লেখাটা নিয়ে গোলক ধাঁধায় পরে গেলাম। কাকে দিয়ে শুরু আর কোথা গিয়ে শেষ করব কুলকিনারা করতে দিশা হারিয়ে ফেললাম রীতিমত। একদিকে হলমার্ক, সাথে তানভির, স্ত্রী জেসমিন, ললনা হেনরি, পাশাপাশি ডেসটিনি নামক লীলা খেলার এমডি, প্রেসিডেন্ট সহ গণ্ডায় গণ্ডায় স্বদেশি। দোকানদার, স্কুল শিক্ষিকা হতে শুরু করে সেনাপ্রধানের মত অখ্যাত বিখ্যাতরা সবাই যেন জন্মভূমির সাথে অবৈধ সম্পর্কের মহোৎসবে নেমেছে। লুটপাটের বসন্ত প্লাবনে ভেসে যাচ্ছে দেশের মাঠ-ঘাট, নদী-নালা আর খাল-বিল। সাথে দেশপ্রেম নামক কোকিলের কুহু তানে জলকেলিতে মজে গেছে গোটা জাতি। জল এখান আর আগের মত নিরাকার তরল কোন পদার্থ নয়, বরং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবের ছবি সহ বস্তার বস্তা নোট। জল, স্থল অর অন্তরীক্ষে ভরা যৌবনার নিতম্বের মত হেলেদুলে চলছে এসব বস্তা। এই তো সেদিন সামান্য ৭৫ লাখ টাকার ছোট্ট একটা বস্তা সাম্বা নাচের ছন্দ হারিয়ে ছিটকে পরল কক্ষপথ হতে। কথা ছিল চেতনার কমিশন খোর সুরঞ্জিত বাবুর (তুই চোর) দুয়ারে পদধূলি দেয়ার। কিন্তু হিসাবে সামান্য গড়মিল হওয়ায় বস্তার সৌভাগ্য হয়নি সে পথ মাড়াবার। ছোটকালে শুনতাম ঢাকায় নাকি টাকা উড়ে বেড়ায় এবং তা হাত বাড়ালেই ধরা যায়। আমি প্রবাসে, তাই রাজধানীর অলিগলিতে কি বা কারা উড়ে বেড়াচ্ছে তা দেখার সৌভাগ্য হচ্ছেনা। কিন্তু অনুভব করতে পারি কড়কড়ে এসব নোটের উষ্ণ মাদকতা। কোটি টাকার প্রসঙ্গ এলে কেন জানি কলেজ জীবনের ’সুস্বাদু ডালের কথা মনে পরে যায়। হোস্টেলের পাতলা পায়খানার মত কোৎ দিলে কোটি টাকাও এখন দৌড়ায়। তাই এ অংক নিয়ে বিশেষ কেউ মাথা ঘামায় না। বরং এ মাপের বস্তা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার চেয়ারম্যানদের রসনা, বাসনা আর কামনা পূরণের জন্যেও এখন যথেষ্ট হয়না। মাঝে মধ্যে খুবই গর্ব হয় দেশ নিয়ে। লুটপাটের এমন গণবিস্ফোরণ এবং তার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার দাবি নিয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন জাতি আমাদের টেক্কা দিতে পারবে বলে মনে হয়না। তাই বিশ্ব লুটপাট প্রতিযোগিতায় এবারও যদি হারানো আসন ফিরে না পাই ধরে নিতে হবে তারাও নোবেল পথের পথিক এবং ইউনুসের মত ’কুশিদ’ আর ’অমানুষের’ হাতে তুলে দিচ্ছে এই নন্দিত গৌরব ।
সাংসদ নামক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শতকরা ৯৭ ভাগই নাকি চোর, খুনি ও লুটেরা। এমনটাই রিপোর্ট করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। আর তাতেই ইজ্জতের সব গুলো চেম্বার থরথর করে কেপে উঠেছে মহামান্য সাংসদদের। ষড়যন্ত্রের গন্ধ, ১/১১’এর পদধ্বনি, জেল হাজতের জলেভাসা সাবান, এমন সব কথাবার্তার সাথে মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীদের হুমকি ধামকিতে টিআইবি নিশ্চয় এখন তটস্থ। তবে আমার মত ম্যাঙ্গোদের কাছে গন্ধ যদি বাতাস ভারি করে থাকে সে গন্ধ যড়যন্ত্রের গন্ধ নয়, বরং মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী আর সাংসদদের ডায়রিয়ার গন্ধ। স্কুল জীবনে আমার এক শিক্ষক এক জাপানিকে নিয়ে ছোট্ট একটা গল্প শুনিয়েছিলেন। জাপানী নাকি অনেক আশা নিয়ে পাকিস্তানের এ অংশে এসেছিল। প্ল্যান ছিল গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়াবেন এবং নিখাদ আনন্দে ভুলে যাবেন নিজ দেশের যান্ত্রিক জীবনের কথা। তো যেমন কথা তেমন কাজ। যথাবিহিত ঘুরে বেড়ালেন এবং ভ্রমণ শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে শেয়ার করলেন নিজের অভিজ্ঞতা। ’এমন একটা অভিজ্ঞতার কথা বলুন যা বাকি জীবনের জন্যে আপনি ভুলতে পারবেন না‘। