এক রাতে কোটিপতি বনতে চাইলে আপনাকে হয় জুয়া খেলতে হবে অথবা বড় ধরণের কোন অপকর্মের সাথে নিজকে জড়াতে হবে। স্টকমার্কেট অথবা ব্যবসায়িক লেনদেন হতেও কোটি টাকা আয় সম্ভব যদি তা হয় দিনের বেলা। কিন্তু প্রসঙ্গ যেহেতু এক রাতের, সংগত কারণে মাধ্যম দুটোকে বাদ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এসবের বাইরে গিয়ে সামান্য বেতনের চাকরী করেও যে এক রাতে কোটিপতি বনা যায় তার বিশ্ব রেকর্ড করলেন বাংলাদেশের জনৈক বিচারক। আসুন পরিচিত হই এই ভাগ্যবান বিচারকের সাথে এবং অভিনন্দন জানাই দেশের বিচার ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে।
কদিন আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামের এক আর্ন্তজাতিক সংস্থা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে দেশটার দুর্নীতি প্রতিযোগীতায় রানার আপ ঘোষনা করেছিল। যাদের জানা নেই তারা জেনে হয়ত খুশি হবেন চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা গেছে পুলিশের বাহিনীর ঘরে। বিজয়ের রেকর্ড ধরে রাখায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সমকক্ষ প্রতিযোগীর সন্ধান পেতে আমাদের বোধহয় হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে, হোক তা বিশ্ব মাঠে। তাই ২০১১ সালের বিজয় কাউকে অবাক করেনি। যা অবাক করছে তা হল বিচার বিভাগের কঠিন প্রতিদ্বন্ধিতা। পুলিশ মানেই চোর, এ সত্যটা বাংলাদেশের বেলায় পূব দিকে সূর্য্য উঠার মতই সার্বজনীন সত্য। রাস্তার ভাসমান পতিতাদের রোজগারেও ওরা অবৈধ ভাগ বসায়। কারও চরিত্র উদঘাটনে দ্বিতীয় কোন উদাহরণের প্রয়োজন হবে বলে মনে হয়না। এই চরিত্রের সাথে দেশের রাজনীতিবিদদের বিপদজনক মিল আছে বলেই এতদিন আমরা জেনে এসেছি। কিন্তু রাজনীতিবিদদের পিছনে ফেলে দেশের বিচারকরা যে এগিয়ে যাবেন তা ছিল অপ্রত্যাশিত ও অনেকটা নীরব বিপ্লবের মত। বিচারপতি আমিনুল ইসলাম সে সত্যটাই নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করলেন।
কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ জনাব আমিনুল ইসলামকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় আনা হয়েছিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে অবকাশকালীন বিচারকের দায়িত্ব পালনের জন্যে। উনি আসলেন, দেখলেন এবং জয় করে নিলেন। খণ্ডকালীন এ সুযোগ বিচারপতি আমিনুলের জন্যে খুলে দেয় ভাগ্য পরিবর্তনের নয়া দিগন্ত। বিচারকের চেয়ারে বসে বিচারক আমিনুল ৮, ১৯ ও ২৭ শে ডিসেম্বর ফৌজদারী বিবিধ মোকাদ্দমায় (জামিনের আবেদন) শুনানি পরিচালনা করেন। এই তিন দিনের শুনানিতে বিচারক ৮টি ভিন্ন হত্যা মামলার ৮ আসামীকে জামিন দেন। কেবল ২৭ শে ডিসেম্বর ধার্য করা ২২১ টি ফৌজদারী বিবিধ মোকাদ্দমায় ৭১ টি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন তিনি। এ নিয়ে পত্রিকায় কথা উঠে। সূত্র মতে খুনের মামলায় জামিনের পাশাপাশি ২০০ পিস ইয়াবা মামলায় জামিন দেয়া হলেও আটকে দেয়া হয় ৪০ পিস ইয়াবা ও ৪০ বোতল ফেন্সিডিল মামলার জামিন। ঐদিন রাত ২টা পর্যন্ত চেম্বারে ছিলেন বিচারক আমিনুল এবং জামিন অনিয়মের মাধ্যমে আয় করে নেন ১ কোটি টাকা। যারা প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে পারেনি কেবল তাদের জামিনের বেলায় গিলোটিন প্রয়োগ করেন ’মহামান্য’ এই বিচারক।
একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের ষোলকলা পূর্ণ হয় যখন এর বিচার ব্যবস্থা নাম লেখায় অসৎ রাজনীতির কাতারে। আমাদের অসৎ রাজনীতির বর্তমান কর্ণধার গন অনেকটা হাভাতের কায়দায় বিচারক নিয়োগ দিচ্ছেন বিভিন্ন আদালতে। এর আসল উদ্দেশ্য যে ক্ষমতাহীন বাস্তবতায় জেল হাজত হতে নিজদের রক্ষা করা তা বুঝতে এখন আর পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন হয়না। এসব এখন নেংটা সত্য, এবং এ সত্যের সাথে কম্প্রোমাইজ করেই আমরা নাগরিকত্বের বোঝা বহন করে চলছি।
মোবারকবাদ জানাচ্ছি বিচারক আমিনুল ইসলামের এই অবিস্মরনীয় সাফল্যে। নামের শেষে ইসলাম এবং এক রাতে এক কোটি! পার্ফেক্ট মেইড ইন বাংলাদেশ ক্রাইম।
http://www.amadershomoy.net/content/2012/01/02/news0661.php