নীচের লেখাটা স্থানীয় একটা দৈনিক হতে নেয়া। পড়ে কিছুক্ষণের জন্যে বিমূঢ় হয়ে রইলাম। মন্তব্য করার মত তাৎক্ষণিক ভাষা খুজে পেলাম না। কিন্তু কিছু একটা না লিখলে মন কিছুতে হাল্কা হচ্ছেনা। ভেতরে অজগরের মত অলস একটা সাপ সারারাত ধরে গজরাতে থাকবে। ঘুম আসবেনা, রক্তের চাপ বাড়তে থাকবে। কি নিয়ে লিখব? কাকে দায়ী করবো? কার কাছে বিচার চাইব? ইতিহাস হতে জেনেছি সভ্যতার ক্রান্তিকালে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে যায়, প্রতিবাদ নিয়ে রাস্তায় নেমে পরে। কেউ চে গুয়েভারা হয়ে, কেউ নেলসন মেন্ডেলা হয়ে, কেউ মহাত্মা গান্ধী হয়ে, কেউবা আবার চারু মজুমদার হয়ে প্রতিবাদ জানায়। রাস্তায় নামে, হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। এ বিবেচনায় কি যেন একটা ঘটে গেছে আমাদের রক্তে। প্রতিবাদী হতে নীরব দর্শকে উত্তরণ ঘটেছে আমাদের। তা না হলে ঘটনার মূল চরিত্র এডিসি মশিউরকে কেউ না কেউ খোলা তরবারির ধারালো আঘাতে ঘাড় হতে কল্লা নামিয়ে ফেলত এতদিনে। সে কল্লা দিয়ে কেউ না কেউ ফুটবল খেলতো, কেউ না কেউ লুঙ্গি উচিয়ে কল্লা বিহীন শরীরের উপর পেচ্ছাব করতো। কি হয়েছে আমাদের? কি এমন রোগে আক্রান্ত আমরা যার প্রভাবে অবশ হয়ে গেছে আমাদের মগজ? - পড়ুন খবরটাঃ
পুলিশের আচরণে মানসিক ভারসাম্যহীন তানহা!
মাসুম মিজান
রাজধানীর মনিপুর স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী তানহা হায়দার। চাঁদাবাজরা দিনদুপুরে বাসায় এসে তার বাবা শেয়ার ব্যবসায়ী জিয়া হায়দারকে গুলি করে হত্যা করেছিল। রক্তাক্ত বাবার মৃত্যুযন্ত্রণা এবং তার চিরবিদায়ের দৃশ্যটি গেঁথে আছে তানহার কিশোরী মনে। এরপর প্রভাবশালী খুনিরা তানহার মা সেলিনা আজমীকেও টার্গেট করে। পুলিশি হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় জিয়া হায়দার হত্যা মামলার বাদী সেলিনা আজমীকে। সেলিনা আজমীর অভিযোগ, সর্বশেষ তার সামনে বসে তানহার সঙ্গেও নিষ্ঠুর আচরণ করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পুলিশ আতঙ্কে ভুগছে তানহা। অন্যদিকে জিয়া হায়দার হত্যা মিশনে সরাসরি অংশ নেওয়া ছয় ভাড়াটে খুনি শনাক্ত হলেও তাদের নির্দেশদাতারা এখনও চিহ্নিত হয়নি। প্রভাবশালী খুনিরা এবং গ্রেফতারকৃত আসামিদের লোকজন মামলার বাদী সেলিনা আজমীকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সেলিনা আজমী সমকালকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আমাকে জড়িয়ে কুৎসিত গুজব ছড়ায় প্রভাবশালী খুনি চক্র। মিরপুর থানার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইয়াসিন গাজী খুনিদের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। এ বিষয়ে আমি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে ঘটনার ২১ দিন পর মামলাটি ডিবি পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। এরপর আরও দু'দফা তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। তারা সরাসরি খুনের সঙ্গে জড়িত মনির ও জিতুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। নির্দেশদাতাদের নাম বের হয়ে এলেও তারা অধরা থেকে গেছে।
তিনি আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত আমার দেওয়া তথ্যের আসামিরাই বের হয়ে এসেছে। খুনিরা তখন প্রচার চালায়, আমার পরকীয়ার বলি হয়েছেন জিয়া হায়দার। একদিকে স্বামীকে হারালাম, অন্যদিকে আমাকে সমাজের কাছে চরিত্রহীন হিসেবে তুলে ধরা হলো। এতে দুটি মেয়ে নিয়ে আমি ব্যাপক সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ি। সেলিনা আজমী অভিযোগ করেন, সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর আমাকে ডিবি অফিসে ডাকেন এডিসি মশিউর রহমান। রাত ১১টায় আসামি জিতুর সামনে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলে আমি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চাই, কাদের নির্দেশে জিতু আমার স্বামীকে খুন করেছে? এ প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে এডিসি মশিউর আমাকে বলেন, 'বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করিস না। তাহলে তদন্তে তোর নামই বের হয়ে আসবে। তখন তোকে সবার সামনে ন্যাংটা করে পেটাব।' তখন সেলিনা আজমী ওই পুলিশ কর্মকর্তার দিকে দু'হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, 'স্যার, তাহলে আমাকে গ্রেফতার করুন।' এ দৃশ্য দেখে সেলিনা আজমীর সঙ্গে থাকা তার ছোট মেয়ে তানহা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় এডিসি মশিউর তানহাকে লক্ষ্য করে অশ্লীল ও আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এতে আরও ভয় পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে তানহা। ওই রাতের পর থেকেই সে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এমনকি বাড়ির বাইরে যাওয়া এবং ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে। গত বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া তানহার শিক্ষাজীবন এখন হুমকির মুখে।
গত ১ সেপ্টেম্বর মনিপুর স্কুল মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ করে তানহাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মোহিত কামালের কাছে পাঠান। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল সমকালকে বলেন, তানহা 'সাইকোলজিক্যাল ট্রমা' রোগে আক্রান্ত। তার মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতবিক্ষত। জীবন-যন্ত্রণার অসহনীয় রূপ বা ভয় থেকে এ রোগের জন্ম। তিনি আরও বলেন, বাবার মৃত্যু ও এর পরবর্তী পুলিশের কোনো রূঢ় আচরণ থেকে তানহার এ অবস্থা হতে পারে। এর প্রতিকারের জন্য তাকে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা দিতে হবে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবির এডিসি মশিউর রহমান বলেন, যে মেয়ে (তানহা) তার বাবার রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখে ভয় পায়নি সে আমার আচরণে ভয় পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মামলার বাদিনী সেলিনা আজমীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ওই মহিলা খারাপ। আমাদের তদন্তের ওপর আস্থা না রেখে ওই মহিলা ডিসি ও কমিশনারের কাছে নালিশ করে বেড়াচ্ছে।'
http://www.shamokal.com/