ফাইনানশিয়াল ক্রাইম & পানিশমেন্ট যাদের আগ্রহের বিষয় তাদের কাছে বার্নি মেডফ খুবই জনপ্রিয় একটা নাম। ব্যবসায়ী, স্টকব্রোকার, বিনিয়োগ উপদেষ্টা, অর্থলগ্নিকারী এই মার্কিন ইহুদি ১৯৭০ সাল হতে বিনিয়োগের নামে ভয়াবহ এক পঞ্জি স্কীম পরিচালনা করে আসছিলেন। লম্বা সময় ধরে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৫,২০,০০০ কোটি টাকা) হাতিয়ে নেন শত শত বিনিয়োগকারীর পকেট হতে। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের মার্চ মাসে ধরা দেন এবং ১১ কাউন্ট ফেডারেল ফেলানিতে নিজের দোষ স্বীকার করেন। বিচার বেশিদিন প্রলম্বিত হয়নি। একই বছর জুন মাসের ২৯ তারিখ তাকে ১৫০ বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়। এক কালের NASDAQ ট্রেডিং হাউজের নন-এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান বার্নি মেডফ এখন নর্থ ক্যারোলাইনার বার্টনার শহরের কাছে ফেডারেল কারেকশনাল সেন্টারে জীবনের বাকি সময় অতিবাহিত করছেন।
কাদের মোল্লাকে যাবত জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। কিন্তু এই দন্ড কাউকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ক্ষোভে রাগে অনেকে রাস্তায় পর্যন্ত নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে। রায় ঘোষনার পূর্ব মুহূর্তে মোল্লার চেহারা ছিল সাদা, ফ্যাকসা, অনেকটা সদ্য মৃত লাশের মত। কিন্তু রায় শোনার পর বদলে যায় তার চেহারা। দু আঙুল উচিয়ে ভিক্টরি সাইন দেখিয়ে প্রকারান্তে নিজের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন উঠবে, যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত একজন আসামীর বিজয় প্রকাশের উপলক্ষটা এখানে কোথায়? হয়ত এতেই লুকিয়ে আছে সাজা নিয়ে জন অসন্তুষ্টির রহস্য। কাদের মোল্লার ভাল করে জানা আছে ক্ষমতার পালাবদল তার জন্য কি নিয়ে আসবে। এমনটাই আমাদের বিচার ব্যবস্থা। যখন যেমন তখন তেমন, হায় হোসেন, হায় হাসান! বাংলাদেশের কনটেক্সটে যাবজ্জীবন কোন সাজা নয়। অর্থ, প্রতিপত্তি ও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড সহ এ দেশের কোন ক্রিমিনাল আজীবন জেল খেটেছে এমন নজির আমাদের ইতিহাসে নেই। হয়ত দলীয় ঘরনার বিচারক দিয়ে আবারও বিচার জমাবে নতুন ক্ষমতাসীন দল। নতুন করে রায় বেরুবে এবং কাদির মোল্লা স্ব-সন্মানে দলীয় ক্যাডার পরিবেশিত হয়ে বেরিয়ে আসবেন জেল হতে। ভয়টা আসলে এখানেই। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আসলেই কি খুব সহজ একটা সাজা যা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করার কারণ আছে? বার্নি মেডফের শাস্তির দিকে চোখ ফেরালে মোটেও তা মনে হবেনা। বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড হল অথচ অধিকতর অপরাধে কাদির মোল্লার জন্য বরাদ্দ হল জেলখানা। এর কারণ কি তা নিয়ে জল্পনা করা আইনের চোখে অবৈধ এবং এ মুহূর্তে প্রি-ম্যাচিউর্ড। সময়ই প্রমাণ করবে এর কারণ ও যৌক্তিকতা। কিন্তু এ ফিয়াসকোর ভেতর হতে যা বেরিয়ে এসেছে তা হলো আমাদের বিচার ব্যবস্থার দৈন্যতা। সুস্থ জাতি হিসাবে বেচে থাকতে চাইলে এ সমস্যার গ্রহনযোগ্য সমাধান বাধ্যতামূলক। তা নিশ্চিত করা না গেলে কেবল ৭১’এর জল্লাদদের জন্য নয়, দেশের বাকি ক্রিমিনালদের কাছে ভুল বাণী পোঁছানো হবে।