- নিশ্চয় অনেকদিন বাজারমুখী হননি আমাদের প্রধানমন্ত্রী। ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় নেতা কর্মীদের সমাবেশে তিনি এমন সব সাফল্যের দাবি করলেন যার সারমর্ম বিশ্লেষণ করলে এমনটাই প্রতীয়মান হবে। বিএনপি আমলে চালের দর ছিল কেজি প্রতি ৪০ টাকা এবং বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে একই চাল পাওয়া যাচ্ছে ২৪ হতে ২৬ টাকায়, এমনটাই দাবি করলেন তিনি। এমন সব অলীক ও অবাস্তব দাবির পেছনে অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে; প্রথমত, মিথ্যা বলা। রাজনীতিতে মিথ্যা বলা এখন অনেকটাই বৈধ বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। কমবেশি সবাই আশ্রয় নিচ্ছে এই নান্দনিক শিল্পের। তবে এ প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান নির্ধারণের জন্যে কাউকে যদি ব্যালট বাক্সে ঠেলে দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীর বেশ বেরিয়ে আসবেন এ বিষয়ে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। দ্বিতীয়ত, চাল আর ধানের পার্থক্য গুলিয়ে ফেলা। সরকার কর্তৃক সংগ্রহকৃত ধানের ক্রয়মূল্য ধার্য্য করা হয়েছে ২৪/২৬ টাকা। ধান =চাল, এমন একটা সমীকরণ যদি হাইকোর্টের রিটে স্কুল কলেজের পাঠ্য বইয়ে ঢুকানো যায় নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রীর দাবির পক্ষে যৌক্তিকতা পাওয়া যাবে। তৃতীয়ত, অসুস্থতা। প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ। বোমার আঘাত কেবল কান নয় চোখ দুটিও আহত করেছিল। হতে পারে সে কারণে ৪২ কে ২৪ পড়ছেন এবং উলটা দেখছেন। একই কারণে স্মরণ শক্তির হেরফের হয়ে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সমাবেশে তিনি দাবি করছেন নির্বাচন পূর্ব যে সব ওয়াদা করেছিলেন কেবল সেগুলো নয়, বরং তার চাইতে ঢের বেশি পূরণ করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। একই সাথে আশার বানী শুনিয়েছেন সামনের দেড় বছর আরও অনেক কিছু করে চমক দেখানোর। মগজের হেরফেরের কারণেই হয়ত ১০ টাকা কেজি চাল, ঘরে ঘরে একজন করে চাকরি, বিনামূল্যে সার, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আর ধন্য ধান্যে পুষ্পে ভরা বাংলাদেশের ওয়াদা ভুলে গেছেন তিনি। কোমল হৃদয়ের বাংলাদেশি হিসাবে একজন অসুস্থ মানুষের ওয়াদা ভঙ্গকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে বরং সহানুভূতির চোখে দেখলেই বোধহয় মহত্বের জয় হবে। জাতি হিসাবে আমরা বরাবরাই মহৎ, তাই আরও একবার জয় হোক সে মহত্বের। তবে ওয়াদার বাইরে গিয়ে তিনি যে অনেক কিছু পূরণ করেছেন তার সাথে একমত হতে আপত্তি নেই। ছাত্রলীগ নামের দুঃস্বপ্ন, শেয়ার বাজার লুণ্ঠনের অবারিত সুযোগ, রাষ্ট্রের তত্বাবধানে খুন আর গুম, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন অশ্বারোহী, দুর্নীতির সুনামি আর রাষ্ট্রকে পারিবারিক সম্পত্তি বানানোর যেসব শৈল্পিক কলা কৌশল আবিস্কার করেছেন তার জন্যে জাতি হিসাবে আমরা চীর কৃতজ্ঞ থাকবো। কৃতজ্ঞতার প্রতিদান দিতে আমরা যে কার্পণ্য করিনা তা প্রমাণের জন্যেই তুলে ধরছি নীচের ঘটনাটা।
- আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বৃটিশ জনগণের নিজস্ব একটা ভূমিকা ছিল, যা ছিল দেশটার সরকারী ভূমিকার বেশ ব্যতিক্রম। একদিকে বিবিসির বাংলা বিভাগ অন্যদিকে সেখানে বসবাসরত বাঙ্গালীদের সক্রিয় ভূমিকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের আসল চিত্র ফুটে উঠেছিল পশ্চিমা দুনিয়ার দেশে দেশে। উপনিবেশবাদী অভ্যাস হোক আর অন্য কোন কারণে হোক, বৃটেন আমাদের জন্যে কেবল একটা দেশ নয়, বরং এর বাইরে অন্যকিছু। বৃটেন কে ঘিরে ’৭১এর এমন অনেক স্মৃতি আছে যা রোমন্থন করতে গেলে সংশ্লিষ্টরা নস্টালজিক হতে বাধ্য। তেমনি এক নস্টালজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। বৃটেনের বিখ্যাত বাঙ্গালী সার্জন জনাব কাজী নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজন করা হয়েছিল সে দেশে শেখ মুজিবর রহমানের পিত্তথলি অস্ত্রোপচার রোমন্থন। বিখ্যাত ব্যক্তিদের সৃজনশীল সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের এনাটমি নিয়েও গবেষনা হয়, সে বিবেচনায় শেখ মুজিবই বা বাদ যাবেন এমনটা ভাবা হবে অন্যায়। তবে মন্দ জনেরা বলেন অন্য কথা। শেখ নামের পূজা অর্চনা, নন্দনা বন্দনার সবটাই নাকি নিবেদিত থাকে কিছু চাওয়া পাওয়ার আশায়। এই যেমন অভিনেতা পিযূষ বন্দোপাধ্যায় উত্থান পর্ব। হঠাৎ করে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আঙ্গুল উচিয়ে বেচারা এমন সব তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন যার সারমর্ম ছিল এক শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশে দ্বিতীয় কোন ’মাবুদ’ নেই। অনেকেই ভবিষ্যত বানী করছিলেন, সময় হয়েছে কিছু একটা প্রসব করার। এবং করলেনও। রাতারাতি বসে গেলেন চলচিত্র উন্নয়ন সংস্থার মহাপরিচালকের চেয়ারে। ১/১১’র সময় যারাই প্রধানমন্ত্রীর হয়ে কোর্টে হাজিরা দিয়েছেন তাদের অনেকেই এখন এম্পি, মন্ত্রী সহ সরকারী হোমরা চোমড়া। চোখের ডাক্তার, কানের বৈদ্য কেউ বাদ যায়নি এ দৌড় হতে। শেখ পরিবারের এমন কেউ বাকি নেই যাদের নিয়ে লালসালুর হাট বসানো যাবে, তাই হয়ত হাত বাড়াতে হয়েছে পিত্তথলির দিকে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে খুশি হতে পারেন ভবিষ্যতের কথা ভেবে। সেদিন বোধহয় বেশি দূরে নেই যেদিন জাতি হিসাবে আমাদের এমন সব বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা করতে হবে যার পরিধি ছুয়ে যাবে শরীরের নিষিদ্ধ অঙ্গ পর্যন্ত। আর এ ভাবেই অমর হবে প্রধানমন্ত্রীর পিতা, মাতা ও ভাইদের নাম।
- বিল কপালিয়া পাড়ের নারী-পুরুষরা হাতে বিষের শিশি নিয়ে গণ আত্মাহুতির জন্যে তৈরী হচ্ছে। প্রচন্ড রোদ আর প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এলাকার কয়েক শ নারী পুরুষ ইতিমধ্যে অনশন শুরু করেছে এবং জীবন দিয়ে হলেও ভাত ও পানিতে মারার সরকারী প্রকল্প বন্ধের হুমকি দিয়েছে। পিত্তথলি স্মৃতি রোমন্থন করে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদে দাও মারার মহাপরিকল্পনা আঁটছেন তাদের জন্যে বিল কাপালিয়া হতে পারে সুযোগের নয়া দিগন্ত। ৪২ টাকার কেজি চালকে যেমন ২৪ টাকা বানানো যায় বিল কাপালিয়াকেও বানানো যাবে আশুলিয়া, চাই কিছু নির্ভেজাল তৈলমর্দন আর পূজা অর্চনা। জনবিচ্ছিন্ন প্রধানমন্ত্রীর সন্তুষ্টি লাভে আপাতত এ সবই যথেষ্ট হবে।