মুলত সরকারী কর্মকাণ্ডের সমালোচনাই আমার লেখালেখির বিষয়বস্তু। এ নিয়ে কোন রাখ ঢাক নেই আমার। ওয়াচডগের কাজ প্রচারণা নয়, তাই বর্তমান সরকারের ভাল কাজ চোখে পরছে না বলে যারা সমালোচনা করছেন তাদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করব। সামনের নির্বাচনে বিরোধী দল ক্ষমতায় গেলে তাদের সমালোচনা হয়ত আপনাদের দলীয় আত্মা সন্তুষ্ট করতে পারবে। তবে এ নিয়ে বিচলিত নই আমি। বাংলাদেশি সরকারের সমালোচনা করতে বিশেষ কোন উপলক্ষের প্রয়োজন হয়না। যে যায় লংকা সে হয় রাবন ধাঁচে ক্ষমতার সিঁড়িতে পা দিয়েই দেশীয় রাজনীতিবিদদের প্রায় সবাই ঝাঁপিয়ে পরেন ভাগ্য ফেরানোর ম্যারাথনে। এ কাজে পিতার দল বলেন আর ঘোষকের দল বলেন সবাই সমান পারদর্শি। তাই দলীয় নেশায় নেশাগ্রস্ত না থাকলে রাজনীতির নামে দেশে কি ঘটছে তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কৃষিখাতে নাকি বিপ্লব ঘটে গেছে এবং আমার মত সমালোচকদের তা চোখে পরছে না, এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। দেশের কোন বিপ্লবেই সরকারের কোন ভূমিকা থাকেনা। মানুষ তার প্রয়োজনেই ভাগ্য গড়ার লড়াইয়ে নামে। কৃষি, মানব সম্পদ, পোষাক শিল্প সহ অর্থনীতির যেসব খাত উন্নতির মুখ দেখেছে তার কোনোটাতেই সরকারের ভূমিকা মুখ্য নয়। বরং সেবা খাত ও যোগাযোগ খাতের মত খাত গুলোতে আপদমস্তক দুর্নীতিতে মুড়িয়ে উন্নতির চাকা পেছনে টানাই হচ্ছে বিপ্লবে সরকারের অবদান। তার সাথে যদি যোগ করা যায় ছাত্রলীগ নামের দানবীয় শক্তি তা হলে উন্নতির বিপ্লব কোন মেরুর যাত্রী তা বুঝতে পণ্ডিত হওয়ার দরকার পরেনা। কেউ যদি বুঝেও না বোঝার ভান করেন ধরে নিতে হবে রাজনৈতিক লুটপাটের কার্যকরী সহযোগী অথবা নেত্রী পূজার বাধ্যগত সেবাদাস। সরকারের সমালোচনায় যাদের রক্তক্ষরণ হয় তাদের অনুরোধ করব পায়ের নীচের মাটিটা একটু পরখ করে নিতে। দুর্নীতির এমন একটা অধ্যায় নিয়ে ঘাটতে যাচ্ছি যা আপনাদের মনোকষ্টের কারণ হতে পারে।
২০ হাজার কোটি টাকার বিমান বন্দর নিয়ে সরকার তখন বিপদে। স্থান নির্বাচনে বার বার মুখোমুখি হচ্ছে এলাকাবাসীর। আড়িয়াল বিল ছিল পছন্দের একটা জায়গা। কিন্তু দলমত নির্বিশেষে এলাকার জনগণ যেদিন অস্ত্র হাতে মাঠে নামে হুশ হয় সরকারের। উপলব্ধি হয় বিমানবন্দর নয়, সরকারের কবর রচনার জন্য তৈরী হচ্ছে স্থানীয় জনগন। তেমনি এক সময়ের কথা। হয়ত এ সময়েই কানাডীয় কোম্পানী এনএনসি লাভালিনের সাথে আবুল হোসেনের ৪% নিয়ে দরকষাকষি চলছিল। প্রবাসী কোন এক বৈজ্ঞানিকের ডিজিটাল স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একসাথে অনেক গুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছিল মহামান্য সরকার। ২০ হাজার কোটি টাকার বিমানবন্দর ছিল তার অন্যতম। সাথে ছিল উন্নত বিশ্বের অনুকরণে ঘড়ি ঘুরিয়ে ডে-লাইট সেভিং প্রক্রিয়া। তবে দেশের জনগণকে গেলানো যায়নি বিশাল এসব প্রকল্প। বিমানবন্দর ও পদ্মাসেতু প্রকল্প যখন হাওর বাওর বিল ও বিদেশ ঘুরে লুটপাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছিল খুব নীরবে জন্ম নিচ্ছিল আরও একটা উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প। প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা