদ না হয়েও লোকমানের উত্থান ও তার সর্বগ্রাসী প্রভাবের কারণে মন্ত্রিত্ব নিয়ে চিন্তিত থাকতেন সর্বদা। ভাল করেই বুঝতে পেরেছিলেন সামনের নির্বাচনে লোকমান মনোনয়ন চাইলে পাশ করে যাবে এবং দাবি করবে মন্ত্রিত্বের। বিনা স্বার্থে নরসিংদীর মত জেলা হতে দুজন মন্ত্রী নিয়োগ দেবেন এমন হাভাতে যে শেখ হাসিনা নন তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি এই মন্ত্রীর। তাই চারদিক হিসাব কষেই আপন ভাই সালাউদ্দিন বাচ্চুকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন লোকমানের বিরুদ্ধে।

নজরুল ইসলাম হীরুঃ স্থানীয় সাংসদ হলেও শহরের অনেকের কাছেই একটি অপরিচিত নাম, বিশেষ করে রাজনীতির মাঠে। লোকমানের জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের কাছে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বাস করতেন এই জনপ্রতিনিধি। এও বুঝতে পেরেছিলেন সামনের নির্বাচনে দলীয় টিকেট চাইতে যাচ্ছে মেয়র লোকমান। প্রার্থী নির্বাচনের কোন মানদণ্ডেই মেয়র লোকমানকে পেছনে ফেলতে অক্ষম ছিলেন এই জগন্নাথ। হয়ত এ জন্যেই মনে মনে বিদায় চাইছিলেন মেয়র লোকমানের।

আবদুল মতিন ভূইয়াঃ শহর ও জেলা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা। বেপারী পাড়ার প্রতিনিধি। রাজনীতির বাইরে এই নেতার পেশা কি তা বোধহয় কারোরই জানা নেই। তবে শহরবাসী দশকের পর দশক ধরে নেতাকে জেনে আসছে বটতলা বাস্ট্যান্ডের মূল চাঁদাবাজ ও সংখ্যালঘু হিন্দুদের রক্ষক-কাম-ভক্ষক হিসাবে। এটাই ছিল তার ও বেপারী পাড়া আওয়ামী লীগের আয়-রোজগার একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু সব বদলে দেয় লোকমান হোসেনের চেয়ারম্যানি। অনেকটা গায়ের জোরে ও মেয়রের একক ইচ্ছায় বাসষ্ট্যান্ড চলে যায় শহরের বাইরে। আকাশ ভেঙ্গে পরে আবদুল মতিন ভূইয়া এন্ড গংদের মাথায়। পাকা ধানে মই দেয়ার প্রতিশোধ কিভাবে নিতে হয় তা ভাল করেই জানা ছিল বেপারী পাড়া আওয়ামী লীগের।

স্থানীয় প্রশাসনঃ নামে আদর্শ হলেও কাজ-কর্মে নরসিংদী থানা বাংলাদেশের আর দশটা থানার মতই কলুষিত। পার্থক্য, এ থানা এমন একটা শহরে অবস্থিত যার বাতাসে উড়ে বেড়ায় কালো টাকার বায়বীয় বেলুন। এ বেলুনে চড়ে থানার অফিসার-ইন-কমান্ড সহ বাকি সবাই খুব দ্রুত পৌছে যেত স্বপ্নের সোনালী দেশে। শহরের পাশ ঘেঁসে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদী বছরের পর বছর ধরে চোরাকারবারীর নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহূত হয়ে আসছিল। এ পথে চোরাচালানির মূল বেনিফিসিয়ারি নরসিংদী থানার এসপি/ওসি হতে শুরু করে সাধারণ সেপাই পর্যন্ত। কিন্তু নিরাপদ আয়ের এই স্বপ্নীল রাস্তা সহসাই বন্ধুর হয়ে যায় লোকমান হোসেনের কারণে। মেয়র কঠোর হস্তে দমন করেন চোরাচালানের আর্ন্তজাতিক রুট। পুলিশ সহ প্রশাসনের অনেকের পেটে লাথি পরে মেয়রের সিদ্ধান্তে। তারা সবাই অপেক্ষায় ছিল লোকমান বিহীন এমন একটা সকালের যে সকালে নতুন করে উদয় হবে অবৈধ আয়ের সোনালী সূর্য্য।

