বাংলায় একটা কথা আছে, ’অভাবে স্বভাব নষ্ট’। ৫৪ হাজার বর্গমাইল এলাকার ১৫ কোটি (নাকি ১৭?) মানুষ আমরা। অভাবটা এখানে ন্যাচারাল। স্বভাবের নিয়ামক শক্তি যদি অভাব হয় তাহলে আমাদের স্বভাব বৈধ ভাবেই নষ্ট। নষ্টের মুখায়ব দেখতে আজকাল আমাদের আর বাইরে যেতে হয়না, নষ্টই কড়া নাড়ে আমাদের দরজায়। ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক নষ্টকে আমরা বরণ করি এবং মেনে নেই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে। নষ্টের বলি হয়ে আমরা প্রাণ হারাচ্ছি। প্রাণ হারাচ্ছি মাঠে, ঘাটে, হাটে, রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে, সংসদ ভবনে, সীমান্তে। এক কথায় মৃত্যু আমাদের ডাল ভাত। আসল ডাল ভাতের নিশ্চয়তা জটিল হয়ে আসলেও মৃত্যু নামক ডাল ভাত আসল অর্থেই এখানে ডাল ভাত। এর পেছনে হয়ত লুকিয়ে আছে আজরাইল ও জল্লাদের অস্বাস্থ্যকর প্রণয়। প্রশ্ন উঠবে, আমরা যারা যদু, মধু, রাম, শ্যাম তাদের মত সবাই কি জল্লাদ আর আজরায়েলি প্রণয়ের শিকার? অনেকে দ্বিমত করবেন, কিন্তু আমি বলব, না মুক্ত নয়। নিরাপত্তার নিশ্চিদ্র দ্বীপ বানিয়ে যারা রাজার মত রাজত্ব করছেন এমনকি তারাও না। এই যেমন কদিন আগের কথিত সেনা অভ্যুত্থান। সেনাবাহিনী নামক বাংলাদেশি জল্লাদদের নির্মমতা কতটা ভয়াবহ তার প্রমাণ আমরা যদু মধুরা না বুঝলেও নিশ্চিদ্র দ্বীপের বাসিন্দা আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভাল বুঝেন। ছাউনির এসব জল্লাদের দল স্বার্থের দৌড়ে নিজেরাই আজরাইল বনে যায় এবং নির্বিচারে কেড়ে নেয় নারী, পুরুষ সহ নিরপরাধ শিশুদের জীবন। ইতিহাসের বিশাল একটা অধ্যায় লেখা আছে সেনা ছাউনির রক্তাক্ত কলমে। এবারের চেষ্টার উৎস, কারণ ও এর সম্ভাব্য সাফল্য/ব্যর্থতার পেছনে কারা জড়িত ছিল, কিংবা আদৌ ছিল কিনা তার বাস্তব চিত্র পেতে আমাদের হয়ত কটা বছর অপেক্ষা করতে হবে। জজ মিয়াদের জন্ম দিতে আমরা এন এক্সপার্ট হেডমাস্টার, অতীতে জন্ম দিয়েছি, এখন যে অক্ষম তেমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। কি হলে কি হতে পারত এ গবেষণায় না গিয়ে আসুন বাস্তবতাকে স্বাগত জানাই। বাস্তবতা হল, কথিত অভ্যুত্থান সন্তোষজনক মিলনের আগেই অপাত্রে ঝরে গেছে। কিন্তু উল্টোটাও হতে পারত। উর্দি ওয়ালা আজরাইলদের ১৯ গুষ্টি উদ্ধার করার পরই কেবল এমন একটা চিত্র পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি, মনে করুন আজরাইল আর জল্লাদের অবৈধ মিলন কেড়ে নিল আমদের প্রধানমন্ত্রীর জীবন। আসুন এমন একটা দিনের পরের দিনের কথা চিন্তা করি যেদিন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঠাই নেবেন ইতিহাসে। কি হবে আমাদের রাজনীতির? কে বসবে ক্ষমতার আসনে?
