খুউব কি খারাপ লাগছে? খুউব কি ব্যথিত হচ্ছেন? দেখতে কষ্ট হচ্ছে? মান+হুস যোগফলের মানুষ হয়ে থাকলে হওয়া স্বাভাবিক, লাগাটা জরুরী। এমনটাই যদি আপনার স্টেট অব মাইন্ড, অনুরোধ করব ব্যথা উপশমের দু চারটা ট্যাবলেট গিলে নিতে। কারণ এরপর আমি যা বলব তাতে সে ব্যথা সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা থাকবে। বিশেষ করে আপনাকে যদি মাননীয়া, মহামাননীয় নেতা-নেত্রীদের চরণে নিয়মিত পুজা দিতে হয়। উন্নত দুনিয়ায় শিকার একটি স্বীকৃত হবি। এর পেছনে উচ্চবিত্ত হতে শুরু করে নিম্নবিত্তরা পর্যন্ত অর্থ ব্যয় করতে দ্বিধা করেনা। সরকারী ভাবেও সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে এ হবির লালন পালন ও প্রসার নিশ্চিত করা হয়। বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর আর নদী-নালায় আইন করে বৈধ করা হয় পশু পাখি আর মাছ নিধন। এ কাজে কেউ ব্যবহার করে আগ্নেয়াস্ত্র কেউবা বেছে নেয় সনাতনী মাধ্যম। দিনান্তে সবাই ঘরে ফেরে নির্মল আনন্দ নিয়ে। বাংলাদেশে শিকারের মাঠ থাকলেও নেই পরিবেশ। হয়ত সে কারণেই সমাজের প্রিভিলেজড অংশ সন্ধান করে নতুন মাঠের, বিকল্প পরিবেশের। সে বিকল্পের অপর নাম ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার ও বন্ধুকযুদ্ধ।
পুলিশের চাকরী পেতে হলে আমাদের কত টাকা খরচ করতে হয় অথবা আদৌ করতে হয় কিনা তা কমবেশি সবার জানা। সিপাই হতে শুরু করে ইনসপেক্টর জেনারেল পদের একটা দর আছে, যা বেচা-কেনা হয় ক্ষমতা নামক পতিতালয়ে। অপরাধের জরায়ুতে জন্ম নেয়া পুলিশ বাহিনী দেশের একক বাহিনী নয় যা নিয়ে আমরা ’গর্ব’ করতে পারি, এ কাজে সামনে হতে নেত্রীত্ব দিচ্ছে দেশের সেনাবাহিনী। লেনা-দেনার বাণিজ্য এখন আর লুকোচুরির সাবজেক্ট নয়, বরং তা ওয়াইড ওপেন সাবজেক্ট অব স্টেইটস ডিসিপ্লিন । স্বাধীনতার পর পর সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত একটা কার্টুন ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল তার কনটেন্টের জন্যে। কার্টুনের সারমর্মটা এ রকমঃ সদ্য ভর্তি হওয়া একজন তরুণ ঢুকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চার বছর পর একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে বেরিয়ে আসছে চার পাওয়ালা গরু হিসাবে। আমাদের সেনাবাহিনীর গর্বিত সৈনিকদের অবস্থাও একই যখন তারা চাকরি নিয়ে রওয়ানা দেয় সীমান্তে। সেনা সদস্যদের শিকারের মাঠ প্রসারিত করতে চার দলীয় জোট সৃষ্টি করেছিল RAB নামক গুপ্ত সংস্থা। দুর্নীতি আর অপরাধের মহাসমুদ্রে আকণ্ঠ নিমজ্জিত দেশের পুলিশ আর সেনাবাহিনীর হাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব তুলে দিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ব্যস্ত থাকছে বঙ্গবন্ধু অথবা শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে। এ ফাঁকে