সারাহ ফেনিগানের সাথে পরিচয়টা ইদানীংকালের। কোন এক উইকএন্ড পার্টিতে পরিচয়। কথার ম্যারাথনে পার্টিকে ওয়ান-ওম্যান শো’তে পরিনত করতে মহিলার জুড়ি নেই। তাই ইচ্ছা থাকলেও এড়ানোর উপায় নেই। বয়স প্রায় ৭০ বছরের কাছাকাছি। দেখতে অবশ্য পঞ্চাশের বেশি দেখায়না। কড়া মেক-আপ ও আঁটসাট পোষাক পড়ার কারণে অনেকের ভীড়ে ভদ্রমহিলাকে সহজে আলাদা করা যায়। মনযোগ আকর্ষনের জন্য হয়ত ইচ্ছা করেই শরীরটাকে আলগা রাখেন। তাই আর কিছু না হোক অন্তত কৌতূহলের বশবর্তী হয়েও আড়চোখে তার দিকে তাকাতে হয়। পরিচয় পর্বের উষালগ্নে যে প্রশ্নটা করেছিলেন তাতেই বুঝে নিয়েছিলাম গভীর জলের মাছ এই মহিলা। ’তুমি কি মনে কর ওবামা সরকারের উচিৎ হবে সিরিয়ান বিদ্রোহীদের অস্ত্র দেয়া?’ সাড়া সপ্তাহ বেঘোরে খাটার পর শনিবার সন্ধায় সিরিয়ান বাদশাহ বাশার আল আসাদ অথবা দেশটার বিদ্রোহীদের নিয়ে সময় ব্যয় করার ইচ্ছে ছিলনা। তাই এ ব্যাপারে খুবই অজ্ঞ বলে মাফ চেয়ে নিলাম। ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এঞ্জিনীয়ারিং কোরের নার্স ছিলেন মিস ফেনিগান। স্বামী সন্তান অথবা সংসার বলতে কিছু নেই। টিভি ও সংবাদপত্র পড়ে দিন কাটিয়ে দেন। তাই নতুন কাউকে সামনে পেলে কথা বলার আগ্নেয়গিরি ফাটাতে শুরু করেন। এই শনিবার আবার দেখা হয়ে গেল ভদ্রমহিলার সাথে। সাথে একজন ভারতীয়।
দেবাশীষের সাথে কি তোমার পরিচয় আছে? প্রশ্নের উত্তর অনেকটা ক্ষোভের সাথেই দিলাম, ’শহরের সবার সাথে পরিচয় থাকতে হবে এমনটা নয়’। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল ডাক্তার দেবাশীষ প্যাটেল পশ্চিম ভারতের বাসিন্দা এবং এ শহরে নামকরা একজন সার্জনের অধীনে ইন্টার্নিশিপ করছে। পরিচয় পর্বের শুরুতেই হিন্দিতে আলাপ চালাতে গেলে জোর করে থামিয়ে দিলাম। ’মহাশয়, হিন্দী তোমার ভাষা হতে পারে, আমার নয়। আমি ইংরেজি প্রেফার করি।’ অবাক হল, না রাগ করলো বুঝা গেলনা। তবে উওরে জানাল এ পর্যন্ত যত বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছে তাদের প্রায় সবাই হিন্দিতে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে। যার যার ব্যক্তিগত পছন্দকে সন্মান জানিয়ে প্রসঙ্গটা চাপা দিলাম। ডাঃ দেবাশীষ মিস ফেনিগানের ভাড়াটিয়া। শহরের সাউথ ভ্যালির দুই বেডরুমের বাড়িটার একটাতে ভাড়া থাকেন। রান্নাঘর, টয়লেট সহ বাসার সবকিছু শেয়ার করেন। দুজনের ভেতর সম্পর্কটা যে ভাড়ার ভেতর সীমাবদ্ধ নেই বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয়নি। যদিও কথা প্রসঙ্গে জানা গেল ডাক্তারের স্ত্রী নিজেও ডাক্তার এবং মিশিগানের কোন এক শহরে নিউরোলজির উপর কি একটা থিসিস লিখছেন। কথা বলার পাঁচ মিনিটের মাথায় আলোচনার বিষয়বস্তু ফুরিয়ে গেল। প্রচন্ড বিরক্তিতে এদিক ওদিক তাকালাম উদ্বার পাওয়ার আশায়। সারাহ নিজেই উদ্ধার করল এ যাত্রায়। কথা বলার যন্ত্র সে, তাই এক অধ্যায় হতে মুক্তি পেয়ে বিরক্তির নতুন অধ্যায়ে ধরা দিতে সময় লাগলো না।