মূল্যের এই প্রকল্পের অর্থ যোগান হবে কোন খাত হতে তা পরিষ্কার না করে সরকার পা বাড়ায় মহাশূন্যের পথে। বাইরে চকচক করলেই যে সোনা হয়না আওয়ামী লীগ সরকার তা ইতিমধ্যে বেশ কবার প্রমাণ করে ফেলেছে। তাই স্যাটেলাইট প্রকল্পে নতুন করে প্রমাণ করার কিছু ছিলনা। পদ্মাসেতু, শেয়ারবাজার, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, হলমার্ক, ডেসটিনির প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কলঙ্কিত না হয়ে আকাশে উড়বে এমনটা ভাবার কোন কারণ ছিলনা। বাস্তবেও ঘটল তাই।
প্রকল্পের প্রথম ধাপ হিসাবে ৮২ কোটি টাকার পরামর্শদাতা নিয়োগের কাজে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ব্যাপক সাড়া মেলে এ আহবানে। কানাডার টেলেসেট কানাডা, রাশিয়ার জয়েন্ট স্টক ইনফরমেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম, ইন্দোনেশিয়ার পিটি টেলেকমুনিকাস্কি, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবকম এন্ড টেলে স্পেইস লিঃ ছিল এদের অন্যতম। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পেইস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের কথা উল্লেখ না করলে তালিকাটা অসমাপ্ত থেকে যাবে। আমেরিকার ম্যারিলেন্ড বেইজড এই কোম্পানী দেশিয় সামিট গ্রুপের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারে জমা দিয়েছিল বিড ডকুমেন্ট। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও মন্ত্রনালয়ের সক্রিয় ভূমিকায় দ্রুত এগিয়ে যায় বাছাই পর্ব। মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনায় সামনে চলে আসে আমেরিকার গ্লোবকম এন্ড টেলে স্পেইস লিঃ। এবং এখান হতেই শুরু হয় বাংলাদেশের চিরন্তন খেলা। কোন এক সুন্দর সকালে বাংলাদেশে উড়ে আসেন ডিজিটাল বাংলাদেশের অদৃশ্য স্বপ্নদ্রষ্টা এবং রাতারাতি বদলে যায় বাছাই ষ্ট্রাটেজি। প্রথমত, থামিয়ে দেয়া হয় মূল্যায়ন কমিটির কর্মকাণ্ড। অনেকটা এনএনসি লাভালিন কায়দায় স্পেইস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালকে কাজ দেয়ার সুপারিশ আসে অদৃশ্য সূত্র হতে। অন্যান্য বিডারদের কানে পৌছে যায় আগত সিদ্ধান্তের খবর। অংশগ্রহণকারী দু’একটা কোম্পানী আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি দেয়। অনেকটা সুরঞ্জিত বাবুর ’বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে তমুকে ধরলে ছাড়ে না’ কায়দায় বাংলাদেশকেও ছাড়ছে না সামিট গ্রুপ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ও সামিট গ্রুপ একে অপরের পরিপূরক। এ মুহূর্তে দেশে এমন কোন প্রকল্প নেই যার রাস্তা হাইপ্রোফাইল এই গ্রুপের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে স্পেইস পার্টনারশীপ ইন্টারন্যাশনালকে ৮২ কোটি টাকার কাজ দিতে পদ্মা সেতুর মত পানি ঘোলা করতে হয়নি বাছাই কমিটিকে। কারণ হয়ত বিশ্বব্যাংকের অনুপস্থিতি। বলা হচ্ছে টাকার উৎস আসলে নাকি আমরা, যারা বিদেশের মাটিতে বসে রক্তকে পানি বানিয়ে যোগান দেই বৈদেশিক মুদ্রা।
