পাবলিক ফোরামে রুচিহীন কথাবার্তার জন্যে যাকে আদর্শ হিসাবে নেয়া যায় তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী। খেতাবের আগে পিছে যারা মাননীয়া বলতে অজ্ঞান তাদের যথাযত সন্মান দেখিয়েই বলছি, মেধা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর যোগ্যতাহীন কাউকে যদি গোয়ালঘর পরিষ্কারের স্থলে কর্পোরেট ব্যবসার চীফ পদে বসানো হয় সে ব্যবসা পথে বসতে বাধ্য। রাজনৈতিক ক্ষমতাও তেমনি একটা পদ। সরকারের প্রধান নির্বাহী হয়ে গত ৩টা বছর যা বলে গেছেন তা প্রধানমন্ত্রী দুরে থাক কোন সূস্থ মানুষের ভাষা হতে পারেনা। দেশের ১৫ কোটি মানুষের সবাইকে যদি তিনি মানসিক রুগী ভেবে থাকেন তাহলে হয়ত অন্য কথা। হীরক রাজ্যে প্রজাদের মত রাজাকেও হতে হয় মগজহীন গরু। এমন রাজ্যে মূর্খ রাজা যা বলেন তা কেবল ইউনিভার্সাল ট্রুথই নয়, বরং লিখিত আইন। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কথিত তৃণমূল নেতাদের সবাই যদি হীরক রাজ্যের গরু হয়ে থাকে তাহলে বলার কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে প্রধনমন্ত্রী যদি রাখালের ভূমিকায় নামেন গরু স্বার্থের জন্যে হলেও আমাদের সমর্থন জানানো উচিৎ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পৃথিবীটা আগের মত ছোট নেই যা গোয়াল ঘর হিসাবে ব্যবহার করা যাবে, প্রযুক্তিও থেমে নেই হীরক রাজ্যের রাজার বগলে, আর আমরাও চার পা ওয়ালা গরু নই। প্রধানমন্ত্রী দশ বছর আগে কোথায় কি বলেছিলেন তা জানতে ২০ হাজার লোকের ২২ বছরের তাজমহল ভ্রমণ করতে হবেনা। উচ্চ আদালতের আর্কাইভ ঘাটলেই হদিস মিলবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ সাংস্কৃতির।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা সমাবেশে একই প্রধানমন্ত্রী কথা বললেন প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদ্দের মুখ নিয়ে। সমালোচনা করলেন সাংসদদের নোংরা আচরনের এবং ধোলাই করলেন ব্যবহূত ভাষার। http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-03-31/news/236842 গণতান্ত্রিক দুনিয়ার অনেক দেশের সংসদেই ভাষা সমস্যা আছে, আছে হাতাহাতির ইতিহাস। সেদিন বিএনপির জনৈকা সাংসদ সংসদে দাড়িয়ে যা বললেন তা কোন মানদণ্ডেই রাজনীতির ভাষা হতে পারেনা। এ নিয়ে সার্বজনীন সমালোচনারও অভাব হয়নি। কিন্তু যাদের মুখ হতে সমালোচনা উচ্চারিত হয়েছিল তাদের সবারই জানা ছিল এসব কুৎসিত ভাষার উৎস কে এবং কোথায়। সামরিক বাহিনীতে কর্মরত পারিবারিক সদস্যকে দিয়ে খালেদা জিয়ার শয়ণকক্ষে পর্ণো স্থাপনের আসল কাহিনী জানতে আমাদের হয়ত অপেক্ষা করতে হবে, কিন্তু বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরিকে রাষ্ট্রপতি বানানোর সূত্রে উনি যে মন্তব্য করেছিলেন তা জাতির মেমোরি হতে ডিলিট করতে নতুন কোন প্রযুক্তি আবিস্কার করতে হবে। ‘রাষ্ট্রপতি না অন্য পতি‘? প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে এসব ভাষা যদি গ্রহনযোগ্য হয় তাহলে উনার উচিৎ হবে জাতির জন্যে ভদ্রতার সংজ্ঞাও নতুন করে লেখার। চাইলে তিনি তা করতে পারেন, কারণ হাতে আছে নির্বাচনী ম্যান্ডেট আর আদালতে আছে আবুলীয় বিচারক। ‘উচ্চমার্গের সুশীলরা উনাকে কোলে করে ক্ষমতায় বসাবেন না‘ - প্রতিপক্ষের নেত্রীকে নিয়ে এসব তৃতীয় শ্রেনীর কথার সূত্রপাত খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ হতে। এ নিয়ে বিরোধী দলের মহিলা এমপিরা যদি ত্যানা পেঁচায় তাতে প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপটা কোথায় বুঝতে কিছুটা কষ্ট হয়। প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ হবে এ নিয়ে গর্ব করা, কারণ রাজনৈতিক নোংরামির অনেক কিছুর আবিষ্কারক তিনি নিজে। চা বাগানে জন্ম আর নানা-নানীর পরিচয় নিয়ে তিনি যেসব কুৎসিত ইংগিত দিয়েছেন তা দেশীয় রাজনীতির নতুন উপাদান। এসব ’উপাদেয়’ অখাদ্য প্রতিপক্ষ দল গোগ্রাসে গিলবে তা কি প্রধানমন্ত্রীর জানা ছিলনা? তিনি কি ভুলে গেছেন প্রতিপক্ষের ফরিদা-আকলিমার দল একই রাজনীতির ’যোগ্য’ খেলোয়াড়? ১৫ই আগষ্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন নিয়ে এদেশের কোটি কোটি মানুষ সংশয় প্রকাশের পাশাপাশি প্রতিবাদ করেছিল এবং সামনেও হয়ত করে যাবে। প্রধানমন্ত্রী যদি ভেবে থাকেন একই সুরে চা বাগানে জন্ম আর নানা-নানীর পরিচয় নিয়েও জনগণ উনার পাশে দাড়াবে তাহলে মারাত্মক ভুল করবেন। ১৫ কোট মানুষের সবাইকে হানিফ ভেবে থাকলে এর খেসারত কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার উত্তর পেতে সবাইকে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর হচ্ছে, এ মুহূর্তে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে গোপালগঞ্জের আসন ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অন্য কোন আসনে জেতার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। এসব জেনেই কি তিনি উন্মাদনায় নেমেছেন?
কংগ্রেস-আওয়ামী যৌথ প্রযোজনার ফসল ’দেশিয় নির্বাচনে পাকিস্তানি টাকা’ হালে পানি পাচ্ছেনা। অথচ প্রধানমন্ত্রী প্রলাপ বাকার মত বকে যাচ্ছেন এ গল্প। যাদের বরাত সূত্রে এ অভিযোগ তারা নিজেরাই অস্বীকার করছে এবং দেশীয় পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলোও মিহি গলায় ক্ষমা চাইছে নিজেদের পরিবেশিত ভুল তথ্যের জন্যে। কিন্তু যাকে থামানো যাচ্ছেনা তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী। মিডিয়া ব্যবহারের অবাধ সুযোগ নিয়ে তিনি প্রতিদিন প্রচার করছেন এ মিথ্যাচার। এ যেন ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মোহম্মদ বখতিয়ার খিলজির লম্বা হাত দিয়ে শত্রু নিধনের মত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হবে গায়ের জোরে কি যেন একটা প্রতিষ্ঠা অথবা লুকাতে চাইছেন তিনি। পাকিস্তানি টাকা নিয়ে শোরগোলের মাঝে একটা খবর প্রায় শিরোনামহীন খবর হয়ে তলিয়ে গেছে তথ্য সমুদ্রে। তা হল, সরকার কর্তৃক টিপাইমুখী বাধের বৈধতা দেয়া। খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রীর দুই খাস উপদেষ্টা ভারত সরকারের মেহমান হয়ে বাংলাদেশের মরণফাঁদ এ বাধের 'নো অবজেকশন সার্টিফিকেট' দিয়ে এসেছেন। এ খবর যাতে রাজনীতির মাঠ গরম না করে সে জন্যেই নাকি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জরায়ুতে জন্ম নিয়েছিল পাকিস্তানি অর্থায়ন পর্ব। বলার অপেক্ষা রাখে না এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার উপদেষ্টাদের নেই, যা দেয়া হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীর একক ও নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলায় একটা কথা আছে, চোরের মার বড় গলা। বিরোধী দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর লাগাতার বিষোদগার চোরের মার বড় গলারই যেন প্রতিধ্বনী।
দেশের সব কিছুতে এখন লেজে গোবরে অবস্থা। মানুষ মরছে অনেকটা পশুর মত। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও আকাশচুম্বি দ্রব্যমূল্য নিয়ে জনগণের নাভিশ্বাস এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। অশ্লীল কথাবার্তা দিয়ে এসব রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা নতুন চেষ্টা নয়, অতীতেও এসব চর্চা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একই পথে হাঁটছেন এবং আশা করছেন জনসমর্থন। কিন্তু হায়, সমর্থন যে বিপরীত মেরুর যাত্রী হয়ে দিগন্ত রেখায় মিলিয়ে যাচ্ছে উনার কি জানা আছে? আর বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যার মুখ খিস্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপের জবাবে বলব, আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন ...