বন্যেরা বনে সুন্দরের মত আকাশের মেঘ বোধহয় আকাশেই মানায়। একে মাটিতে নামিয়ে অপবিত্র করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। আকাশ এমনিতেই বড়, উদার ও পবিত্র। খন্ড খন্ড মেঘ রাশির নিথর অথবা অবাধ বিচরণে সে কখনোই বাধা হয়ে দাড়ায় না, বরং বাহু বাড়িয়ে আগলে রাখে। বাষ্পের নিষ্পাপ জরায়ুতে জন্ম নেয়া আকাশের মেঘকে মাটিতে নামিয়ে রাজনীতির দারুচিনি দ্বীপে লালন করলে তা আর মেঘ থাকে না, রূপান্তরিত হয় বিষবাষ্পে। এসব বিষবাষ্পের শেষ যাত্রা কোন গলিতে তা আবিস্কার করতে বেশিদূর না গিয়ে এককালের মেঘ আর চলমান রাজনীতির সাক্ষাৎ যম দূতদের চাঞ্চল্যকর কাহিনী ঘাটলেই যথেষ্ট হবে। এসব নাটক আমরা অনেক দেখেছি। দেখেছি, শিখেছি এবং বীতশ্রদ্ধ হয়েছি। এক সময় দূরের দেশ মার্কিন মুলুকে ইতালিয়ান কোচানষ্ট্রারাও উপহার দিয়েছিল এসব নাটক। রাতের গুপ্তঘাতকের দল দিনের আলোতে মন্ত্রবলে বনে যেত রক্ষাকর্তা। তাই সদ্য এতিম ৫ বছরের মেঘের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর চেহারায় আমি দেখি কোচানস্ত্রার প্রতিচ্ছবি। ওরা তাই করতো। রাতের আধারে খুন করে দিনের আলোয় বাড়িয়ে দিত সহযোগিতার হাত। এতিম শিশু আর বিধবাদের জন্যে ব্যবস্থা করত বেচে থাকার স্থায়ী সমাধান।
পুরানো ঢাকার রাসায়নিক বিস্ফোরণ অনেকেই পথে বসিয়েছিল। তাদেরই তিন জনকে প্রধানমন্ত্রী কন্যা বানিয়ে মা-বাবার লাশ কংকাল হওয়ার আগে বসিয়েছিলেন বিয়ের পিঁড়িতে। কথা ছিল আজীবন দায়িত্ব নেবেন, সুখে দুখে পাশে থাকবেন। রাজনৈতিক আবেগ থিতিয়ে আসতেই ১০ টাকা কেজি চালের মতই তিনি ভুলে গেলেন তাদের কথা। দত্তক মেয়েদের মুখ দেখা দুরে থাক, ওরা নিজেরা দেখা করতে চাইলে এখন কুকুর বিড়ালের মত বিদায় করা হয়।
একজন প্রধানমন্ত্রীর কাজ দেশ চালানো, কোটি কোটি মেঘের জন্যে ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা, তাদের পিতা-মাতার জন্যে স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যু নিশ্চয়তা দেয়া। নিজেদের ব্যর্থতার ফসল একটা দুটা মেঘ দত্তক নিয়ে চমক দেখানোর স্ট্যান্টবাজি আজকের দুনিয়ায় অচল। বাংলাদেশে প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টায় অসংখ্য মেঘের জন্ম হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কজনকে দত্তক নিয়ে নিজদের ব্যর্থতার উপর শক্ত আস্তরণ দিতে সক্ষম হবেন?