বিদ্যুৎ ভর্তুকির সমালোচকদের দুই দিন করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। হিন্দি সিনেমার ভিলেন কায়দায় দেয়া এ বক্তব্যের তৃতীয় কোন অর্থ আছে কিনা তা প্রধানমন্ত্রীই বলতে পারবেন, তবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ম্যাঙ্গো পিপলদের ঘোষনা দিয়ে বিদ্যুৎ বঞ্চিত করার কোন কারণ আছে বলে মনে হয়না। তারা এমনিতেই বঞ্চিত। কেবল বিদ্যুৎ নয়, গ্যাস, পানি, আইনের শাসন, স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তা সহ সমাজ ও রাষ্ট্রের দেয় সব ধরনের মৌলিক অধিকার হতে তারা বঞ্চিত। আইন করে বঞ্চিতদের মুখ বন্ধ করা যায়না, সভ্যতা বিবর্তনের গোটা ইতিহাসটাই হেটে গেছে এ পথে। ১৯৭৪ সালেও এ চেষ্টা হয়েছিল। কথা বলার জন্মগত অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পিতাও চেষ্টা করেছিলেন প্রতিবাদীদের শায়েস্তা করতে। কাজ হয়নি। হুমকি, ধামকি, পেশি শক্তি আর পা চাটা আইন আদালত দিয়ে হীরক রাজত্ব কায়েম করা যায়, উজির নাজির কোতোয়ালদের চাটুকারীতায় সাতার কাটা যায়, কিন্তু দিন শেষে এই রাজত্ব তাসের ঘরের মত ধ্বসে পরে, আর রাজার গলায় দড়ি ঝুলিয়ে প্রজারাই খানখান করে দেয় তার তখততাউস।
রাজনীতি নামের বাংলাদেশীয় অনাচার, পাপাচার আর অপশাসনের বয়স দেখতে দেখতে ৪০ বছর হয়ে গেল। বিভক্তির বিষাক্ত বীজ এ ফাঁকে জাতিকে ঠেলে দিয়েছে গৃহযুদ্ধের দোরগোড়ায়। রাজনীতি রূপ নিয়েছে ঘোলা পানিতে রুই-কাতল শিকারের উর্বর জলাশয়ে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পাইক পেয়াদা পরিবেষ্টিত হয়ে সে জলাশয়েই কেলি করছেন আর বিদ্যুৎ বন্ধের মত রাজকীয় অধ্যাদেশ জারি করছেন। প্রতিপক্ষের বুদ্ধিজীবী যারা সরকারের কাজে একমত নয়, তাদের জন্যেই নাকি এ শাস্তির আয়োজন। সরকারের পারিবারিক সম্পত্তি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এমনটাই নাকি নতুন বাংলাদেশের রীতিনীতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার হাত-পা। একদল পা চাটা বুদ্ধিজীবী ছাড়াও সরকারের সমালোচক আছে, এবং এ সংখ্যা কোটিতেও সীমাবদ্ধ নেই। তাদের কেউ কেউ পয়সা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং দলীয় চেলাচামুণ্ডাদের পকেট ভারী করার রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের সমালোচনা করছে। প্রশ্ন উঠবে, তাদের জন্যে কোন ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী?
বিদ্যুৎ বিছিন্ন করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা কেবল মানসিক ভারসাম্যহীনদের মুখেই শোভা পায়। রাজনীতিবিদ নামের এসব উন্মাদদের মানসিক চিকিৎসা অনেকটাই জরুরী হয়ে পরেছে। দু বছর পর আমাদের নতুন করে পছন্দ করতে বলা হবে এসব পাগলদের একজনকে। রাজনীতিতে সক্রিয় বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের মানসিক চিকিৎসা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে আসুন গলা মেলাই। এটা খুবই জরুরি।