আদরের বাপধন,
অশেষ স্নেহ লইও। আশাকরি বন্ধু-বান্ধব লইয়া বিদেশ বিভূঁইয়ে সহিসালামতে দিনপাত করিতেছ। তোমার বাবার নিষেধ সত্ত্বেও লিখিতে বাধ্য হইতেছি বিশেষ একটা কারণে। চিন্তিত হইওনা তোমার কাছে অর্থ-কড়ি চাহিব না। একজন মার কাছে সন্তানের ভাল-মন্দের তাগাদা চিরন্তর, ইহা হইতেই এই পত্র। নিজে যেদিন পিতা হইবে সেদিন বুঝিতে পারিবে আমাদের উৎকণ্ঠার কারণ। আজকের পত্রিকায় তোমার একটা ছবি দেখিয়া যারপর নাই পুলকিত হইয়াছিলাম। কিন্তু ভেতরের কাহিনী পড়িয়া ততটাই হতাশ হইলাম। বাবা, তুমি কি হাজার মাইল দুরে গিয়া তাহাই করিতেছে যাহা হইতে ফিরাইবার জন্যে তোমার বাবা চল্লিশ বছরের সাধনার ফসল বসতবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করিতে বাধ্য হইয়াছিল? আবারও সেই মারামারি? আবারও সেই রাজনীতি? গঞ্জের মারামারি আইফেল টাওয়ারে রফতানি করিবার জন্যেই কি আমরা তোমাকে প্যারিস পাঠাইয়াছিলাম? তোমাকে বিদেশ পাঠাইতে গিয়া আজ আমরা নিঃস্ব। তোমার স্কুল শিক্ষক বাবা এখন বর্গা চাষি। তোমার ছোট বোনের বিবাহ ভাঙ্গিয়াছিল তোমারই কারণে। সে দুঃখে বেচারী গলায় গামছা দিয়া পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করিয়াছে। আমরা সেই দুঃখ ভুলিতে চেষ্টা করিয়াছি তোমার ভবিষত্যের দিকে তাকাইয়া। আশা ছিল তুমি মানুষ হইবে, আমাদের মুখ উজ্জল করিবে, সংসারে স্বচ্ছলতা আসিবে। কিন্তু ভাবিলাম কি আর হইল কি!
বাবা, তুমি রাজনীতি লইয়া সতীর্থদের সহিত আইফেল টাওয়ারের নীচে মারামারি করিয়াছ, এই ছবি পত্রিকায় আসিয়াছে। একজন সৎ স্কুল শিক্ষক পরিবারের জন্যে ইহার চাইতে লজ্জাস্কর আর কিছু হইতে পারেনা। প্রিয় নেত্রীর চেতনা সমুন্নত রাখিতে নিজের জীবন বিলাইয়া দেওয়ারও নাকি প্রতিজ্ঞা করিয়াছ। বাবা, আমরা তোমার মাতা-পিতা, আমাদেরও একটা স্বপ্ন ছিল, ছিল চেতনা। এই চেতনা সন্তানের দায়িত্ব পালনের চেতনা, স্বপ্ন পূরণের উচ্চাশা। কোথায় গেল এইসব? তুমি এমন একজনের চেতনার জন্যে জীবন বাজি রাখিতেছে যাহার সন্তানাদি তোমার সাহায্য ছাড়াই সহিসালামতে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করিতেছে। তাহারা পারিলে তুমি কেন পারিবে না?
বাবা, দেশ লইয়া রাজনীতি করিবার আগে নিজ পরিবার লইয়া রাজনীতি করিতে শেখ। কয়েকটা পরিবার মিলিয়াই তৈয়ার হয় একটা সমাজ, আর এ সমাজের জন্যেই সামষ্টিক রাজনীতি। ঘোড়া ডিঙ্গাইয়া ঘাস খাইতে দূরের দেশ ফ্রান্সে যাইবার প্রয়োজন ছিলনা, বাংলাদেশই উহার উত্তম জায়গা। তোমার মত ঘোড়ার সংখ্যা এখন এই দেশের ঘরে ঘরে।
রাগের মাথায় কি বলিতে কি বলিয়া ফেলিলাম উহাতে কষ্ট নিও না।
মমতাময়ী মা
তথ্যসূত্রঃ প্যারিসের রাস্তায় ‘বাংলাধোলাই’
‘বাংলাধোলাই’ দেখলেন প্যারিসবাসী। দিনদুপুরে বিশ্ববিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে এক ভদ্রলোককে মারধর করছেন টাই-স্যুট পরা আরও ১৫/২০ ভদ্রলোক। এমন তাজ্জব কাণ্ডে প্যারিসবাসী অবাক হলেও অবলীলায় তা দেখালেন বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা। প্রহৃত ও প্রহারকারী সবাই বাংলাদেশের সরকারি দলের নেতাকর্মী-সমর্থক। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ফ্রান্স প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার ইউরো আদায় করার অভিযোগে দেবেশ বড়ুয়া নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ‘প্রতারক’ হিসেবে চিহ্নিত করে গণধোলাই দিয়েছেন অন্যরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সম্প্র্রতি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাংবাদিক পরিচয়দানকারী দেবেশ বড়ুয়া ৫ বছর ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রামু এলাকায়। টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলায় দেখানো হবে বলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার ইউরো আত্মসাত্ করেন বলে দেবেশ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ। ভুক্তভোগী কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী অভিযোগ করে জানান, গত মাসে চট্টগ্রাম সমিতির অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে কয়েক হাজার ইউরো আদায় করে নিজে তা আত্মসাত্ করেন দেবেশ বড়ুয়া। তারা জানান, রিফিউজি কার্ড নিয়ে ফ্রান্সে অবস্থানকালে বাংলাদেশ ভ্রমণে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কয়েকজনের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত্ করে বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করেন তিনি। প্রতারক দেবেশ বড়ুয়া নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা বলেও দাবি করেন।
এঘটনার পর প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্নকারী প্রতারক দেবেশ বড়ুয়া এবং একই সঙ্গে আইন হাতে তুলে নেয়ার দায়ে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বিদেশের মাটিতে মারামারি করার ঘটনায় বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার।
এদিকে বাংলাদেশের একটি অনলাইন সংবাদ সংস্থায় পাঠানো প্রতিবাদে দেবেশ বড়ুয়া ঘটনা সম্পর্কে বলেন, গত ১ ডিসেম্বর ফ্রান্স আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আমার সঙ্গে চট্টগ্রামের অধিবাসী ফ্রান্স আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে মৃদু তর্কাতর্কি হয়। তারা সুকৌশলে যে ছবিটি ব্যবহার করেছে তা একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে ছবিতে আসলে কি হচ্ছে। ছবিতে আমার আশপাশে আছেন ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আকরাম খান, আইনবিষয়ক সম্পাদক সুমন বড়ুয়াসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। প্রতিবাদে তিনি চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করেন।