রাজনীতির ভাগ্যাকাশে এখন দুর্যোগের ঘনঘটা। এ হতে উত্তরনের প্রেসক্রিপশন কারও জানা থাকলে প্রকাশের এখনই সময়। রাজনীতিবিদ, সমাজবিদ, অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, বৈজ্ঞানিক, মনোবিজ্ঞানী সহ সমাজের স্ব স্ব পদে যারা পার্থক্য গড়ে তুলছেন তাদের হাতে ফর্মুলা থাকলে উচিৎ হবে টেবিলে রাখা। কালক্ষেপণ করলে দেরি হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে জাতির কোমর ভেঙ্গে গেছে প্রায়। সরকারের হাতে খুন হওয়া স্বদেশির সংখ্যা ২০০ কাছাকাছি পৌছে গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার পুলিশ লীগকে আঙ্গুল না চুষে গুলি চালানোর ফ্রি লাইসেন্স দিয়েছেন। মনে হচ্ছে শিকারীর শিকার টার্গেট ইতিহাসের সর্বকালের সব রেকর্ড ভাঙ্গতে যাচ্ছে। দিলীপ বড়ুয়া ও হাসানুল হক ইনুদের মত ওয়ান-ম্যান-শো মার্কা দল ছাড়া বাকি দলগুলোর রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিতেও সরকার বদ্ধপরিকর। প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষ দলের নেতাদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে পশুর মত আদালতে প্রদর্শন তারই ইঙ্গিত বহন করে। পাশাপাশি বিরোধীরা হাটতে শুরু করেছে সে পথে যে পথ আজকের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার রাস্তা দেখিয়েছিল। হরতাল, ধ্বংস, নৈরাজ্য ও হুমকি দেশের অর্থনীতিকে ঠেলে দিয়েছে এমন এক অনিশ্চয়তার মুখে যা হতে বেরিয়ে আসার সবকটা রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। যদিও আমার মত আবুলরা বিশ্বাস করে বিরোধীদের হরতাল অথবা অলিগলিতে বিক্ষিপ্ত অগ্নিসংযোগ ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবেনা। লাগাতার হরতাল, গান পাউডারের আগুনে চলন্ত বাসে যাত্রী পুড়িয়ে মারা, লগি-বৈঠার তাণ্ডবের পর লাশের উপর সাম্বা নাচ, একটার বদলে ২০টা লাশ ফেলার প্রতিজ্ঞা, নৃশংসতার এসব চূড়ান্ত শৃঙ্গ পদানত না করে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সাধ অধরাই থেকে যাবে বিরোধীদের জন্য। হরতাল যদি করতেই হয় তা হতে হবে আওয়ামী লীগের নক্সায়, গাড়ি যদি পোড়াতে হয় তাতে থাকতে হবে জীবন্ত যাত্রী, প্রকাশ্য রাজপথে পৈশাচিক উন্মত্ততায় মানুষ খুন করতে হবে। লাশের উপর নাচতে হবে, কুদতে হবে। সচিবালয় হতে মখা আলমগীরের মত কাউকে বেরিয়ে আসতে হবে। মঞ্চ বানাতে হবে। দেশের প্রেসিডেন্টকে ভাতে ও পানিতে মারার অংশ হিসাবে বঙ্গভবনের পানি ও গ্যাস বিছিন্ন করতে হবে। কেবল তখনই সরকারের ঘুম ভাঙ্গবে। অনুভব করবে গণবিস্ফোরণের উত্তাপ। যেমনটা করেছিল বিএনপি-জামাত জোট।
অস্ট্রেলিয়ান স্যার নিনিয়ানকে দিয়েও মধ্যস্থতা সম্ভব হয়নি। মান্নান ভূইয়া ও জলিল সাহেব সহ যারা চেষ্টা করেছিলেন তাদের কেউই আর বেঁচে নেই। সময় এখন মোহম্মদ হানিফ ও ফখরুলদের, রাজনৈতিক শিষ্টাচার যাদের জন্য ইতিহাসের বিষয়। একে অপরের বিচার, ফাঁসি, দেশ হতে উচ্ছেদ সহ বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি এখন রাজনীতির ভাষা। এমন একটা পরিবেশে দলীয় উচ্ছিষ্টভোজী বুদ্ধি ব্যবসায়ীরা দাবি জানাচ্ছেন দুই নেত্রীর সংলাপের। জনৈক ব্যবসায়ী রুলিংয়ের জন্য আদালত লীগের দরজা পর্যন্ত মাড়িয়েছেন। মৃত প্রেসিডেন্টের লাশের প্রতি সন্মান জানাতে দুই নেত্রীর এক কক্ষে উপস্থিতিকে অনেকে সংলাপের ভেন্যু হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। আক্ষেপ করেছেন একজন অপরজনের দিকে তাকায়নি বলে। ভাবটা এমন, তাকানো মাত্রই লালিত ভালবাসার মোমবাতি জ্বলে উঠবে। সে মোম ঝাড়বাতি হয়ে আলোকিত করবে টেকনাফ হতে তেঁতুলিয়া। এবং প্রেম, প্রীতি ভালবাসার ভাসিয়ে নেবে ১৭৫ জনের রক্ত। আসলেই কি তাই? দেশের কথা না হয় বাদ দিলাম, পারস্পরিক সন্মান, শ্রদ্বা, ভালবাসা ও মায়া মমতা বলতে আসলেই কিছু অবশিষ্ট আছে দুই নেত্রীর ভাণ্ডারে? থাকলে কোথায় সেসব? ক্ষমতার মসনদে পারিবারিক কর্তৃত্ব চিরস্থায়ী করার ব্লু প্রিন্টের সাথে আমরা কি ইতিমধ্যে পরিচিত হইনি? ২০০৯ সালের