স্যাটেলাইট প্রকল্পে সামিট গ্রুপের ভূমিকা ছিল স্পেইস পার্টনারশীপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) স্থানীয় এজেন্টে হিসাবে। হয়ত বিড প্রক্রিয়ায় বিদেশিদের অংশগ্রহণে এ শর্ত ছিল বাধ্যতামূলক। স্বভাবতই সামিট গ্রুপ এখানে মুখ্য নয়। চোখ ফেরানো যাক ৮২ কোটি টাকার ওয়ার্ক অর্ডার প্রাপ্ত মূল বিডার মার্কিন কোম্পানীর দিকে। এসপিআই’এর ওয়েবপেইজ হতে জানা যায় কোম্পানীর জন্ম ২০০৯ সালে (ছবি দ্রষ্টব্য)। ব্যবসার পরিধি, বিজনেস ডেভোলাপমেন্ট, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, ফাইন্যানসিয়াল এডভাইজরি, সিস্টেম এঞ্জিনিয়ারিং, ইনসুরেনস সহ হরেক রকম ব্যবসা। স্পেইস স্যাটেলাইট বলতে কোন শব্দ নেই কোম্পানীর অভিধানে। নাম সর্বস্ব এই কোম্পানীর অভিজ্ঞতার তালিকা শূন্য। ২০০৯ সালে জন্ম নেয়া প্রতিষ্ঠানকে ৮২ কোটি টাকার কাজ দিয়ে আস্থা রাখার রহস্য কি তা ঘাটতে গেলে রেলের কালো বিড়ালের মতই বেরিয়ে আসবে হরেক রকমের বিড়াল। বিড প্রক্রিয়া চলাকালীন বাছাই কমিটি বরাবর এসপিআই এমন একটা চিঠি দেয় যা ছিল বিড শর্তের মারাত্মক লংঘন (ছবি দ্রষ্টব্য)। কেবল এমন একটা চিঠির জন্য অযোগ্য ঘোষনা করা যায় সংশ্লিষ্ট দরদাতাকে। অভিজ্ঞতা অথবা দলীয় দাসীবৃত্তি ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে গাছ কাটার কাজে পর্যন্ত অংশগ্রহন করা যায়নাগ। অথচ স্পেইসের মত সূক্ষ্ম কারিগরী কাজে এমন এক কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়েছে যাদের পরামর্শে স্যাটেলাইট আকাশে উড়বে কিনা এ নিয়ে রয়ে যাবে হাজারও প্রশ্ন। দুর্মুখেরা বলেন আইএসপি আসলে মার্কিন বেইজড কোম্পানী হলেও এর উদ্যোক্তা জনৈক বাংলাদেশি ’বৈজ্ঞানিক’।
জিয়া পরিবারের নামে ২৬টা মামলা ঝুলছে বিভিন্ন আদালতে। উন্নয়নের নামে বিদেশি তহবিল এনে তা পারিবারিক শানশওকত বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে ফেসে গেছে ভাঙ্গা সুটকেস হতে জন্ম নেয়া এই ধনাঢ্য পরিবার। যদিও দেশের বিচার ব্যবস্থা দলীয় সেবাবৃত্তিরই অংশ এবং ন্যায়বিচার এখানে স্বপ্নপূরীর অলীক বাস্তবতা, আশার কথা প্রতিহিংসার জন্য হলেও রাজপুত্রদের এখানে হাজিরা দিতে হয়। রাজনীতির নামে দেশকে লুটপাটের যে মহা প্রতিযোগিতা তাতে কে জয়ী হয়েছে এবং কোন সুয়োরানীর ভূমিকা কতটা ছিল তা জানার অফুরন্ত সূযোগ এনে দেবে দেশের ক্যাঙ্গারু আদালত। আমরা অপেক্ষায় থাকবো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নামে দেশকে কতটা ধর্ষণ করা হয়েছে এবং পর্দার আড়াল হতে কারা এই অপকর্মের কলকাঠি নেড়েছে তার বিস্তারিত জানার জন্য। আর এ ফাঁকে আসুন ধন্য হই দেশের চলমান ঘটনাবলী নিয়ে। লেখাটা যখন শেষ করছি খবর বেরিয়েছে সদ্য নির্বাচিত সাংসদ সিমিন হোসেন রিমির এপিএস কাজল মোল্যা তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী কাজের মেয়েকে নিয়মিত ধর্ষন করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং দুই মাস ধরে বাথরুমে আটকে রেখে প্রসাব পান করতে পর্যন্ত বাধ্য করেছে। ফসলের মাঠে ফসল ফলে, এ হাজার বছরের বাস্তবতা, এ নিয়ে উল্লাস করার কিছু নেই। কিন্তু রাজনীতিবিদ রিমিদের টাকায় কাজল মোল্যার মত বেশ্যারা যে পশুত্বের জন্ম দিচ্ছে তা চেঙ্গিস আর হালাকু খানদের বর্বরতাকে হার মানাচ্ছে। যতদিন সভ্যতা বলতে কোন কিছু অবশিষ্ট থাকবে কেউ না কেউ এ নিয়ে কথা বলবে।