কথাটা আমাদের এলাকায় ব্যাপক ভাবে চালু আছে। ছোটকাল হতে শুনে আসছি। নিজেও যে ব্যবহার করেছি অস্বীকার করবো না। তবে সত্য কি মিথ্যা তা যাচাই করে দেখা হয়নি। হয়ত প্রয়োজন হয়নি তাই। ভাদ্র মাস নাকি কুত্তাদের ছান্দানি উঠার মাস। এ মাসে ওরা নিজেরা যেমন কামড়ি কামড়ি করে, তেমনি মানুষ সহ যাকে সামনে পায় বিনা কারণে ধাওয়া করে এবং সুযোগ পেলে বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পরে। বলা হয় এ মাস তাদের জৈব লালসা মেটানোর মাস, তাই পথে ঘাটে বখাটে কুকুরদের ততোধিক বখাটে কাজে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। চুদুর বুদুর শব্দের মত ছান্দানি শব্দেরও কোন আভিধানিক ব্যাখ্যা নেই। এ আঞ্চলিক শব্দ। ব্যবহারও হয় এলাকা ভিত্তিক। কাছাকাছি শব্দ খুঁজতে গেলে হয়ত উন্মাদ শব্দটাই হবে যোগ্য প্রতিশব্দ। কেন জানি মনে হয় আওয়ামী লীগের পেশিশক্তি ছাত্রলীগ-যুবলীগ এখন নিজেদের ভাদ্র মাস পার করছে। অনেকটা চতুর্স্পদ পশুর কায়দায় ওরা ধাওয়া করছে পনের কোটি মানুষকে। আওয়ারা কুকুরের মতই জৈব লালসা মেটানোর তাগাদায় ঝাঁপিয়ে পইরছে নারকীয় তান্ডবে। তুলনাটা মাথায় প্রবেশ করা মাত্র পরিচিত মধ্যসারির যুবলীগের এক নেতাকে ফোন করলাম। জানতে চাইলাম বাঁচার জন্য কি করা হচ্ছে ইদানিং। নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই জনাবের। অনেকটা ’যা পাই তা খাই’ ধাঁচের মানুষ। ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সেও যুবক থাকা যায় আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতি না করলে খোদ বিধাতারও তা বুঝার কথা নয়।
- বাইছাব কি আমার লগে মশকরা করতাছেন?
- কি যে কন, এত বড় নেতার লগে মশকরা করবো আমি! ঘাড়ে কি কল্লা থাকবো?
- মারেন মারেন, টিটকারি মারেন।
- পৌরসভার টেন্ডারডা কি পাইছেন? গতকাইল তো ওপেনিং হইছে।
- আদার বেপারী হইয়্যা জাহাজের খবর লওন লাগবো না। বিদেশে মুনি খাটেন বালা কতা, খাটতে থাহেন। কথায় কথায় বাংলাদেশ চু*য়েন না।
- আপনের এক বন্ধুর কাছে হুনলাম টেন্ডারডা আপনের কাছে ধরা দিছে। লগে এম্পি সাবও নাকি আছে। মিষ্টি খাওইয়াবেন কবে?
- চু*রানী এম্পির গুষ্টি কিলাই। আর মিষ্টি আপনের পা*আ দিয়া ঢুকামু।
- হে আবার কি করলো? এতদিন জানতাম আপনেরা এক অন্যের ইয়ার দোস্ত।
- শুয়*র বাচ্চায় টেকার পাগল। টেকার লাইজ্ঞা হেয় মুতের ড্রেনেও নামতে রাজি।
- মাল তো হেরে ধইরাই কামাইছেন, অহন এত গোস্বা কেন?
- আর কইয়েন না, দিনকাল বড় খারাপ। সামনের ইলিকশনে হেয় হারবো। হেইডা বুইজ্জা কুত্তার ছান্দানী উঠছে। পতিতা পট্টির চান্দায়ও ভাগ বসাইতাছে।
- হায় হায় কনকি। নিজ দলের ইজ্জত মারতাছেন। হুনছি সামনের পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার পদে খাড়াইবেন। উলডা পালডা কতা কইলে নমিনেশ পাইবেন?