নির্বাচন কি তাই ছিলনা? পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন আসবে এবং আমরা আবুলরা এক হাত মাথায় অন্য হাত মুখে ঢুকিয়ে দিনের পর দিন দেখতে থাকবো মানুষ মরছে, গাড়ি পুড়ছে, জনজীবন অচল হচ্ছে, অর্থনীতি ডুবছে, বিনিয়োগ গুটিয়ে বিদেশিরা সটকে পরছে , এবং বিক্রীত ক্রীতদাসের মত বাকি সবাই বাহাবা অথবা ঘৃণা ছড়াবে; শেষপর্যন্ত এটাই কি হতে যাচ্ছে গণতন্ত্রের স্থায়ী রোডম্যাপ? সার্বজনীন তাণ্ডবের শেষে নেত্রীরা মসনদে বসবেন, হাতী নাচাবেন, ঘোড়া নাচাবেন, সন্তানদের প্রবাসে বেকার বৈজ্ঞানিক বানিয়ে সম্পদের পাহাড় বানাতে সাহায্য করবেন, আয় হীন জীবনে লন্ডনের মত শহরে বিশাল বাড়ি ভাড়া করাবেন, যোগ্যতাহীনদের বানাবেন অটোইজমের বিশেষজ্ঞ, পাশাপাশি ১৬ কোটির বাকি সবাইকে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা বানিয়ে পিতা ও ঘোষকের ছায়াতলে নাচতে বাধ্য করাবেন... জাতি হিসাবে স্বাধীনতার কাছে এটাই কি ছিল আমাদের একমাত্র পাওনা?
তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিবিদ হতে চাইলে প্রয়োজন কিছু অতিরিক্ত মেধার। কি আছে আমাদের দুই নেত্রীর মগজে? হিংসা, জেদ, ক্রোধ, প্রতিশোধ, পিতা ও স্বামীর নামে দেশকে পারিবারিক সম্পত্তি বানিয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার খায়েশ ছাড়া অন্য কোন গুনাবলী জাতির সামনে উন্মোচিত করতে পারেননি নেত্রীদ্ধয়। বছরের পর বছর ধরে আমরা অসহায়ের মত দেখছি এ পশুত্ব, পাশাপাশি এক পক্ষের হয়ে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে নর্তন কুর্দন করছি। বিনিময়ে কি পাচ্ছি? গণতন্ত্র? অন্ন? বস্ত্র? বাসস্থান? শিক্ষা? চিকিৎসা? স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তা?এসব মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করেছিল বলেই আমরা প্রতিবাদ করেছি। অস্ত্র হাতে নয় মাস যুদ্ধ করেছি পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে। রক্ত দিয়েছি। ধর্ষিতা হয়েছি। ফলাফল? ২২ পরিবার খপ্পর হতে বেরিয়ে দুই পরিবারের বিষাক্ত থাবা। এ থাবায় আমরা এমন ভাবে আটকে গেছি যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দূরে থাক, মুখ খুলে কথা বলার সামর্থ্যটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের শৌর্য বীর্য নিয়ে রাজপথে মাতলামি করতেও দ্বিধা করছিনা। ব্রিগেড বানিয়ে ’৭১এর খুনিদের ফাঁসি দেয়ার দাবি অনেকটা নেশার পর্যায়ে চলে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জাতি হিসাবে আমাদের একমাত্র সমস্যা কাদের মোল্লাদের ফাঁসি নিশ্চিত করা। আসলেই কি তাই? দেশকে রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের মত দুই দেবীর আপনজন ও পোষ্যরা চেটেপুটে খাচ্ছে। কোথায় প্রতিবাদ? কোথায় বিচারের দাবি? সাইদী নিজামীর বিচার ইতিহাসকে দায়মুক্তি করার দাবি। আমরা বোধহয় ভুলে গেছি ইতিহাস আমাদের অন্ন যোগায় না, স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা দেয় না। বর্তমানকে স্বাভাবিক পথে চালিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজন রাজনীতি। আর এ জন্যই আমরা ভোট দেই, জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করি, নেতা বানাই। অথচ ক্ষমতার স্বাদ পেয়েই নেতারা বনে যান হিংস্র হায়েনা। স্বাদ চিরস্থায়ী করার নেশায় হয়ে উঠেন উন্মত্ত। জাতিকে জিম্মি করে মুক্তিযুদ্ধের রেকর্ড বাজান, উন্নতির কীর্তন করেন। ৪০ হাজার কোটি টাকার লুটপাটকে বলেন দুষ্টুমি।
যথেষ্ট হয়নি কি এ পশুত্ব? জাতি হিসাবে বিগত ৪২ বছরে আমরা কি কিছুই শিখিনি? যদি তাই হয় কোন মুখে নেত্রীরা আমাদের হয়ে কথা বলছেন? কোন মুখে গণতন্ত্রের জয়গান গাইছেন? দেবীদের গণতন্ত্রের শেষ ঠিকানা কি আমাদের দেখা হয়নি? সময় হয়েছে দুই ওম্যান প্লাস এরশাদ ও ইনু মিনুদের মত কজন হাফ ম্যানদের নির্বাসনে পাঠানোর। বেড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে ঘন্টা বাঁধতে হবে। এবং তা যত সম্ভব দ্রুত।