প্রধানমন্ত্রী আরও এক টার্মের জন্যে ক্ষমতা চাইছেন। চাইতেই পারেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার চাওয়া পাওয়া, ইচ্ছা আকাঙ্খা অথবা কামনা বাসনা কোনটাই অবৈধ নয়, বরং গণতন্ত্রেরই অংশ। কিছুদিন আগে একই আবদেন নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং প্রতিদ্বন্দ্বি মিট রমণি। নিজেদের অতীত ও বর্তমানকে তুলে ধরে জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন সুবিবেচনার জন্য। জনগণ কথা রেখেছে এবং বিবেচনার মাধ্যমে রায় দিয়েছে আগামী টার্মে বারাক ওবামাকে হোয়াইট হাউসে ধরে রাখার। জাতির উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার ভাষন এবং পুন:নির্বাচনের আবেদন সাদা-কালো চশমায় দেখলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রারই পরিচয় বহন করে। প্রধানমন্ত্রী সমাজের সর্বক্ষেত্রে সাফল্য দাবি করছেন এবং পাশাপাশি তুলে ধরছেন ক্ষমতাসীন দল হিসাবে বর্তমান বিরোধী দলের ব্যর্থতার ফিরিস্তি। সন্দেহ নেই দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এগুচ্ছে। মানব সম্পদ ও পোষাক শিল্প সহ অর্থনীতির বেশকিছু খাত চোখে পড়ার মত উন্নতি করছে। আমরা যারা বাংলাদেশকে কাছ হতে জানি তাদের মনে প্রশ্ন উঠবে প্রধানমন্ত্রী অবলীলাক্রমে যেসব সাফল্যের দাবি করে গেলেন তাতে সরকারের অবদান কতটুকু? রাজনীতিবিদ ও আমলাতন্ত্র সহ সরকারের বিশাল বাহিনী আদৌ কি কোন ভূমিকা রাখছে অর্থনৈতিক সাফল্যে? বেচে থাকার তাগিদেই মানুষকে খুঁজতে হচ্ছে তার পথ। এ পথ একজন বাংলাদেশিকে নিয়ে যাচ্ছে হিমালয়ের শৃঙ্গ হতে আফ্রিকার দস্যু কবলিত ভয়াবহ জনপদে। কোন প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াই দেশের পোষাক শিল্প জয় করছে একটার পর একটা চূড়া। এখানে সরকার ভূমিকা বলতে এক ব্যুরোক্রেসি ছাড়া অন্যকিছুর অস্তিত্ব নেই। বরং অগ্রসরমান বেসরকারী খাতকে দুর্নীতির আষ্টেপৃষ্টে বেধে সরকার নামক শ্বেতহস্তী খুবলে খাবলে খাচ্ছে এর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। উল্লেখ করার মত দেশের যা উন্নতি তার সাফল্য দাবি করার অধিকার রাখেনা এদেশের রাজনৈতিক সরকার, হোক না হাসিনা অথবা খালেদা জিয়ার। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গুলো অতীতের যে কোন সরকারের তুলনায় অধিকতর লুণ্ঠিত হয়েছে। এক সোনালী ব্যাংক হতেই খসে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ছাত্রলীগ নামক ভয়াল এক সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে দলিত মথিত হচ্ছে অনেকটা সুনামী ধাঁচে। রাজনীতিবিদদের লুণ্ঠনের মাত্রা ক্ষুধার্ত হায়েনাদের দৌঁড়কেও হার মানাচ্ছে। মানুষ খুন হচ্ছে পাখির মত। দেশের অর্থনীতিকে শেয়ার বাজার ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টের মাধ্যমে কতটা ধর্ষণ করা হয়েছে তার প্রমাণ দফায় দফায় জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি। সরকারী বাসভবনের কমফোর্ট জোনে বাস করলে এসব খবর বাংলাদেশের সরকার প্রধানদের কানে পৌছায় না। বায়বীয় সাফল্যের স্তুতি দিয়ে সাজানো থাকে প্রধানমন্ত্রীদের দরবারশালা। এমন দরবারশালার প্রধান হয়ে বিশাল সাফল্যের দাবি করাটা এক ধরনের সংস্কৃতি হয়ে গেছে আমাদের রাজনীতিতে। শেখ মুজিব, জেনারেল জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার দল একই পথে হেটে গেছে। তাই শেখ হাসিনার এ যাত্রা কাউকে আবাক করবে বলে মনে হয়না।
তারেক-মামুন গংদের দুর্নীতি নিয়ে ব্লগ দুনিয়ায় তোলপাড় তুলেছিলাম এক সময়ে। এ চক্রের পতন কাছ হতে উপভোগ করার জন্যে নির্বাচন দেখতে দেশে পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিলাম। উত্তেজনায় রাতভর ঘুরে বেড়িয়েছি গ্রামে গঞ্জে। দাবি ছিল একটাই, বিদায় চাই তাদের। এবং শেষপর্যন্ত জনগণের রায়েই তারা বিতারিত হয়েছিল। শেখ হাসিনার মত খালেদা জিয়াও জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসেছিলেন। অনেকটা আলীবাবা চল্লিশ চোরের কায়দায় দেশ লুণ্ঠনের পর হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন সোজা আঙ্গুলে ঘি খাওয়ার দিন শেষ। আঙ্গুল বাঁকা করে ক্ষমতা ধরে রাখার কৃষ্ণলীলা শেষে ফিরে গেছেন যেখানে যাওয়ার। শেখ হাসিনা কি সে পথেই হাঁটছেন না? আগের সরকারের সাথে তাদের মৌলিক পার্থক্যটা কোথায়? বরং দুর্নীতি ও লুটপাটের দাঁড়িপাল্লাটা অনেকটাই ভারী হয়ে ঝুলে গেছে তাদের দিকে। প্রধানমন্ত্রীর নিজ পরিবারে লুটপাটের যে ভয়াবহ চিত্র বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার কিছুটা যদি সত্য হয় ধরে নিতে হবে তারেক-ককো গংদের লুটপাট শ্রেফ ছিঁচকে চুরি।
আরেক টার্মে ক্ষমতা দেয়ার জন্যে আবদার করছেন প্রধানমন্ত্রী । শুনতে ভাল শোনায়। মায়া মায়া ভাব চলে আসে। কিন্তু এই আবদারের আড়ালে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার যে মহাপরিকল্পনা বিগত চার বছর ধরে করে গেছেন তার নমুনা কিছুটা হলেও জাতি দেখেছে। বিবেচনার স্বাধীনতা থাকলে জাতির রায় এ যাত্রায় শেখ হাসিনার পক্ষে যে যাচ্ছেনা তা অনেকটাই নিশ্চিত। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিয়ে সাফল্যের যে ললিত বানী শুনিয়ে গেলেন তার জবাবে কঠিন কিছু মন্তুব্য করলে খুব একটা অন্যায় হবে বলে মনে হয়না। মন্তুব্য একটাই, অনেক হয়েছে জনাবা প্রধানমন্ত্রী, এবার আপনাদের যাবার পালা। ১/১১’র সহযোগীতায় দেশের জনগণ আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল নেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্যতার কারণে নয়, বরং এ ছিল জিয়া পরিবারের সীমাহীন দুর্নীতি বিরুদ্ধে সম্মিলিত রায়। একই কারণে এ দেশের মানুষ আবারও ভোট দেবে এবং সাময়িক হলেও ক্ষমতার দরবারশালা হতে আপনাদের তাড়াবে।