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ভদ্রলোক ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে বললেন ‘পাকিস্তানি ম্যানো (man) এন্ড হেনো (hen) আর সেমো সেমো (same same)’। অর্থাৎ পাকিস্তানের মানুষ ও মোরগ এক। কারণ হিসাবে তুলনা করলেন ওরা দুজনেই নাকি রাস্তাঘাটে মলমূত্র ত্যাগ করতে অভ্যস্ত। ভদ্রলোক যদি ৪১ বছর বয়স্ক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ঘুরে যেতেন নিশ্চয় মোরগ মুরগীর আসনে আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বসিয়ে দিতেন। ক্ষমতার ডায়রিয়ার যে কটু গন্ধ তা সহজে এড়াতে পারতেন বলে মনে হয়না। খোদ সুরঞ্জিত (তুই চোর) বাবু টিআইবির রিপোর্টে গোস্বা করেছেন এবং স্পিকারের কাছে আবদার করেছেন সাংসদ সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি বসিয়ে টিআইবিকে শায়েস্তা করার। ভিকারুন্নিসা ভর্তি বাণিজ্যের মহামান্য অধিপতি জনাব রাশেদ খান মেনন সুরঞ্জিত (তুই চোর) বাবুর গলায় গলা মিলিয়ে একই আবদার জানালেন ভাগ্যদেবীর কাছে।
লেখাটা শেষ করার আগে আরও দুটি ঘটনা ঘটে গেল যার দিকে হাত না বাড়ালে মনের খচখচানিটা দূর করা যাচ্ছেনা। এক, ডেসটিনির প্রেসিডেন্টকে আদালত সসম্মানে জামিন দিয়েছে। শুধু জামিন নয়, সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধি নিয়ে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে ডেসটিনি নামক ডায়রিয়া হতে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। দুই, ব্যাংকারের সন্তান ২১ বছর বয়স্ক কাজী মোহম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিস ট্রাক ভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ইমারত উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আদালত কি একবারও ভেবে দেখেনি ডেসটিনি যদি ডায়রিয়া হয়ে থাকে তার জন্মদাতা হচ্ছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান? রাজনৈতিক ক্ষমতা ও বন্দুকের জোর এই দুইয়ের সমন্বয় কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ চোরাই সিন্ডিকেটের প্রধান এই জেনারেল। এতদিন জানতাম চোরের পরিচয় শ্রেফ চোর। কিন্তু বাংলাদেশের আদালত লুটেরা জেনারেল হারুনকে সম্মানের সাথে জামিন দিয়ে বিশ্ব বিচার ব্যবস্থায় নতুন আইন সংযোজন করছে, যার সারমর্ম দাঁড়াবে, মুক্তিযোদ্ধাদের চুরি করতে বাঁধা নেই (নাকি আওয়ামী লীগারদের?)। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট আইনের চোখে লুটপাট নয় যদি তার নামের আগে সেনাপ্রধান শব্দটা জ্বলজ্বল করে। আমাদের নাফিস ভ্রাতা জিহাদি যোশ নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন দেশটাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার খায়েশে। আমেরিকার কোথাও কিছু মিশে যায়নি, যা মিশে গেছে তা দেশ ও জাতি হিসাবে আমাদের পরিচয়। চুরির সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে খেতে আমরা এমনিতেই ক্লান্ত, তার উপর নাফিস সাহেব লেপে দিলেন জিহাদি ’গৌরবের’ মহান তিলক। আশাকরি আমেরিকার জেল হাজতে অতিকায় সাদা-কালোদের নিয়মিত ধর্ষনের মাঝে জেহাদি যোশ আশার আলো যোগাবে নাফিসের বাকি জীবনে। ওয়েলকাম টু আমেরিকা মি নাফিস।