বাস্তবতাটা অসম্ভব কিছু নয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ক্ষমতার মিউজিক্যাল চেয়ারে এ যাত্রায় বসতে পারেন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী জনাবা খালেদা জিয়া। ধরে নেই এমনটাই ঘটল। খুব করুণ ও নির্মম ভাবে পরাজিত হলেন জনাবা শেখ হাসিনা। ক্ষমতার সমীকরণ বিজয়ী ও বিজিতদের ভাগ্য কোন দিকে ঠেলে দেয় তার ভবিষ্যত বাণী করা বাংলাদেশের কনটেক্সটে খুব একটা জটিল কাজ নয়। আমারে বাঁশ দিলে আমিও বাঁশ দিমু, সরকারী সম্পদ লুটপাটের পাশাপাশি দেশীয় রাজনীতির এটাও অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতি । এই দুইয়ের যৌথ মিলনের অপর নামই আমাদের রাজনীতি। গায়ে গতরে গণতন্ত্রের পেটিকোট থাকলেও গেল ৪০ বছর ধরে এমনটাই আমরা দেখে আসছি। মিউজিক্যাল চেয়ারটায় একবার বসা গেলে তা পারিবারিক সম্পতি বানিয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার সংস্কৃতিটার শুরু সেই ৭২ সালে। পরবর্তী সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কেউই এ অপসংস্কৃতি হতে বেরিয়ে আসতে পারেননি। যার ফলে ক্ষমতার পালাবদল কোন পর্বেই মসৃণ হয়নি এ দেশে। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাউকেই হত্যা ও গলাধাক্কা ছাড়া বিদায় করা যায়নি। মাঝখানে তত্বাবধায়ক সরকারের এক টার্ম চেষ্টা করেছিল পরিবর্তন আনতে। কিন্তু সেটাও যথাযত মূল্যে বিক্রি হয়নি রাজনীতির বাজারে। ভোটের রাজনীতিতে পরাজিত পক্ষ কোন কালেই সহজ ভাবে নেয়নি নিজদের পরাজয়। এবং যেনতেন চেষ্টায় সরকারকে বিদায় করে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বিরোধী দলীয় রাজনীতি। এ ধরণের অসুস্থ ও রুগ্ণ রাজনীতিতে পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে আবির্ভুত হয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। নিজ দলের বাইরে বাকি সবাই অবাংলাদেশি এবং মিউজিক্যাল চেয়ারে বসার অযোগ্য, এমন একটা থিসিসের উপর বলতে গেলে পিএইচডি নিয়ে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। খালেদা, ফকরুল, ইউনুস, বিশ্বব্যাংক, হোয়াইট হাউস, কফি হাউস হতে শুরু করে জলে, স্থলে অন্তরীক্ষে যাকেই পাচ্ছেন জেল, হাজত, মামলা, হত্যা, গুম আর হুমকি ধামকি দিয়ে ধরাশায়ী করার চেষ্টা করছেন। উদ্দেশ্য একটাই, সামনের নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা। নির্বাচন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কলা কৌশল বাস্তবায়নে সরকারের ডান হাত হিসাবে কাজ করছে দেশের উচ্চ আদালত। কারণ হিসাবে ধরা যায় সরকার বিদায়ের সাথে প্রশ্ন উঠবে দলীয় বিচারকদের ভাগ্য নিয়ে। সে যাই হোক, নির্বাচনে জেতার জালিয়াতি বাংলাদেশে নতুন কোন প্রযুক্তি নয়। বর্তমানে যারা ক্ষমতাহারা তারাও একই খেলার পেশাদারী খেলোয়াড়। সামনের নির্বাচনে মিউজিক্যাল চেয়ার কোন পরিবারের দখলে যাবে তা ভবিষ্যতের বিষয়, এ নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, গবেষণা সামনের দেড় বছর দেশীয় রাজনীতিকে ডমিনেট করবে সন্দেহ নেই। লেখার খাতিরে ধরে নিতে হচ্ছে চেয়ার সুধা সদন হতে হাওয়া ভবনে হিজরত করেছে। এ ধরণের হিজরতের আফটারম্যাথ কি হতে পারে তার ফ্যান্টাসি নিয়েই আমার লেখা।
