স্থায়ী করার মত ছ্যারছ্যার আলীদের কোন পরিচয় নেই। নেই বর্ণনা করার মত আকার আকৃতি অথবা চিঠি পাঠাবার মত ঠিকানা। রাজনীতি নামক গুপ্তধন আবিস্কারের ছিছিম ফাঁক যাদের জানা আছে তাদের সবাই কোন না কোন ভাবে একজন ছ্যারছ্যার। এরা একাধারে রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, জনপ্রতিনিধি; পাশাপাশি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, মোক্তার, শিক্ষক, বিচারপতি সহ সৈনিক অথবা সচিবালয়ের শক্তিশালী আমলা। বাংলাদেশের ইতিহাস, ভুগোল, পৌরণীতি, সৌরণীতি, অর্থবিদ্যা, সমাজবিদ্যা সহ সমাজের সর্ব বিষয়ে, সর্বস্তরে ও সর্বতলায় এদের অবাধ রাজত্ব। দেশটার ভৌগলিক স্বাধীনতা যাদের ভাগ্য পরিবর্তনে যুগান্তরী ভুমিকা রাখছে তাদের অন্যতম এই ছ্যারছ্যারের দল। নূহ (আঃ) প্লাবনের মত গোটা বাংলাদেশ এখন ছ্যারছ্যারদের প্লাবনে প্লাবিত। ছ্যারছ্যার বিপর্যয়ে বিপর্যস্তদের তালিকা প্রকাশ করতে গেলে এর দৈর্ঘ্য টেকনাফ-তেতুলিয়া দৈর্ঘ্যকেও হার মানাবে, এমনটাই আজকের বাস্তবতা, বাংলাদেশি বাস্তবতা।
বাস্তবের মত গল্পের ছ্যারছ্যারেরও স্থায়ী কোন পরিচয় নেই। ছাগলনাইয়্যা হতে শুরু হলেও গল্পের গতি প্রকৃতি তাকে নিয়ে যাবে বাংলাদেশের সর্বত্র। কখনো আসল ন্যাশনালিষ্ট পার্টির সদস্য হয়ে নিউ ইয়র্ক যাত্রা, কখনো আমজনতা লীগের এমপি বনে ইলশা হাজী হত্যা, সমাজের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা অপরাধ চক্রের হোতা হয়ে সমসাময়িক ঘটনাবলির নাম ভূমিকায় অভিনয় করবে আমার ছ্যারছ্যার। এ পর্বে ছ্যারছ্যারের যাত্রা ..... উচ্চ আদালত।
মনটা আজ ভাল নেই ছ্যারছ্যার আলীর। কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে তার। চেম্বারে সর্বক্ষণ এসি চলছে, অথচ দরদর করে ঘামছে সে। তিন দিনে দশ বার রক্তচাপ মাপিয়েও নিশ্চিত হতে পারেনি কেন এমনটা হচ্ছে। ডাক্তার বলছে বিশ্রামের প্রয়োজন। চাকরির বয়স মাত্র আট মাস, এ সময়ে এমন কোন সে কাজ করেনি যার জন্যে বিশ্রামে যেতে হবে। তাছাড়া অসময়ের বিশ্রাম তার শারীরিক প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলবে। এসব ভাবতে ভাবতে বেলা গড়িয়ে কখন ১২টা বেজে গেছে খেয়াল করেনি সে। আজ আর কাজে মন বসবেনা, তাই বাসায় ফিরে দুপুরের খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তৈরী হবে এমন সময় চাপরাশি এসে জানিয়ে গেল বাইরে এটর্নী জেনারেল অপেক্ষা করছেন। এই একটা লোককে খুবই অপছন্দ ছ্যারছ্যারের। আদব কায়দা বলতে কিছু নেই, বিনা নোটিশে হুটহাট করে ঢুকে পরে চেম্বারে। মুখের ভাষাও মার্জিত নয়। মাঝে মধ্যে তুই তুকারী করতেও দ্বিধা করেনা। সহসাই আর ঘরে ফেরা হচ্ছেনা, ভাবতে মনটা তিতা হয়ে গেল ছ্যারছ্যারের। ’হুম, আইতে কও হেরে’।
- সেলাম বিচারক স্যার, তা আছেন কিমুন?
