উন্নত বিশ্ব হলে এ নিয়ে হৈ চৈ পরে যেত। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার শিরোনাম হয়ে রাষ্ট্রের ভীত কাঁপিয়ে দিত। কিন্তু সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে আমরা উলটা পথে হাটতে অভ্যস্ত । যা নিয়ে কথা না বললেই নয় তা ঠেলে দেই শেষ পৃষ্ঠায়। তাই এ নিয়ে কোথাও কোন উচ্চবাচ্য হবে আশা করছিনা। ভিটামিন ’এ’ ক্যাপসুল নিয়ে তুঘলকি কারবারের খবরটা কোন পৃষ্ঠায়ই ঠাঁই পেতনা যদিনা বিশ্বব্যাংক বাগড়া দিত। একই ব্যাংকের অর্থায়নে আড়াই কোটি শিশুকে এই ক্যাপসুল খাওয়ানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। নিয়মমাফিক টেন্ডার হয়েছিল এবং দেশীয় টেন্ডারের সব শর্ত পূরণের মাধ্যমে ভারতীয় কোম্পানী অলিভ হেলথ কেয়ারের প্রডাক্টকে নির্বাচিত করেছিল বাছাই কমিটি। কথায় বলে ন্যাড়া একবারই বেলতলা যায়। কিন্তু কোম্পানী যদি হয় বিশ্বব্যাংক বোধহয় বার বার যেতে আপত্তি করেনা। কারণ ন্যাড়া হলেও তাদের মাথার খুলি অসম্ভব শক্ত। এক পদ্মাসেতু দিয়ে তাদের কাবু করা গেছে এমনটা যারা ভেবেছিলেন তারা নড়েচড়ে বসতে পারেন। বাংলাদেশের কোন প্রকল্পই যে বিশ্বব্যাংকের ব্লাইন্ড চেক পেতে যাচ্ছেনা তার প্রমাণ এই ক্যাপসুল প্রকল্পে। আয়োজন শেষে তারিখ পর্যন্ত ঘোষনা করেছিল মন্ত্রনালয়। কথা ছিল ৫ই জানুয়ারী শুভ উদ্ধোধন হবে। হয়ত প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েই ফিতা কাটা হত প্রচারণার ঢোল। কিন্তু হায়, অর্থ ছাড় করার আগে বিশ্বব্যাংক বলল, নট সো ফাষ্ট! নির্বাচিত ক্যাপসুলের সেম্পল নিজ উদ্যোগে ল্যাবে পাঠায় এবং বের করে আনে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কালো বিড়াল। বের হয়ে আসে অলিভ হেলথ কেয়ারের ক্যাপসুল কেবল নিম্ন মানেরই নয়, তা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের বিড়াল রেলের বিড়ালের মতই তাগড়া এবং দেখতে কালো। আমরা স্বদেশীরা না চিনলেও আর্ন্তজাতিক সংস্থা গুলো ধীরে ধীরে চিনতে শুরু করেছে বাংলাদেশি বিড়ালের আসল চেহারা। পদ্মা সেতুর মতই ভারতীয় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে মন্ত্রনালয়ের কতিপয় ব্যক্তি উঠে পড়ে লেগেছিলেন। এমনকি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সনদপ্রাপ্ত পরীক্ষাগার ভারতীয় এসজিএস প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে প্রভাবিত করেছিলেন ক্যাপসুলের মানের পক্ষে প্রত্যায়ন পত্র লিখতে। কিন্তু সবাইকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব হলেও সম্ভব হয়নি বিশ্বব্যাংককে। জাতি হিসাবে আমদের বোধহয় কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ দুই আবুল, উপদেষ্টা মশিউর আর কানাডায় বাসরত অদেখা কালো বিড়ালদের কাছে। এরা পদ্মার পানি ঘোলা না করলে একদল লুটেরা রাষ্ট্রীয় খাজাঞ্জিখানা লুটের পাশাপাশি আড়াই কোটি শিশুর মুখে তুলে দিত স্লো পয়েজনিং মৃত্যু।