তোমাকে হয়ত বলা হয়নি, গত সপ্তাহে সেন্ট্রাল স্ট্রীটের নব হীলে আবার আমরা জমায়েত হয়েছিলাম। জমায়েতের উদ্দেশ্যটা উঁচু গলায় ঘটা করে জানানোর পর পার্টির সবাই নড়েচড়ে বসল। আমিও তৈরী হলাম অল-আউট এট্যাকের জন্য। ইউনিভার্সিটি এলাকার নব হীল জায়গাটা বেশকিছু কারণে বিখ্যাত। ভাল কটা রেস্টুরেন্ট থাকায় আড্ডা জমাতে অনেকেই ঢু মারে ওখানটায়। মার্কিনিদের ইরাক বর্বরতার সময় প্রতি শনিবার স্বপরিবারে অনেকেই হাজির হত নব হীলে। হাতে প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো সেন্ট্রাল রোডের উপর। প্রতিবাদকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য চলমান গাড়ির ড্রাইভারদের হর্ন দিতে অনুরোধ করতো। এভাবেই আদায় করা হত জনসমর্থন। স্থানীয় মিডিয়া বেশ ফলাও করে প্রচার করতো এসব প্রতিবাদ। তখন হতেই নব হীল প্রতিবাদকারীদের পছন্দের জায়গা। প্রতি শনিবার ওখানটায় কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে থাকে এবং প্রতিবাদ জানায় হরেক রকম ইস্যুতে। সারাহ জানালো জুন মাস ধরে প্রতি শনিবার দলবল সহ সেও হাজির হয়েছিল নব হীলে এবং দাবি জানিয়েছিল বাংলাদেশ হতে গার্মেন্টস আমদানী বন্দের জন্যে। তার ভাষায় গণসচেতনা সৃষ্টির পাশাপাশি ফেডারেল সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্যেই নাকি এ চেষ্টা। আরও জানাল দেবাশীষ প্যাটেল ছিল প্রতিবাদের অন্যতম আর্কিটেক্ট।
সারাহ ফেনিগানের প্রতিবাদের মধ্যে কোন রাজনীতি ছিলনা। মানবিক বিবেচনায় এসব সাধারণ আমরিকান রাস্তায় নামে। ইরাকে অবৈধ যুদ্ধ, আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা, সিরিয়ায় গণহত্যা সহ অভ্যন্তরীণ অনেক ইস্যুতে ওরা প্রতিবাদ জানায়। অনেকটা পারিবারিক পিকনিকের মত একটা নির্দিষ্ট জায়গায় জমা হয়। ব্যস্ত ট্রাফিক আটকে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় এমন নয়। প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা হাতে গোনা যায়। চলামান গাড়ির হর্ন তাদের মূল টার্গেট। ইরাক যুদ্ধের সময় আমি নিজেও অনেক বার এ কাজে অংশ নিয়েছি। চাইলে এ যাত্রায় সারাহকে এড়িয়ে যেতে পারতাম, কিন্তু ওয়ালমার্টের সামনে দাঁড়িয়ে ওরা বাংলাদেশের পোষাক ক্রয় না করার জন্য ক্রেতাদের গণস্বাক্ষর নিচ্ছে এমন একটা খবর শোনার পর চুপ থাকতে পারলাম না। বাংলাদেশের পোষাক শিল্পের ভয়াবহ দৃশ্যের উপর সারাহর ছোটখাট লেকচারের পর মুখ খুলতে বাধ্য হলাম। পালটা উওর না দিয়ে টেনে আনলাম ভেতরের কিছু কথা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ মুহূর্তে ইসলামী জঙ্গিবাদ দমন তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক কর্মসূচীর অন্যতম এজেন্ডা। এ কাজে সরকার প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। যার প্রভাব পরছে দেশটার ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতির উপর। বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে জঙ্গিবাদের মুল উৎস তার দারিদ্র্য। অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের মত মৌলিক অধিকার বঞ্চিতদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেয়া খুব সহজ। দেশটার পোষাক শিল্পের বিকাশ অর্থনীতির সূচকে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এক অর্থে রোধ করেছে সম্ভাব্য জঙ্গিবাদের উত্থান ও উত্তরণ। এ মুহূর্তে উদীয়মান পোষাক শিল্পের উপর মার্কিন খড়গ অর্থনীতির উপর যেমন বিরূপ প্রভাব ফেলবে, পাশাপাশি খুলে দেবে সন্ত্রাসবাদের নতুন দুয়ার। যে দুয়ার দিয়ে সহজেই ঢুকতে পারবে তালেবানদের মত বৈরী মার্কিন সংগঠন। এক অর্থে আমদানী কর রেয়াত সংক্রান্ত ওবামা প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করার শামিল। বাংলাদেশের পোষাক শিল্পে যা ঘটছে তার মুল কারণ দেশটার কুশাসন এবং দেউলিয়া রাজনীতি। এ অন্যায় ও অপরাধের দায় কিছুটা হলেও মার্কিন সরকারকে নিতে হবে। কারণ তাদের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ মদদেই সৃষ্টি হয় তৃতীয় বিশ্বের দুর্নীতিপরায়ন স্বৈরাচারী সরকার। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। উনিশ শতকের শুরুর দিকে খোদ মার্কিন দেশে সাভার দুর্ঘটনার চাইতে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল পোষাক শিল্পে। চীনে হরহামেশা ঘটছে এসব। এতদিন বাকি বিশ্ব জানতে পারেনি তাদের শাসন ব্যবস্থার দেউলিয়াপনার কারণে। শ্রমের শোষন পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার। এ হাতিয়ার যত্রতত্র প্রয়োগ করেই পশ্চিমা বিশ্ব আজকের অবস্থানে এসেছে। বাংলাদেশে পোষাক শিল্পের অন্যতম পুঁজি তার সস্তা শ্রম। অবকাঠামোতে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ ও সস্তা শ্রম, এই দুই ফ্যাক্টরের সমন্বয় বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে অন্যতম রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা। দেশটার আভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থায় ঝেঁকে বসেছে দুর্নীতির মহামারি, তাই অন্যান্য দেশের মত উন্নতি হয়নি এর সাথে জড়িত শ্রমিকদের জীবন। এবং এখানেই জন্ম নিচ্ছে অসন্তুষ্টি এবং ধ্বংসাত্মক প্রতিবাদের সুনামি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ট্রেড ইউনিয়ন এর সমাধান হতে পারেনা। এ ধরণের ইউনিয়ন অতীতে রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করেছে মাত্র। শাসন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন না এনে মালিকদের গলায় ট্রেড ইউনিয়ন ঝুলিয়ে দেয়া হবে আত্মহত্যার শামিল। ভোক্তাদের বাংলাদেশি পোষাক শিল্প হতে দুরে সরিয়ে রাখার আন্দোলন সাময়িক কিছু পরিবর্তন আনতে বাধ্য করলেও এ সেক্টরে স্থায়ী সমাধান চাইলে মার্কিন সরকারকে কঠোর হতে হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবকাঠামোর উপর। রাজনীতিকে গণতন্ত্রের পথে না হাঁটিয়ে স্বৈরতন্ত্রের পথে হাঁটাতে যারা বাধ্য করছে তাদের বেলায় কঠোর অবস্থানে যেতে হবে প্রশাসনকে। তাতেই আসতে পারে কাঙ্খিত ফল।