- চারদিকে এত কাম বালা থাহিই বা কেমনে? আপনেরা যিমুন রাখছেন।
- তা বালা না লাগলে ছাগলনাইয়া চইল্যা গেলেই পারেন। আটকাইতাছে কেডা?
- গরুর দোয়ায় শকুন মরে না মিয়া, কথাবার্তা সামলাইয়া কইয়েন।
- হুনেন বিচারক মিয়া, আপনের মত বিচারকদের সকালে জন্ম দিয়া রাইতে ইন্নালিল্লাহ পড়ি। ভয় আমারে দেহাইয়েন না। উপরওয়ালা পাঠাইছে বইল্যা আইছি, নাইলে পুছতেও আইতাম না।
- সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হইছি বইলা ভাইবেন না সবকিছু সারেন্ডার করছি। দরকার হইলে আবার বাইর করমু, লাশ ফেলামু। রাগ ধরাইয়েন না মিষ্টার রহমান, ফল বালা অইব না। কামের কথা কন। নষ্ট করার মত হাতে বিশেষ সময় নাই।
- আটটা মাস ধইরা বইয়া বইয়া খাইছেন। অন্য বিচারক গো লগে সুর মেলান নাই, আমজনতা লীগের স্বার্থে কোন রুল জারী করেন নাই। যেই আশায় আপনেরে ছাগলনাইয়া হতে ধইরা আনছিল তার ফল না পাইয়া নেত্রী এখন নাখোস। তাই আমারে পাঠাইছেন আপনের আমলনামায় পান সুপারি দিতে।
এই প্রথম ভয় ফুটে উঠল ছ্যারছ্যার আলীর চেহারায়। নেত্রীর নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে কখন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছে খেয়াল করেনি।
- কন কি, কি এমন করলাম যাতে তিনি এত অখুশি হইলেন?
- কি করলেন হেইডা কোন সমস্যা না, কি করেন নাই হেইডাই হইল আসল সমস্যা। আছিলেন ছাগলনাইয়া আমজনতা লীগের সহকারী কোষাধক্ষ্য। নকল কইরা তৃতীয় শ্রেনীতে ওকালতি পাশ করছিলেন। ১০ টাকায় ডিভোর্স কেস চালাইতেন। এমন একজন অযোগ্য অপদার্থ আইনের মানুষরে সুপ্রীম কোর্টের বিচারক বানাইছেন কি মাইয়া বিয়া দেওনের লাইগ্যা? চাকরিডা রাখতে চাইলে চোখ কান খোলা রাইখেন। ইশারা দিয়া গেলাম। বুঝতে ব্যর্থ হইলে চাটিবাটি গুল কইরেন।
ঝড়ো গতিতে বেরিয়ে গেল এটর্নি জেনারেল শরিফ রহমান। পেছন হতে স্তব্দ মূর্তির মত তাকিয়ে দেখল সে যাওয়া। ’না, আজ তাকে কিছু একটা করতেই হবে’, ভাবল মনে মনে। চাপরাশিকে দরজা বন্ধ করার আদেশ দিয়ে বসে গেল চেয়ারে।
ছ্যারছ্যার আলীর জারী করা রুলটা পড়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরল এটর্নি জেনারেল। অন্যদিকে নেত্রী খাইসিনা বেগমের চোখ মুখে বয়ে গেল প্রশান্তির মৃদু প্রলেপ। ব্যক্তিগত সহকারীকে ডেকে ছ্যারছ্যারের মত আরও কয়েক ডজন উকিল খুজে বের করার নির্দেশ দিলেন তিনি। শেষ বাক্যটা অনেকটা ফিসফিস করে বললেন... বাড়ি গোপালগঞ্জ আর জাতে হিন্দু হলে ভাল হয়...।
ছ্যারছ্যার আলীর জারি করা রুলঃ
আমরা লক্ষ্য করেছি, দুই সাংবাদিকের হত্যার ঘটনা তদন্তে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এ তদন্তে কোন ধরনের ভুল অথবা অবহেলা আমাদের চোখে এখনো পড়েনি। একাধিক তদন্ত সংস্থা এ ঘটনার সত্য বের করে আনার জন্য কাজ করছে। সরকারের প্রধান ঘটনাটি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। এ বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল ও শাস্তিযোগ্য আপরাধ।