- আপনে কি বাংলাদেশে না আসমানে জন্মাইছেন? জাইন্নাও না জানার ভানা করেন! নমিনেশন মানে টেকা, লাল নীল নোট। বাংলাদেশ চোরের দেশ। চুরি চামারি এইহানে আলুর ভর্তা। এম্পি কন আর চেয়ারম্যান কন, সব বাইনচ*ত চোর। লগে জয়েন করছে নতুন আসা গোপালগঞ্জের মালা*ন ওসি। যেয় যেম্ভে পারতাছে হেম্ভে লুটতাছে। বদনাম হয় খালি ছাত্রলীগ আর যুবলীগের। কন দেহি লীগের কোন শালায় বালা? আরে নেত্রী নিজেও তো দুই নম্বর। দেহেন না বইনডা হাজবেন্ড, বাচ্চা কাচ্চা ফালাইয়া খুতি লইয়া কেমনে তাইনের পিছে ঘুর ঘুর করে। বাংলায় একটা কতা আছে, ঘু খায় সব মাছে বদনাম হয় টাকি মাছের। বুঝলেন ভাইছাব, আমরা হইলাম গিয়া গু খাওয়া টাকি মাছ। আর শহরের এসপি, ওসি, ডিসি, এম্পি, চিয়ারম্যান, হেগো দারোয়ান, পিওন, সব হইতাছে গিয়া নূরের আলো হযরত নূরে আলাইয়েসাল্লাম।
- সব বুঝলাম, কিন্তু আপনেরা হইলেন গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সেনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহক। আপনেগো কি এইসব দুইনম্বরী কাজ শোভা পায়?
- হে হে হে হে...মিয়া ভাই, আপনের কথা শুনলে হাসির লগে গু বাড়াইয়া যায়। চেতনা হইলো গিয়া তেজারতির জিনিস, আড়াই শ টেকা কেজিতে বেচা-কেনা হয়। লাগলে কইয়েন।
- না না তার আর দরকার হইবো না। আপনের সাগরেদরা ফেইসবুকে বিনামূল্যে বিক্রি করতাছে। আড়াই শ টেকা লস দেওনের সামর্থ্য নাই। শেষ একখান প্রশ্ন, ইলেকশনে হারলে পলাইবেন কৈ? মালেশিয়ায় জায়গা-জমি কিছু কিনছেন?
- চুদুর বুদুর কতা কইয়েন না। পলামু কা? ইলেকশনে হারলে পলাইতে হইবো এই থিওরি কই পাইলেন? যুবদলের আলাল-দুলাল আগের বার কি পলাইছিল? হেরা যুবদল ও ঠিকাদার। বিম্পি আমলে টেন্ডার ছিনতাই করছে, গুল্লি কইরা আরেক ঠিকাদাররে আল্লার দরবারে পাঠাইছে। কি হইছে হেগো? কিছুনা। আমারও কিছু হইবনা। তয় টেন্ডারে নতুন কোন কাজ পামুনা এইডা নিশ্চিত। কাজ পাইবো আলাল আর দুলালে। হেরা মুচে মেন্দি লাগাইয়া রেডি হইতাছে। আমার লাইজ্ঞা খালি মন ভইরা দুয়া কইরেন।
- সুবহানাল্ললাহ।
অনেকদিন হয়ে গেল আল্লাহকে ডাকা হয়নি। দোয়া কিভাবে পড়তে হয় তাও প্রায় ভুলে গেছি। তবে সোজা সাপ্টা বাংলায় একটা দোয়া মনের ভেতর সব সময় গোল্লা খেলেঃ ‘হে আল্লাহ, আরেক জনমে বাংলাদেশি না বানিয়ে কুত্তা বানিয়ে পাঠাইও। অন্তত ভাদ্র মাস এলে আমার ছান্দানি উঠবে এবং যত্রতত্র কামড় দিতে পারবো। প্রথমেই কামড় দেব আমারই সমগোত্রীয় মানুষ নামের ছাত্রলীগ আর যুবলীগ সেনাদের। তাদের কামড়ের পাল্লাটা অনেকদিন হয়ে গেল ভারি হয়ে আছে।