ক্রিং ক্রিং ক্রিং। বাজতেই লাগল ফোনডা। কি একটা আওয়াজ শুইন্যা ধর ফর কইরা বিছানার উপর উইঠ্যা বসলেন মন্ত্রীজী। মনডা তিতা হইয়া যায় এত সকালে ফোন পাইলে। বিশেষ কইরা চীফমন্ত্রীর কড়া কড়া কথার ফোন। আইজকাও ব্যতিক্রম হইল না। গচর গচর করতে করতে কম্পমান ফোনডার দিকে আগাইয়া গেলেন।
তিনি আর কেহ নহেন, আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্বজানাবা তাহেরা খানম। চোখে কম দেহেন তাই কথাও কম বলার চেষ্টা করেন। নদীর পানি মনে কইরা টয়লেটের কমোটে পাও ঢুকাইয়্যা সিঙ্গাপুর পর্যন্ত যাইতে বাধ্য হইছেন। কষ্টডা এত সহজে ভুলেন নাই। তাই খুব সাবধানে পা চালাইলেন।
খালা, রেব-৩’এর রিজিওনাল ম্যানেজার প্রিন্স খালেদ বিন ওয়ালেদ কইতাসি’।
’খালা? আমি তোমার কোন জনমের খালারে শুয়রের ছাওয়াল? মাননীয়া মন্ত্রীমহোদয়া কইবার পারনা? নাকি লাত্থি-উষ্টার ব্যবস্থা করা লাগব প্রিন্সের বাচ্চা প্রিন্স?’
’জ্বে আম্মাজান, ভুল হইয়া গেসে’
’কি হইসে, এত সকালে কারে থুইয়া কারে ধরলা?
’আর কইয়েন না মাননীয়া মন্ত্রীজী, এক হমুন্দির পুত নিজেরে কেউকেটা বইল্যা দাবি করতাসে। হেয় নাকি এই দেশের আসল মালিক। তাফালিং করতাসে এয়ারপোর্টে। গালে কইষ্যা একটা চড় দেওনের পর মুখের দাড়ি খইস্যা পরল। ফেইক দাড়ি। মনে হইতাসে তালিবান অথবা আসামের উলফা। হেরে লইয়্যা কি করমু সিদ্ধান্ত দেন’।
’উলফা হইলে বস খুশি হইব। তা উলফা পরিচয়ে পাঠাইয়্যা দেও যেন পাঠানের। তয় অফিসিয়ালি না, আন-অফিসিয়ালি। গুম আর নিখোঁজ সাহিত্য বেভহার কর।
’যো হুকুম খালা’।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং। ফজর পইড়া এই সময়ডায় তিনি মোরাকবায় বসেন। আল্লা-বিল্লা করেন আর চোখের পানি নাকের পানি এক কইর্যা কান্দা কাটি করেন। এই সময় ফোন ধরার উপাই নাই, তাই কম্পমান ফোনডা ইগনোর করার চেষ্টা করলেন। পরমুহূর্তে লাল ফোনডা বাইজ্যা উঠল। এইবার ভয় পাইলেন এবং মোরাকাবায় সমাপ্তি টানিয়া ঐ দিকে আগাইয়া গেলেন।
তিনি আর কেহ নহেন, সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি, দেশটার চীফমন্ত্রী, সর্বজনাবা খাইসিনা বিগম। চোখ কানের পাওয়ার কিছুডা কমলেও মগজের পাওয়ার উনার খুবৌ শার্প। কারে থুইয়া কারে ধরতে হইব এই সাহিত্যে উনি এখন নোবেলের দাবিদার। মোরাকাবার কান্নাকাটিডা আজকে এ লাইনেই নিবেদন করতেছিলেন। ভয় আর বিরক্তিতে লাল ফোনডার দিকে আগাইয়া গেলেন।
’গুড ইভিনিং ম্যাডাম ইন-ল’
এমন একটা সম্বোধন শুইন্যা শীরদাড়া শক্ত হইয়া গেল।
’ইহুদির বাচ্চা ইহুদী কোনদিনও আর জাতে আইবনা। সুযোগ পাইলে লেদার মত তোমারেও খাইমু আমি, কতা দিলাম’ রাগে দুঃখে বিড়বিড় করতে লাগলেন।
’ইয়েস ইয়েস কিরিসটিনা, হোয়াট কেন আই ডু ফর ইউ? এনি ফাইট? ইজ ইট ডিরিনকিং প্রোবলেম এগেইন?’
