মার্কিনিরা তাদের আফগান অভিযানে সমাপ্তি টানতে যাচ্ছে আগামী বছর । দেশটার অধিকাংশ নাগরিক ওবামা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের সাথে একমত হলেও যুদ্ধবাজ রিপাবলিকানদের অনেকে এ নিয়ে হায় হায় শুরু করে দিয়েছে। এসব হাই প্রোফাইল মার্কিন নাগরিকদের অনেকে হয় অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত অথবা এ শিল্পের স্বার্থ রক্ষার জন্যে কংগ্রেসে লবি করে থাকেন। বিনিময় হিসাবে পেয়ে থাকেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। সন্দেহ নেই আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি তাদের জন্যে বয়ে আনবে মারাত্মক দুঃসংবাদ। বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্যে ওবামা প্রশাসন ডিফেন্স বাজেটে বড় ধরনের ছুড়ি চালাতে যাচ্ছে। বুশ-চেনির উত্তরসূরী রিপাবলিকানদের পাশাপাশি অনেক জেনারেল পর্যন্ত হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করছেন প্রেসিডেন্টের এহেন সিদ্ধান্তে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামা এ ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যুদ্ধের দামামা থেমে গেলেও আল-কায়েদার মত দলগুলোর পিছু নেয়ায় দেশটা বিরতি দেবে বলে মনে হয়না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা সামনের দশকে মার্কিনিদের যুদ্ধ সীমিত থাকবে মূলত ড্রোন আক্রমনের মধ্যে। ড্রোন। ভার্চুয়াল দুনিয়ার অনেকের কাছে আবাবিল পাখি হিসাবে পরিচিত। অনেকটা পাখির মত ওরা উড়ে আসে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে বীরের মত ফিরে যায়। মিশনে চালকের প্রয়োজন হয়না। প্রয়োজন হয়না ব্যাপক প্রস্তুতির। আফগান ও পাকিস্তানের তালিবান এবং ইয়েমেন ও সোমালিয়ার আল কায়েদা নেত্রীত্বকে প্রায় ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে ড্রোন হামলা। কোল্যাটারাল ড্যামেজের কারণে ড্রোন আক্রমণ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দা কুড়াচ্ছে। খোদ আমেরিকায়ও অনেকে প্রশ্ন তুলছে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। কিন্তু ওবামা প্রশাসন এ নিন্দায় খুব একটা কর্ণপাত করবে বলে মনে হয়না। প্রেসিডেন্ট ওবামা কর্তৃক নতুন সিআইএ প্রধান নিয়োগ তারই প্রমাণ। বলা হয় নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান ড্রোন প্রযুক্তি প্রয়োগের আদি পিতা।
মাস দেড়েক আগে ইতিহাসের অন্যতম বড় লটারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ৫৮০ মিলিয়ন ডলার, টাকার অংকে প্রায় ৪৬৪০ কোটি টাকা। ব্যাপক আলোড়ণ তুলেছিল হাফ বিলিয়ন ডলারের এ ভাগ্য পরীক্ষা। পরিচিত এমন কোন মার্কিনি ছিলনা যে অন্তত একটা হলেও টিকেট কিনেনি। ২০ ডলার খরচ করে আমি নিজেও ২০টা কিনেছিলাম। ফলাফল যা হওয়ার তাই হল, শূন্য। নিজে যেমন জিতিনি পরিচিত কেউ জিতেছে বলেও শুনিনি। কিন্তু তাতে কেউ কষ্ট পেয়েছে বলে মনে হয়না। আমেরিকার প্রতি ঘরের মত আমাদের অফিসেও এ নিয়ে চলেছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। ড্র’র দিন পর্যন্ত মুখে ঘুরে বেড়াত প্রশ্নটা, ’জিতলে কি করবেন টাকা দিয়ে?’ অন্তত ৫০ বার উত্তরটা আওড়াতে হয়েছে, ’টাকা থাকলে একটা ড্রোন কিনব’ এ নিয়ে যথেষ্ট হাসাহাসি হয়েছে অফিসে। কেউ একজন ই-মেইলে আমার ইচ্ছাটা ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিকে। স্বাভাবিক প্রশ্ন এসেছে, এতকিছু থাকতে ড্রোন কেন? বিদেশিদের এতকিছু বুঝানো যায়না। বুঝালেও ওরা বুঝতে চায়না। কি করে বুঝাবো এ আমার অক্ষমতার শেষ ক্ষমতা, না পূরণ হওয়া স্বপ্নের ক্ষণিক বাস্তবায়ন। সারা জীবন ওকালতি করেছি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার, যেখানে অপরাধ ও শাস্তি একে অপরের পরিপূরক হয়ে বাস করবে পাশাপাশি। ইদানিং বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছি এসব ভাল ভাল শব্দে। এর জায়গায় স্থান করে নিচ্ছে ড্রোনের মত অন্যায়, অবৈধ ও অমানবিক নির্মমতার যথেচ্ছ প্রয়োগ।
জেল হতে ছাড়া পেয়েছে নওয়াপাড়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল। অন্ধকার দুনিয়ার এ বীরকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার হতে বরণ করে নিতে এসেছিল অনেক অনুসারী। ওরা এসেছিল অর্ধশতাধিক প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাসে চড়ে, সাথ ছিল দুই শতাধিক মোটরসাইকেল। এর আগে খবর পেয়ে সাজ সাজ রব পরে যায় শিল্প শহর নওয়াপাড়ায়। কুখ্যাত মাদকব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী আক্তার, এস্কান্দর, জয়, কাঙাল, বিপ্লব, নুর ইসলাম, জয়নাল, কামরুল, আলী, লিটন, কামাল, জুয়েল, আরিফ, রতন সহ শত শত ভয়াল আদম বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে নেতাকে ফিরে পেয়ে। বলাই বাহুল্য দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী দলের কর্ণধার শিমুল পৌর যুবলীগের সভাপতি ও সংসদ হুইপ শেখ আবদুল ওহাবের বিশ্বস্ত হাত। বাংলাদেশের আর দশটা শহরের মত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় রাজনীতিবিদ তথা মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী শিমুলের জন্ম। সাংবাদিক ও পুলিশ পেটানো, প্রতিপক্ষ দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বেধড়ক মারধোর করে পঙ্গু বানানো সহ খুন, গুম, চাঁদাবাজী অনেক মামলার আসামী এই শিমুল। কেবল অভয়নগর থানায় তার নামে ঝুলছে সাতটি মামলা। এক মামলায় কিছুদিনের জন্যে অথিতি হয়েছিলেন স্থানীয় পুলিশের। এবং এখানেই জন্ম নেয় নতুন এক শিমুলের। যে শিমুল একদিন প্রতিনিধিত্ব করবে জাতীয় সংসদকে। শিমুল যে পথ মাড়াচ্ছে একই পথ মাড়িয়ে আজ অনেকেই পাকা আসন করে নিয়েছে চলমান রাজনীতিতে। এবং এই রাজনীতি তাদের এনে দিয়েছে আধিপত্য, ও বিশাল বিত্ত বৈভব।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল কয়েক ঘন্টার জন্য নওয়াপাড়া ছিল মাদক ও সন্ত্রাসী শূন্য। এখানেই জন্ম নেয় ড্রোন প্রাপ্তির আমার অসম্ভব ও অবাস্তব ইচ্ছাটা। তালিবানদের একত্রিত হওয়ার খবর মার্কিন ক্যাম্পে পৌছানো মাত্র আকাশে উঠে যায় এই 'আবাবিল পাখি'। ঢিল নয়, ভয়াবহ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় তালেবানদের আড্ডা, হোক তা রাজনৈতিক অথবা সামাজিক। আমার ইচ্ছাটাও একই রকম। মোল্লা ওমরের মত ক্রিমিনাল শিমুলকে বরণ করতে একত্রিত হয়েছিল তার সন্ত্রাসী বাহিনী। ড্রোন হাতে থাকলে এটাই হত আমার মোক্ষম সুযোগ। আমার যত অক্ষমতার সবটুকু উজার করে দিতাম এই শিমুল বাহিনীর উপর। প্রোগ্রাম করে ড্রোনকে কানে কানে বলে দিতাম, ’যাও পাখি উড়ে যাও, ছিন্নভিন্ন করে দাও।’