শিকারের মাঠ খোলা পেয়ে ওরা শিকার করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না এ শিকার পশু-পাখি অথবা মৎস শিকার নয়, এ শিকার পায়ের উপর শরীর, শরীরের উপর মাথা ওয়ালা মানুষ। ওরা শিকার করছে হাটে মাঠে ঘাটে। অন্ধকার নামলেই ওরা মাঠে নামে এবং তুলে নেয় পছন্দের মানুষকে। খুব কাছ হতে গুলি চালায় এবং পশু হত্যার মত মানুষ হত্যা করে ওরা উল্লাস করে এবং পাশাপাশি অবদান রাখে গণতান্ত্রিক 'সুশাসনে'।
হরেক রকম চোরের মেলা বাংলাদেশে। কেউ গরুর হাটে গরু চোর, কেউ পরিবহনের পকেট মার, কেউবা আবার যা পাই তা খাই জাতীয় চোর। এসব চোরদের গায়ে দুর্গন্ধ, বগলে অপরিস্কার লোম আর পরনে ইস্ত্রিবিহীন বস্ত্র। ওদের চোখে দেখা যায়, হাত বাড়ালে ছোয়া যায় এবং চাইলে যখন তখন ব্যক্তি ও সরকারী আইনের আওতায় আনা যায়। এক কথায় ওরা আনওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। চোখের সামনে একদল ক্রিমিনাল অরাজকতা ও অশান্তি সৃষ্টি করবে আর আমাদের তা হজম করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চয় এ জন্যে ক্ষমতায় পাঠানো হয়না? আফটার অল জনগণের দেখভাল করার দায়িত্বটা যে তাদেরই! সে দায়িত্ব ’সাহসিকতার’ সাথে পালনের জন্যেই বোধহয় এসব চোর, ডাকাতদের নেয়া হয় বধ্যভূমিতে, আর রাতের অন্ধকারে চোরের মত হত্যা করে ছড়িয়ে দেয় ভূয়া, মিথ্যা আর বানোয়াট কাহিনী। বাংলাদেশে কে বেশি বড় চোর, একজন পুলিশ না নয়ারহাট রুটের একজন পকেটমার? কে বেশি সন্ত্রাসী, রাজনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠা একজন বিপদগামী যুবক, না অস্ত্র হাতে একজন পুলিশ, RAB অথবা সেনাবাহিনী? এখানে কে কাকে মারা উচিৎ ছিল, পুলিশ কর্তৃক একজন ছিনতাইকারীকে, না জনতা কর্তৃক পতিতার আঁচল ছিনতাইকারী একজন পুলিশকে?
ডাকাতের ভয়ে দেশ এখন সন্ত্রস্ত। শহর বন্দর ছাড়াও এ ভয় ছড়িয়ে পরছে গ্রামে গঞ্জে। আইনের প্রতি মানুষের বিশ্বাষ উঠে গেছে ডাকাতদের লম্বা হাতের কারণে। ওরা আগে আসতো রাতের আধারে, এখন আলো আর কোন সমস্যা নয়। ডাকাতি ব্যবসা বাংলাদেশে এখন মহামারী। আর এ মহামারী নিধনের টিকা হিসাবে সরকার আবিস্কার করেছে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ এবং এনকাউন্টারের মত মহৌষধ। ডাকাতির একটা আভিধানিক সংজ্ঞা আছে, যার সারমর্ম করলে দাড়াবে; জোর করে অন্যের অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া। ওরা নির্জন জায়গায় ঠেক দেয়, সুবিধা মত বাস আটকায়, ছলেবলে বাসাবাড়িতে ঢুকে ছিনিয়ে নেয় একজনের সাড়া জীবনের সম্পদ। ওরা ডাকাত। ওদের বগলে লোম আর গায়ে গন্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে এরাই কি একমাত্র ডাকাত? পরণে ফিটফাট বস্ত্র আর গায়ে মৌ মৌ করা সুগন্ধী ওয়ালা ডাকাতরাও কি বাংলাদেশে বাস করেনা? এদের হয়ত চোখে দেখা যায়না, হাত দিয়ে ছোয়া যায়না, তাই বলে কি এদের উপস্থিতি আমরা উপলদ্ধি করিনা? কে বেশি বড় ডাকাত, একজন সুমন, না নেতা নাজমুল হুদা? কত আয় হয় রাস্তার ডাকাতি হতে, ১০ হাজার? ২০ হাজার? ১ লাখ? পুলিশি চাদা, রাজনৈতিক চাদা, আরও হরেক রকম চাদার অলিগলি পার হয়ে ডাকাতির অংকটা যখন সুমন আর আলাউদ্দিনের ঘরে পৌছায় পারে কি তারা সন্তানদের বিলাতে পাঠাতে? ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা পারেন তার দুই মেয়েকে মাসে মাথাপিছু তিন লাখ টাকা খরচ করে বিলাতে পড়াতে। কোথা হতে আসে এ অর্থ, রাষ্ট্রীয় ডাকাতি হতে নয় কি? ফরিদপুরের ছাত্রনেতা জামাল মিয়া বিয়ের আসরে হাজির হলেন আসমানে দুটি হেলিকপ্টার উড়িয়ে। কোটি কোটি টাকার রাজকীয় বিয়েতে হাতি সাজল, ঘোড়া নাচল, সোনা-দানায় ছেয়ে গেল গোটা শহর। কোত্থেকে আসল এ অর্থ, জাদুমন্ত্রে? নাকি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের মাধ্যম? প্রাসঙ্গিক ভাবেই জানতে ইচ্ছে করে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, মেয়ে, বোন, বোনের সন্তান, বিরোধী দলীয় নেত্রীর দুই ছেলে, কোন সোনার কাঠি রূপার কাঠির ছোঁয়ায় আমেরিকা আর বিলাতে রাজকীয় জীবন কাটাচ্ছেন?
আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপস্থিতি সত্যেও ক্রসফায়ারই যদি হয় ডাকাত নিধনের একমাত্র অস্ত্র, তাহলে রাস্তার এসব ডাকাত না মেরে গায়ে সুগন্ধী আর বগলের লোম পরিস্কার ওয়ালা ডাকাতদের আগে গিলোটিনে পাঠানো হোক। কারণ সুমন আর আলাউদ্দিনরা জন্ম নেয় তাদেরই জরায়ুতে। এক কথায় রাষ্ট্রীয় ডাকাতির বাই-প্রোডাক্ট।
একজন ফেলানির মৃত্যু নিয়ে আমরা জোরালো প্রতিবাদ করেছি। হত্যাকারী আমাদের প্রতিবেশি দেশের উর্দিওয়ালা বলেই আমরা ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পরেছি। ফেলানিকে কাঁটাতারে ঝুলানো আর সুমন-আলাউদ্দিনদের মেরে কুকুরের মত ডোবা নর্দমায় ফেলে রাখার ভেতর পার্থক্যটা কোথায়? ফেলানিদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের অভিযোগও কি একই ছিলনা? রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে বিচারহীন মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে যায়না। দেশ এ জন্যে স্বাধীন হয়নি। ওপরতলার চোরের দল চুরি করে আমাদের পুজা অর্চণা পাবে, আর নীচ তলার ছিচকে চোর ডাকাতদের হত্যা করে আমরা বিজয় উল্লাস করবো, এর নাম গণতন্ত্র হতে পারেনা। দেশের বড় চোর পুলিশ, বড় ডাকাত রাজনীতিবিদ, আমলা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ সমাজের বিত্তশালীদের অনেকে। দেশের বিচার ব্যবস্থা যদি এতই অক্ষম তাহলে ক্রসফায়ারকে সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেয়া হোক এবং নির্বাসিত করা হোক গৃহপালিত দলীয় বিচারকদের। নাজমুল হুদা এবং জামাল মিয়াদের বধ্যভূমিতে নেয়ার মাধ্যমেই শুরু হোক আসল ক্রসফায়ার।