বিচার ব্যবস্থাঃ লোকমান হোসেনকে যেদিন হত্যা করা হয় বাংলাদেশি বিচার ব্যবস্থার অধীশ্বর জনাবা শেখ হাসিনা ছিলেন প্রবাসে। হত্যাকান্ডের অপরাধ ও শাস্তি পর্ব কোন দিকে মোড় নিলে অধীশ্বরের মন জয় করা যাবে তার প্রতিক্ষায় ছিল গোটা বিচার ব্যবস্থা। শেষ পর্যন্ত উনি এলেন এবং ডেকে পাঠালেন খুনিদের প্রতিনিধি মন্ত্রীসভার সদস্য রাজিউদ্দিন রাজু ও প্রশাসনের হোমরা চোমরাদের। এবং যৌথসভায় সিদ্ধান্ত দিলেন কোন পথে হাটাতে হবে লোকমান হোসেন হত্যাকান্ডের শাস্তি পর্বকে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর বদলে যায় স্থানীয় সাংসদ নজরুল ইসলামের সুর, বদলে যায় প্রশাসনের সুর এবং রাতারাতি বদলি করা হয় থানার ওসি ও এসপিকে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা দেখা করেন লোকমান পরিবারের সাথে, আফার করেন ১ কোটি টাকার ক্ষতি পূরণ, নিহতের স্ত্রীকে টোপ দেন মেয়র পদের এবং বিনিময়ে নিশ্চয়তা চান মন্ত্রী পরিবারের কাউকে আসামী না বানানোর। পুলিশ আর র‌্যাব যখন হন্যে হয়ে খুজে বেড়াচ্ছে আসামীদের, দলীয় ছকের নীল নক্সায় আসামিরা হাজির হয় উচ্চ আদালতে এবং প্রার্থনা করে আগাম জামিনের। সরকারের প্রতিনিধি মহামান্য বিচারকরা বললেন নিজদের বিবেকের কথা, জানালেন আইন নয়, বিবেকই নাকি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে জামিনের মাঝে। জামিন না পেয়ে আসামিরা ফিরে যায় নিজেদের আস্তানায়, এবং পুলিশ জানায় কৌশলগত কারণে এদের গ্রেফতার করা যায়নি। তবে এ কৌশলটা যে ছিল প্রধানমন্ত্রীর মনোরঞ্জনের তা লোকমান পরিবারের ভাল করেই জানা ছিল।

উপসংহারঃ প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্বে মাথা তুলতে গেলে পরিণতি কতটা ভয়াবহ হয় অতীতে সিসিলিয়ান কোচানস্ট্রারা তার প্রমান রেখে গেছে । বাংলাদেশ নামক একটা রাষ্ট্র এখন গ্যাংস্টারদের স্বর্গভূমি, নব্য কোচানষ্ট্রাদের অভয়রাণ্য। লোকমান হোসেন ছিল তেমনি এক যুবক যে তার কালো অতীত হতে শিক্ষা নিয়ে চেষ্টা করেছিল প্রাতিষ্ঠানিক র্দুনীতির বিরুদ্বে রুখে দাড়াতে। ফলাফল যা হওয়ার তাই হল, কোচানষ্ট্রা কায়দায় অ্যাসাসিনেশন। লোকমান নিজেও জানত তার সম্ভাব্য পরিণতির কথা। এলাকার জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের পা হতে মাথা, দলীয় রাজনীতির অধীশ্বর হতে শুরু করে রুট লেভেল কর্মীদের অবৈধ আয়ে হাত দিলে পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে লোকমান পরিণতি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। সরকারী খাতায় লোকমান হত্যাকারীর সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। কিন্তু বেসরকারী খাতায় এ সংখ্যা অগুনিত। শহর ও জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ পালটে দিতে লোকমান হত্যার কোন বিকল্প ছিলনা। এ হত্যাকান্ডে কজন প্রফেশনাল কিলার ছাড়া আরও অনেকের হাত ছিল। আজকে যারা লোকমানের হয়ে চোখের পানি ফেলছে তাদের অনেকে জড়িত ছিল হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায়। সবার ছিল নিজ নিজ সমীকরণ। আগাথা কৃষ্টির উপন্যাস ’মার্ডার অন দ্যা ওরিয়েনট এক্সপ্রেস’এ ঘটে যাওয়া কাসেট্টি হত্যাকান্ডের মতই হত্যা করা হয়েছিল মেয়র লোকমানকে। এম্পি, চেয়াম্যান, পারিবারিক বন্ধু, থানা-পুলিশ, ডিসি-এসপি, রাজনীতিবিদ, আমলা সহ শহরের অনেক হোমরা চোমরাদের নেপথ্য হাত ছিল এ হত্যাকান্ডে।

দেশ নিয়ে যারা স্বপ্ন দেখেন, পরিবর্তনের দাবি নিয়ে ক্ষমতার কাছাকাছি যেতে চান তাদের জন্যে লোকমান হত্যাকান্ড উদাহরণ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন