গোলাম আজম রায় সাগা আমার কাছে কেন জানি কুরবানী ঈদে গরু জবাই পর্বের মত মনে হয়েছে। ছোটবেলার কথা। ঈদের সকালে সদ্য কেনা গরুটা নিয়ে কার আগে কে নদীতে যাবে এ নিয়ে বাড়িতে হই হুল্লুর লেগে যেত। মেঘনার পানিতে গোসল এবং কিছুটা সাজগোজ করিয়ে তৈরী করা হত শেষ যাত্রার। গোয়ালঘর হতে হুজুরের খোলা তরবারির নীচ পর্যন্ত যাত্রার মাঝেও ছিল উল্লাস। তারপর থাকত মাটিতে শোয়ানো পর্ব। শরীরে আড়াআড়ি দড়ি আটকে ৪/৫ জনের ছোট্ট একটা দল হেঁচকা টানে ফেলে দিত মাটিতে। জবাই পর্বে নড়াচড়া যাতে শিকারকে লক্ষ্যচ্যুত না করে তার জন্যে তৈরী থাকতো দ্বিতীয় ফ্রন্ট। মাটিতে শোয়ানো মাত্র ওরা ঝাঁপিয়ে পড়তো। তারপর দৃশ্যপটে হাজির হতেন হুজুর। গায়ে সফেদ পাঞ্জাবি, মুখে শ্বেত শুভ্র দাড়ি, আর হাতে চকচকে তরবারি নিয়ে অনেকটা কল্প লোকের অতিমানবের মত এগিয়ে যেতেন ধরাশায়ী গরুর দিকে। ’বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে চারদিক কাঁপিয়ে এক গরু ও দশ মানবের লড়াই শেষ হতে সময় লাগতো মাত্র কয়েক সেকে¨। রায় কার্যকর করার পর রক্তের নদীর উপর পড়ে থাকতো নিথর একটা দেহ।
আসামী গোলাম আযমের রায়ের দিনটাও ছিল ঈদের দিনের মত, বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়ার জন্য। অনেকে সকাল হতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সময়মত গোলাম আজমকেও হাজির করা হয় তরবারির নীচে। কিন্তু হুজুর দেখে শুনে ঘোষনা দেন এ গরু বৃদ্ধ, অচল এবং কুরবানির অনুপযুক্ত। গরুকে গোয়ালঘরে বাকি জীবন কাটানোর আদেশ দিয়ে হুজুর ফিরে যান নতুন শিকারের সন্ধানে।
৯৬ বছরের এক বৃদ্ধের জন্য ৯০ বছর কারাদণ্ড। সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা আসলে সরকার-জামায়েত আতাত অথবা বয়সের প্রতি দুর্বলতা প্রদর্শন নয়। যে কোন বিচারে ৯০ বছর কারাদণ্ড উপযুক্ত শাস্তি, অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের চাইতেও চরম দন্ড। কিন্তু আমরা সবাই জানি বেচে থাকলে গোলাম আযমকে কখনোই ৯০ বছর জেলে আটকে রাখা যাবেনা। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মৃত্যুঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। সামনের নির্বাচনে দলটার পরাজয় প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামাত জোটের জন্য খুলে দেবে ক্ষমতার দুয়ার। পাশাপাশি দেশের উচ্চ আদালতে বিচারক লীগকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসবে জাতীয়তাবাদী বিচারক দল। ক্ষমতার মসনদে এ পরিবর্তন স্বাভাবিক ভাবে বদলে দেবে বিচার ও শাস্তি সমীকরণ। ৯০ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত গোলাম আযম ৯ মাসের ভেতর বেরিয়ে আসবেন। ততদিনে জাতিকে গেলানো হয়ে যাবে বিচারক লীগের দলবাজির কাহিনী।
গোলাম আযম, সাইদি, কাদির মোল্লাদের শাস্তি কোন সমস্যা নয়, হোক তা জেল অথবা মৃত্যুদণ্ড। সমস্যা আমাদের বিচার ব্যবস্থা। কাউকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চাইলে প্রথমে ঝুলাতে হবে দেশের বিচারকদের।