সময়টা ১৯৭৪ সাল। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে বিদেশ পাড়ি দিয়েছি আমরা। যেনতেন বিদেশ নয়, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সহযোগী দেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন। স্মৃতির গলিতে হাটতে গিয়ে সময়ে আটকে গেল আমার ১৬ই ডিসেম্বর। দিনটা ছিল এমন একটা দিন যেদিন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম। ’৭৪ এর আগষ্টের যে দিনটায় দেশের শিক্ষামন্ত্রী বিমানে তুলে আমাদের আকাশ সমান স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বছর না ঘুরতে সে স্বপ্ন হোচট খাবে, ব্যক্তি পূজার বীজ হতে শিকড় গজাবে, স্বপ্নের স্বাধীনতা ফিরে যাবে ক্যান্টনমেন্টে এবং ধীরে ধীরে বিলীন হবে দুই পরিবারের দেশ নামক পারিবারিক সম্পত্তি দখলের লড়াইয়ের মাঝে। যারা ১৬ই ডিসেম্বর নিয়ে উচ্ছাস করছেন তাদের সাথে গলা মেলাতে পারছিনা বলে দুঃখিত। আজকের বাংলাদেশ আর স্বাধীনতা পূর্বক বাংলাদেশের মাঝে পার্থক্য শুধু একটা পতাকা। পতাকা নিয়ে কবিতা লেখা যায়, সাতার কেটে আবেগের নদী পাড়ি দেয়া যায়। আমি কবিতা পূজারি নই, জানালার বাইরে এমন কোন নদীও নেই যা পাড়ি দেয়ার তাগাদা আছে। আমার স্বাধীনতা ১৬ কোটি মানুষের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান আর স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর স্বাধীনতা। পাকিস্তানী ২২ পরিবারের যাঁতাকল হতে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশের দুই পরিবারের খপ্পরে আটকে যাওয়ার জন্যে ১৬ই ডিসেম্বর ছিলনা। সে দিনের সে ১৬ই ডিসেম্বর হোঁচট খেয়ে আটকে গেছে পরাধীনতার চোরাবালিতে। মুক্তি চাইলে আরও লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের। প্রস্তূতি নিন সে পথের...শুভ হোক সে যাত্রা।