আমারে বাঁশ দিলে আমিও বাঁশ দিমু। শেখ হাসিনার হাতে মাপতে গেলে কম করে হলেও তের হাত বাঁশ দেয়া হয়ে গেছে খালেদা জিয়াকে। অবাক হবনা ক্ষমতার পালা বদল যদি শেখ হাসিনার জন্য উনচল্লিশ হাত বাঁশ নিয়ে হাজির হন জনাবা খালেদা জিয়া । আসুন লম্বা এ বাঁশকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে নির্দিষ্ট একটা আয়তন দেয়ার চেষ্টা করি।
বাঁশ নং ১। দৈর্ঘ্য তিন হাত।
এয়ারপোর্টঃ পীর আউলিয়ার নাম নিয়ে অন্যকে বাঁশ দেয়ার জোৎস্না পর্বে রাতারাতি আমবস্যা নামবে। পুওর বিমানবন্দরকে আবারও কাটা ছেড়া করে ফিরিয়ে আনা হবে জিয়া নাম। সাথে বোনাস হিসাবে শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়া হবে বঙ্গবন্ধু ষ্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু সেতু সহ শত শত গরুর হাট, খেলার মাঠ, খেয়া ঘাট, পশু হাসপাতাল আর গণ শৌচাগার।
বাঁশ নং ২। দৈর্ঘ্য নয় হাত।
ক্যান্টনমেন্টের বাড়িঃ পর্ণ ছবি সহ চল্লিশ বছরের স্মৃতিবহুল বাড়ি হতে উচ্ছেদ করার বেদনা আর কেউ মনে না রাখুক খোদ খালেদা জয়া মনে রাখবেন। এবং তা হবে আমরণ। উপহার হিসাবে হাসিনাকে যদি ধানমন্ডি ৩২নং বাড়িটা উপহার দেয়া হয় খুব একটা অবাক হবনা। উচ্চ আদলতে দলীয় বিচারক দিয়ে এই উচ্ছেদ হালাল করতে খুব কি বেশি পরিশ্রম করতে হবে?
বাঁশ নং ৩। দৈর্ঘ্য সাতাশ হাত।
ইলিয়াস আলী গুমঃ এই একটা ব্যাপারে উপসংহারে আসতে একটু কষ্ট হচ্ছে। কাকে ধরবে খালেদা জিয়ার গুপ্ত বাহিনী? তালিকায় জাহাঙ্গীর কবির নানক অথবা মাহবুবুল আলম হানিফের নাম থাকলে বিস্মিত হবনা। ছাত্রলীগ অথবা যুবলীগের উদীয়মান কোন নেতার অবুঝ সন্তানদের রাস্তায় রাস্তায় হাহাকার করতে দেখা গেলে ধরে নেব ’আমারে বাঁশ দিলে আমিও বাঁশ দিমু’ তত্ত্ব নতুন করে 'মহিমান্বিত' হয়েছে। প্রশ্ন থাকবে, ’যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতন’ পশুত্বের চাইতেও কি খালেদা জিয়া নীচে নামতে পারবেন?
বাঁশের সংখ্যা ও দৈর্ঘ্য বর্ণনা করতে গেলে হাজার রজনীর আরব্য উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে, যা ব্লগারদের ধৈর্যচ্যুতির কারণ ঘটাবে। তাই তালিকাটা উন্মুক্ত রাখছি। দেশীয় রাজনীতির মূলমন্ত্র ক্ষমতা ও চুরির স্বরলিপি যাদের আয়ত্ব হয়ে গেছে তাদের কাছে সাহায্য চাইব এ তালিকার স্বাস্থ্য ভাল করতে। নাদুস নুদুস তালিকাটা তারপর না হয় সোনালী ফ্রেমে বাধিয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করবো আগত দিনের।
কতটা অমানুষ হলে একজনের পক্ষে এসব পশুসুলভ চিন্তাভাবনা সম্ভব? সোনালী দেশে রূপালী রাজা-রানীদের হাত ধরে আর কতটা নীচে নামলে পশুত্বের শেষ সিড়িটা ডিঙ্গানো যাবে!