’বুঝলাম তোমাদের বাস্তবতা। কিন্তু ভোক্তা হিসাবে দিনের পর দিন আমরা রক্তমাখা পোষাক ব্যবহার করে যাবো, এর যৌক্তিকতা জনগণের কাছে কিভাবে প্রমাণ করতে বল?’ - সারাহ্র প্রশ্নে থামতে হল আমাকে। সস্তা পণ্যের সাথে রক্তের সম্পর্ক অনেকদিনের, এ ইতিহাস হয়ত সারাহদের মনে থাকার কথা নয়। এসব জানতে ইতিহাস পড়তে হয়। এ ইতিহাস মার্কিনিদের জন্য সুখকর হওয়ার কথা নয়। ’তোমাদের উচিৎ ওবামা প্রশাসনের সাথে কথা বলা। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে ব্যবহার করা। বিশ্বের অন্য কোন নেতার জন্য হোয়াইট হাউসের দরজা ততটা খোলা নয় যতটা এই ব্যক্তির বেলায়। চাইলে তোমরা হরেক রকম সুবিধা আদায় করতে পার তাকে ব্যবহার করে। সিনেট ও হাউস দুই চেম্বারেই রয়েছে ডক্টর ইউনূস সীমাহীন প্রভাব’। ’তুমি কি শেখ মুজিবর রহমানের নাম শুনেছ?’ - প্রসঙ্গ বাদ হঠাৎ করেই ছুড়ে দিলাম প্রশ্নটা। ’দুনিয়ার সবাইকে আমাদের চিনতে হবে এর কোন বাধ্য বাঁধকতা নেই’। ভদ্রমহিলা মোক্ষম সময়ে ফিরিয়ে দিলেন আমার অসন্তুষ্টিটা। ’তা বলছি না, তবে তুমি ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গ টানছো বলে সামনে আসছে নামটা’। ’খুবই অভিনব, খুলে বল তো ব্যাপারটা’। ’আমাদের সরকার প্রধানের পিতা এই নেতা। ক্ষমতাকে পারিবারিক সম্পত্তি ভেবে প্রধানমন্ত্রী ধরে নিয়েছেন বাংলাদেশ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পৈত্রিক সম্পত্তি। দেশটার স্বাধীনতা উনার বাবার দেখা স্বপ্নের ফসল। তাই চাইছেন এই স্বপ্নচারীর নামের মাধ্যমেই বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সমসাময়িক দুনিয়ায় বাংলাদেশ মানেই ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস। গোস্বাটা এখানেই। প্রধানমন্ত্রীর পিতাকে কোনায় ঠেলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার শাস্তি পাচ্ছেন নোবেল জয়ী এই ডক্টর। দুর্নীতিতে পর পর চার বার চ্যাম্পিয়ন একটা দেশে এ ধরণের ঘটনা অভিনব হলেও অপ্রত্যাশিত নয়।’ - এখানেই থামতে হল আমাদের। সারাহ জানালো সামনের শনিবার কোন এক ওয়ালমার্টের সামনে প্রতিবাদ করবে ওরা। ডক্টর দেবাশীষও যোগ দেবে, আমাকেও যোগ দেয়ার আহ্বান জানালো। নিরামিষভোজী এসব ভারতীয়দের কুটিলতার সাথে পরিচয় অনেকদিনের। এ নিয়ে তর্ক করে উইকএন্ড পার্টির মজা নষ্ট করতে মন চাইল না। তাই দেবাশীষ বাবুকে বেশি বেশি তরকারি খাওয়ার উপদেশ দিয়ে বিদায় নিলাম।