একটা সমাজ কতটা কলুষিত হলে তার আড়াই কোটি শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে জুয়া খেলতে পারে? জাতীয় চরিত্রের এই পশুত্বকে কি আমরা স্বাভাবিক জীবন হিসাবে মেনে নিয়েছি? কতিপয় দুর্নীতিপরায়ন ব্যক্তিতে দায়ী করে দায়মুক্তির রাস্তা খোঁজা কি যথেষ্ট হয়নি? এরা কি আসলেই কতিপয় ব্যক্তি মাত্র? পদ্মাসেতু, সোনালী ব্যাংক, ডেসটিনি উপাখ্যান, শেয়ার বাজার সুনামী, কুইক রেন্টাল স্ক্যাম, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রতারণা কি প্রমাণ করেনা কতিপয় ব্যক্তি নয়, বরং রাষ্ট্রের উদ্যোগে সুপরিকল্পিত ভাবে আয়োজন করা হয় এসব লুটপাট? এক বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সংসদ নির্বাচন। হাজার হাজার কোটি টাকা হাত বদল হবে এই নির্বাচনে। সংসদ প্রার্থীরা বিনিয়োগ করবেন এমন সব অংক যার জরায়ুতে জন্ম নেবে হত্যা, খুন, গুম আর দানবীয় শক্তির অদেখা পশুত্ব। একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া আমাদের জন্য জরুরি, কেন এই বিনিয়োগ? হয়ত সুশীলদের উত্তর হবে জনসেবা, রাজনীতিবিদরা বলবেন গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা। জনসেবার জন্য সাংসদ হওয়াটা কি একান্ত বাধ্যতামূলক? দেশকে ভালবাসতে চাইলে ক্ষমতা কি খুবই জরুরি? এসব প্রশ্নের উত্তরই হয়ত উন্মোচন করতে পারে ক্যাপসুল কলঙ্কের আসল অধ্যায়। আমরা বছরের পর বছর ধরে দেখছি ক্ষমতা দেশীয় রাজনীতিবিদদের হাতে তুলে দেয় রাষ্ট্রীয় খানাজাঞ্জিখানার সিসিম ফাঁক মন্ত্র। এ মন্ত্র বলেই তেনারা খুলে থাকেন আলীবাবা চল্লিশ চোরের গুহা। এর পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা। এসব গুহাতেই জন্ম নেয় পদ্মাসেতু, হলমার্ক, ডেসটিনি, স্টক মার্কেট, কুইক রেন্টাল, ব্যাংক, বীমা, মিডিয়া, টেন্ডার, খুন, গুম, ক্রসফায়ার, লীগ, দল, শিবির এবং অবশ্যই ভিটামিন ‘এ‘ ক্যাপসুল প্রকল্প। সব একসূত্রে গাথা। গঙ্গালুটের মহাপরিকল্পনা। এক আবুল, তানভীর আর মশিউরকে শাস্তি দিয়ে জাতির শরীর হতে এসব ক্যান্সার দূর করা যাবে এমনটা যারা ভাবেন তারা বোধহয় দলীয় ব্রান্ডের দুধকলা খেয়ে পিতা অথবা স্বামীর রাজ্যে বাসবাস করছেন।
পদ্মা সেতুর মলমূত্র নিষ্কাশনে ইউনূস ড্রেন স্থানীয় পর্যায়ে বেশ ভাল কাজ দিয়েছিল। সরকার প্রধান এ কাজে বেশ নিপুণতা দেখিয়েছিলেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গোটা বাংলাদেশকে ড্রেন বানালেও সরকারের আবর্জনা দূর করার জন্য যথেষ্ট হবেনা। অন্তত যতদিন বিশ্বব্যাংকের চোখ খোলা থাকবে।