আমার মত অনেকের অপছন্দ হলেও আওয়ামী তথা ক্ষমতার রাজনীতিতে কি ঘটবে তা প্রেডিক্ট করতে ম্যাজিশিয়ান হওয়ার দরকার হবেনা। আশাকরি পাঠক নিজেও বুঝে গেছেন আমি কি এবং কার কথা বলতে চাচ্ছি। হ্যাঁ ক্ষমতার রাজনীতিতে উদয় হবে নতুন মুখের। ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি করতে গিয়ে বছরের পর যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন, রাজপথে মার খেয়েছেন, জেল হাজত খেটেছেন তাদের কেউ যে সরকার প্রধান বা দলীয় প্রধান হবেন না তা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি। দুটি পদের জন্যে দাবিদার অভাবে স্বভাব নষ্ট ১৫ কোটি স্বদেশি নয়, বরং দুধে ভাতের ৩ জন ভিনদেশি প্রবাসী। সমস্যাটা বোধহয় এখানেই। লেখাটা যখন লিখছি মার্কিন দেশে প্রেসিডেনশিয়াল পদে নমিনেশনের জন্যে রিপাবলিকান দলীয় প্রাইমারী চলছে। যাদের ধারণা নেই তাদের জন্যে খোলাসা করছি ব্যাপারটা। চার বছর পর পর মার্কিনিরা নির্বাচিত করে তাদের প্রেসিডেন্টকে। দুই দলীয় গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনী মোকাবেলার জন্যে প্রতিপক্ষ দল তাদের প্রার্থী নির্বাচিত করে অভ্যন্তরীন নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীই হবেন বিরোধী দলীয় প্রার্থী। যেহেতু হাসিনার অনুপস্থিতে ক্ষমতার আকাশে উদিত হবে তিন তারকা, তাই প্রশ্ন উঠবে কিভাবে সমাধান হবে এ সমীকরণের। এ যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের মত, পদ একটি (দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান হবেন একই ব্যক্তি) অথচ খেলোয়াড় ৩ জন। সমস্যার সমাধান নিয়ে নেপথ্যে নাটকের হয়ত অভাব হবেনা। দিন শেষে হয়ত তিন জনের কাছে গ্রহনযোগ্য কোন সমাধান বেরিয়ে আসবে যা আমরা যদু মধুরা জানতে পারব না। নেপথ্য নির্বাচনের স্বাদ হতে বঞ্চিত হওয়ার আগেই আসুন আমরা নিজেরা প্রাইমারী করে জেনে নেই কে হবেন আমাদের পরিবর্তী প্রধানমন্ত্রী। ভোট দিন আপনার পছন্দের প্রার্থীকে। প্রার্থীরা হলেনঃ
ব্যালট নং ১ - প্রার্থী জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়। স্থায়ী ঠিকানাঃ ভার্জিনিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি, বিবাহ সূত্রে মার্কিনি
ব্যালট নং ২ - প্রার্থী জনাবা শেখ রেহানা। স্থায়ী ঠিকানাঃ লন্ডন, যুক্তরাজ্য। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি, অভিবাসন সূত্রে বৃটিশ।
ব্যালট নং ৩ - প্রার্থী জনাবা সায়মা হোসেন পুতুল। স্থায়ী ঠিকানাঃ টরেন্টো, কানাডা। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি, অভিবাসন সূত্রে কানাডিয়ান।
ব্যালট নং ৪ - প্রার্থী জনাব ছ্যারছ্যার আলী। স্থায়ী ঠিকানাঃ ছাগলনাইয়্যা, নোয়াখালী। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি, অভাবে স্বভাব নষ্ট।
ভার্চুয়াল ব্যালট পেপারে ’ব্যালট নং ......’ লিখলেই আপনার ভোট বৈধ হবে।
শুভ কামনায়।