নেত্রীর পদলেহনকারী একদল বিষাক্ত কুকুরের শীৎকারে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ওরিয়েন্টেড সোস্যাল মিডিয়া। মার্কিন দেশের অখ্যাত পত্রিকা ওয়াশিংটন টাইমস জিএসপি সংক্রান্ত খালেদা জিয়ার আর্টিকেল প্রকাশ করার পরই নাকি ওবামা সরকার বাংলাদেশকে দেয়া এই সুবিধা স্থগিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেতনা ব্যবসার বাজার নয় যে পত্রিকার আর্টিকেলের উপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে। এসব সিদ্ধান্তের জন্য রয়েছে দেশের আইন, আদালত, সিনেট, হাউস, প্রেসিডেন্ট, সিনেট কমিটি, হাউস কমিটি, লবিং গ্রুপ। সুরঞ্জিত চোর দারোয়ান পিওনের পকেট কাটতে গিয়ে হয়ত প্রেসিডেন্ট ওবামাকে গুলিয়ে ফেলছেন বাংলাদেশের রেলের চাকরি প্রার্থী ঘুষদাতা হিসাবে। তাই নেশাখোরের মত আবোল তাবোল বকছেন। নেত্রী পূজার সেবাদাসরা হয়ত ভুলে গেছেন, কিন্তু আমার মত ভুক্তভোগীরা চাইলেও ভুলতে পারবেনা ১৯৮৮ সালের কথা। হোসেন মোহম্মদ এরশাদের আমল তখন। গোটা দেশ বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে। সরকারের মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে গোটা বিশ্ব এগিয়ে আসছে সাহায্য নিয়ে। স্বার্থের সমীকরণে দুই দলের ’মহান’ দুই নেত্রী নিজ নিজ প্রতিনিধি পাঠালেন মার্কিন ষ্টেইট ডিপার্টমেন্টে। উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে যাতে সাহায্য দেয়া না হয় তা নিশ্চিত করা। কারণ সাহায্য এলে কথিত অগণতান্ত্রিক শাসন দীর্ঘায়িত হবে। এখানেই শেষ নয়। ২০০১ সালে ম্যানহাটনে টুইন টাওয়ার ম্যাসাকারের পর এ দেশে বসবাসরত মুসলমানরা ভয়ে আতংকে দিন কাটাচ্ছে। দেশটার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি একটার পর একটা দেশকে বৈরী দেশ হিসাবে ঘোষনা দিচ্ছে এবং ঐ সব দেশের নাগরিকদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ নিবন্ধনের আইন করছে। অনেক বিবেচনায় বাংলাদেশ ছিল তালিকার বাইরে। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি নিউ ইয়র্ক সফরে এলেন। বাংলাদেশকে পরবর্তী তালেবান রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনা দিলেন। উনার বৈজ্ঞানিক পুত্রকে ব্যবহার করে ভারতীয় পত্রিকায় বাংলাদেশে আল কায়েদার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আয়মেন আল জাওহারির লুকিয়ে থাকার অভিনব কাহিনী প্রকাশ করলেন। টনক নড়ে বুশ প্রশাসনের। বাংলাদেশিদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয় নিয়ন্ত্রণের লাল কালি। স্থায়ী অস্থায়ী অনেককেই ডাকা হয় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অফিসে। নিবন্ধনের জন্য শীতের সকালে হাজার হাজার বাংলাদেশিকে লাইন ধরতে বাধ্য করান চেতনার ঠিকাদার এই নেত্রী। খালেদা জিয়ার আর্টিকেল নিয়ে হাউ মাউ করে যারা নির্বাচনী মাঠ গরম করতে চাইছেন তাদের উপদেশ দেব নিজ নেত্রীর কাপড় ধরে টান দিতে। অনেক কুৎসিত কাহিনী লুকিয়ে আছে উনার পেটিকোটের নীচে। দেশপ্রেম এসব নেত্রীদের মুখের ভাষা ব্যবসার পুঁজি। কে কোন ঘাটে এ পুঁজি খাটিয়ে লাভবান হবে তা নিজ নিজ রাজনৈতিক সমীকরণের কৌশল। এসব কৌশলের সাথে সচেতন বাংলাদেশিরা অনেকটাই পরিচিত। দলীয় সেবা দাসদের বলবো ভোটের মাঠ গরম করতে চাইলে নতুন কিছু ছাড়ুন। ওয়াশিংটন টাইমসের কাহিনী পুরানো কাহিনী, অচল এবং দন্তহীন।