জনাব অধ্যাপক আলী আশরাফ, স্পিকারের চেয়ারে বসা প্যানেল চেয়ারম্যান,
যেহেতু নামের আগে অধ্যাপক শব্দটা ব্যবহার করছেন, ধরে নিচ্ছি পেশা জীবনের এক পর্যায়ে আপনি শিক্ষকতা করতেন। যদি তাই হয় তাহলে হয়ত ভুলে জাননি সে সময়টার কথা যখন সমাজে শিক্ষকদের স্থান ছিল সব চাইতে উঁচু আসনটায়। ক্ষুধা, দারিদ্র, অনাচার আর অবিচারের কষাঘাতে জর্জরিত এ দেশের মানুষ জীবন যুদ্ধে বহু ক্ষেত্রে পর্যুদস্ত হলেও একটা জায়গায় তারা হার মানেনি, আর তা হল শিক্ষকদের প্রতি শর্তহীন সন্মান, শ্রদ্ধা আর অকৃত্তিম ভালবাসা। এমনটাই চলে আসছিল যুগ যুগ ধরে। তারপর আপনারা এলেন। সাথে আনলেন চেতনার বিশাল এক ভান্ডার। এ ভান্ডার হতেই বেরিয়ে এলো লাল, নীল আর হলুদ ওড়নার বাহারী পশার। গোটা জাতির মত শিক্ষকদের গায়েও লাগিয়ে দিলেন ওড়না লেবেল। পাশাপাশি এভারেস্ট সমান উচ্চতা হতে নামিয়ে উনাদের বসালেন রক্ষক, ভক্ষক আর ধর্ষকের আসনে। সমাজের বাকি সবার মত শিক্ষকরাও আজ কলুষিত। বিভিন্ন ব্রান্ডের ওড়না মুখে লাগিয়ে এই তারাই আজ কলমের বদলে ছাত্রদের হাতে উঠিয়ে দেয় অস্ত্র, আর পাশাপাশি বাস্তবায়ন করে ব্যাক্তি চেতনার হাজার রকমের এজেন্ডা। ১৬ কোটিই যদি আমাদের জনসংখ্যা তাহলে আপনার জেনে রাখা ভাল অনেককেই আটকানো যায়নি আপনাদের ওড়নায়। আমাদের আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারও তাদের একজন।
স্যারকে সংসদের এসে ১৬ কোটি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে আহ্বান জানিয়েছেন আপনি। আপনাদের চরিত্র নিয়ে স্যার কি বলেছেন আর কি বলেননি তা বিচারের ভার আমার নয়। আমি উনার ছাত্র। সেই সময়ের ছাত্র যখন ছাত্রদের কাছে শিক্ষক ছিলেন দেবতাতুল্য। যেহেতু চেতনার ওড়নায় জড়িয়ে স্যারকে পূজারির আসনে বসানো যায়নি তাই আমার কাছে স্যার এখনো দেবতাতুল্য। আপনাদের চরিত্র নিয়ে স্যার যদি কিছু বলে থাকেন আগের মত এখনো আমার জন্যে তা শিক্ষা। ৩৮ বছর আগে ঢাকা কলজের গ্যালারিতে বসে স্যারের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত গিলতাম, এত বছর পরও স্যারের কথা গিলতে আমার বাধা নেই। কারণ আমি জানি স্যার যা বলছেন সত্য বলছেন। একজন শিক্ষক মিথ্যা বলেন না, এমনটা জেনেই আমি বড় হয়েছি।
জনাব প্যানেল চেয়ারম্যান,
আমি যে শহরটায় বড় হয়েছি যেখানে আপনার মতই একজন সাংসদ আছেন। তার আশপাশে আছেন আরও চারজন। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হূদয়ে আপনাকে জানাতে বাধ্য হচ্ছি এলাকার ৯০ ভাগের লোকের কাছে এরা সবাই অসৎ। হেন কোন অপকর্ম নেই যার সাথে উনারা জড়িত নন। এই তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে স্যার অথবা আমাকে সংসদে যেতে হবে কেন, বরং তাদের উচিৎ আমাদের কাছে আসা। ক্ষমা চাওয়ার অনেক কিছু আছে তাদের জন্যে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পের খাদ্য চুরি, নদী খনন প্রকল্পের টেন্ডার চুরি, ভাই-বোন, আত্নীয় স্বজন দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, খুন, ধর্ষন, গুম সহ দৈনিক হাজার রকম অপরাধের হোতা উনারা। লুকিয়ে নয় বরং খোলা আসমানের নীচে দিনের আলোতে ঘটছে এসব। আমরা অসহায়ের মত দেখছি আর নিজের অক্ষমতাকে ধিক্কার দিচ্ছি। এদের চরিত্র নিয়ে কিছু বলতে অথবা লিখতে বললে আমি গলগল করে একটা মহাকাব্য লিখতে পারব। এ লাইনে আমার এলাকার জনপ্রতিনিধিরা কি বিচ্ছিন্ন কজন? গোটা বাংলাদেশ কি রোগে আক্রান্ত নয়? সুরঞ্জিত বাবুর ঘটনা কি আমাদের সে হদিসই দেয় না। অসৎ কে অসৎ বলায় কোন অন্যায় নেই, এটা শুধু সায়ীদ স্যারের শিক্ষা নয়, এ সমাজের শিক্ষা, ধর্মের শিক্ষা, সভ্যতার শিক্ষা। এক কাপ চা আর একটা আকিজ বিড়ির গণতন্ত্রের ম্যান্ডেট নিয়ে এ সত্যকে কাঠগড়ায় দাড় করানোর অধিকার আপনাদের কেউ দেয়নি। এরপরও যদি কথিত ১৬ কোটি মানুষের কাছে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন ছোট্ট একটা অনুরোধ, ১৬ কোটির তালিকা হতে দয়া করে আমার নামটা কেটে দিয়ে আপনাদের সংখ্যাটা ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯ জনে নামিয়ে আনবেন। - ধন্যবাদ।