’নো নো ম্যাডাম ইন-ল, নো প্রোব্লেম, জাষ্ট ওয়ান্ট টু টক টু মাই হাজব্যান্ড। প্লীজ পুট হিম থ্রু’
’আবোল তাবোল কও কি? থুক্কু, আই মিন ওয়াট আর ইউ টকিং এবাউট? হেয় তো আম্রিকায়, নো ওয়ে হি কেন টক ফঅরম বাংলাদেশ’
’নো নো, হি ইজ ইন বাংলাদেশ। ফিউ আওয়ারস এগো কলড মি ফ্রম এয়ারপোর্ট। হি ইজ ইন এ সারপ্রাইজ মিশন। ইন ডিসগাইস, উইথ ফেইক বিয়ার্ড’।
’আর ইউ শিউর? মে-বি ইউ আর জোকিং?’
’নো আই এম নট জোকিং এট অল। নাউ, এনাফ অব কিডিং, পুট হিম থ্রু প্লীজ’।
চীফমন্ত্রি অবাক হইল পুত্রবধূর গলার আওয়াজে। কোথায় কি যেন একটা গোলমাল হইসে মনে কইরা বিনা নোটিশে ফোনডা রাইখ্যা দিল।
’দিনে দশবার একৌ পেচাল আর বাল্লাগেনা’
লালা ফোনডা আবারও কড় কড় শব্দে বাইজ্যা উঠল। এইবার গালাগালি করার মনস্থির কইরা ছো মাইরা ফোনডা হাতে নিল।
’ষ্টপ ভং ছং, টেল মি হাছা কতা। হোয়ার ইজ মাই সান?
’ম্যাডাম, আমি ঘরমন্ত্রী তাহেরা খানম। গুড নিউজ আছে, তাই বিয়ান বেলা ফোন করতাসি’।
’যা কওনের চালাইয়া কও, মনডা বালা নাই’
’আরে যেই খবরডা দিমু তাতে মন বালা না হইয়া উপায় নাই’
’ভং চং বাদ দিয়া আসল খবর কও’
’উলফার এক নেতা ধরা পরসে এয়ারপোর্টে। মুখে ফেইক, মানে নকল দাড়ি। তাফালিং দিতাসিল।’
চোয়াল ষাইট গম্বুজ মসজিদের মত শক্ত হইয়া গেল চীফমন্ত্রীর। লগি-বৈঠার বায়তুল মোকারম যুদ্ধজয়ী নেত্রীর গলার আওয়াজ নেকড়ে বাঘের মত গর্জাইয়া উঠল।
’হেয় কই অহন? জলদি আমার কাছে পাঠাইয়া দেও’
’আরে কন কি? ঝামেলা আপনার দরবারে পাডানোর মতন নাদান আমরা নাকি! হেরে পাডাইয়া দিসি আসল জায়গায়। কালিগঙ্গার টেলকা পানিতে হেয় অহন রেষ্ট করতাসে।’ - খিক খিক কইরা হাইস্যা উঠল ঘরমন্ত্রী।
ভূমিকম্প শুরু হইল দেশে। সাথে সুনামি।
এক হপ্তা পরের কথা;
চীফমন্ত্রীর প্রবাসি পুত্র ’হত্যার’ দায়ে দেশের দেড় কুটি মানুষের নামে মামলা হইসে। পুলিশের ডরে লাখ লাখ মানুষ বার্মা পালানোর রাস্তা ধরসে। অনেকে আবার বঙ্গোপসাগরের দিকে রওয়ানা দিসে। এরা সবাই বিম্পি-জামাই গ্রুপের সমর্থক। পুলিশরে অর্ডার করা হইসে ’দাড়িওয়ালা দেখা মাত্র গেরেফতার কর’। জেলে আটক মুফতি মান্নানকে পুলিশি হাওলায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিজ্ঞ গোয়েন্দারা হত্যাকান্ডে জনাব টেরাক জিয়ার সম্পৃক্ততা খুইজা পাইছে।
নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও, রিয়াদ, আম্মান, জোহানসবার্গ, উওরমেরু, দক্ষিনমেরু সহ পৃথিবীর সর্বত্র চীফমন্ত্রীর সমর্থকরা ব্যাপক ভাংচুর শুরু করসে। ঐসব দেশের মানুষ প্রথমে বিস্ময়ে টাসকি খাইয়া গেসিল। ভাবসিল নতুন কোন ’মিশন ইমপসিবল’ ছবির সুটিং শুরু হইসে। পরে টম ক্রসকে খুজতে গিয়া তারা দেখল একদল রোগা ও গিরগিরা মানুষ একজন আরেক জনরে ধাওয়া করতাসে, সামনে যা পাইতাসে তাতে আগুন ধরাইতাসে।
পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সাধারণ পরিষদ বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিসে এবং এই লেখাডা যখন পড়তাসেন বিশ্ব নেতারা নিউ ইয়র্কে আসা শুরু করসে হবাই। চোখ কান খোলা রাইখেন সিদ্ধান্তের জন্যে।
গুরু জনের কথাঃ
'যতদিন ভবে
না হবে না হবে
তোমার অবস্থা আমার সম
ঈষৎ হাসিবে
বুঝে না বুঝিবে
যাতনা মম'