তথ্য আছে, আ লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে।
আ লীগকে আবার ক্ষমতায় আনুন, বাংলার চেহারা পালটে দেব।
বঙ্গবন্ধু, ভাসানি কিংবা সোহরাওয়ার্দী এলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পরাজয় এড়াতে পারবেনা।
উপরের ছবিটা আমার একমাত্র মেয়ে লিয়ার। বয়স সাত মাসের কিছু বেশি। জটিল পৃথিবীর কোন জটিলতাই তাকে এখন পর্যন্ত ছুতে পারেনি। আগুন ও পানির পার্থক্য বুঝার বয়স হয়েছে কিনা হয়ত সৃষ্টিকর্তা বলতে পারবেন। তবে খাবারের তাপমাত্রায় সামান্য হেরফের হলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং চোখের পানি ও নাকের পানিতে একাকার হয়ে প্রতিবাদ জানায়। বাবা হিসাবে আমি যা বুঝার তা বুঝে নেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র পুত্র এখন সস্ত্রীক দেশে। এসেছেন দেশের ইফতার পলিটিক্সে অংশ নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করতে। সোজা বাংলায়, প্রধানমন্ত্রী সন্তানকে ডেকে এনেছেন এবং আশা করছেন এ আগমন হয়ত আওয়ামী লীগের ডুবন্ত নৌকার পালে হাওয়া লাগাতে সক্ষম হবে। পুত্র নিজেই ঘোষনা দিয়েছেন প্রতিপক্ষের কথিত মিথ্যাচার ঠেকাতে বাধ্য হয়েছেন আসতে এবং কৌশল হিসাবে সামনের এক মাস মার ’আসমান’ সমান উন্নতির ফিরিস্তি জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। দেশের ১৬ কোটি জনগণের প্রায় সবাইকে হয়ত নেতা-নেত্রীর সন্তানরা আমার মেয়ে লিয়ার মতই অবুঝ, নাদান ভেবে থাকবেন। গত চার বছর ধরে তারা যা দেখছে, শুনছে এবং পড়ছে তা বিদেশ হতে উড়ে আসা কল্পলোকের রাজপুত্রের এক মাসের বয়ানে ধুয়ে মুছে পবিত্র হয়ে যাবে, এমনটা ভেবে থাকলে হিসাবে কোথাও গোলমাল হচ্ছে। আমার সাত মাসের মেয়ে আহারে নরম গরমের তারতম্য ধরতে পারলে ৪২ বছর বয়স্ক একটা জাতিও তার প্লেটে রাজপুত্রদের পরিবেশন করা খাবারের পার্থক্য বুঝতে পারার কথা। প্রধানমন্ত্রী অথবা দেশের কোন রাজনীতিবিদের সন্তান-সন্ততি সমালোচনার টার্গেট হওয়ার কথা নয়। তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে রসালাপও এক ধরণের অনধিকার ও অপ্রয়োজনীয় চর্চা। তবে আমাদের দেশের দুই নেত্রীর দুই সন্তানকে সামাজিক ও মানবিক ক্যাটাগরিতে ফেলে রেহাই দেয়ার কোন অবকাশ আছে বলে মনে হয়না। প্রথমত দুজনই রাজনীতিতে সক্রিয় এবং প্রধানমন্ত্রীর সন্তান তার মার কথিত আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা। সরকারী কোষাগার হতে মাসিক ১৫ হাজার ডলারও উত্তোলন করে থাকেন। এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর যে কোন উপদেষ্টার যে কোন তথ্য সরকারী বক্তব্য হিসাবে সমান গুরুত্ব পাওয়ার কথা। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতেই দাবি করছেন তথ্য থাকার। কিন্তু একই ভাষনে স্ববিরোধী কিছু কথা বলে নিজের দাবিকে নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন। তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে। দল ক্ষমতায় আসছে এমন তথ্য যদি থেকেই থাকে তাহলে নতুন করে ক্ষমতায় আনার দাবি কিছুটা হলেও জাতিকে বিভ্রান্ত করবে। জনাব জয় হয়ত ভুলে গেছেন এটা ২০০৮-০৯ সাল নয়। এয়ারপোর্ট হতে সুধাসদন পর্যন্ত ফুলের পাপড়ি বিছানোর অধ্যায় পার হয়ে এসেছে জাতি। এটা ২০১৩ সাল। আওয়ামী লুটের ভরা বসন্ত এখন অনেকটাই ম্রিয়মাণ, প্রদীপের মত নিভু নিভু করছে ক্ষমতার তখত তাউস। দলের সব স্তরের নেতা-নেত্রীরা এখন নিজেদের লুটের মাল কি করে নিরাপদ করা যায় সে চেষ্টায় ব্যস্ত। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সম্পদ পাচার করার মিছিলে নেমেছে লুটেরা বাহিনী। জনাব জয়ের ঘনিষ্ট আত্মীয়, আওয়ামী নেতা, দলের ১২ সদস্য বিশিষ্ট প্রেসিডিয়ামের সদস্য, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, জনাব কাজী জাফরুল্লাহ বৃটিশ ভার্জিন আয়ল্যান্ডে নিজ নামে, স্রী ও সন্তানদের নামে ব্যবসা তালিকাবদ্ধ করেছেন। আওয়ামী অন্দর মহল হতে বলা হয় আদর্শের নিবেদিত এই সৈনিক কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক এবং নির্বাচনের রাতেই পালানোর সব রাস্তা পাঁকা করে রেখেছেন।
জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার তালিকাটা অস্বাভাবিক লম্বা। ভারতের নৈনিতলার সেন্ট যোশেফ কলেজ, তামিল নাডুর পালানি হিলস’এর কদাইকানাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। ব্যঙ্গালুর ইউনিভার্সিটি হতে কম্পিউটার সাইন্সে ব্যাচেলর ডিগ্রি, টেক্সাসের আর্লিংটন ইউনিভার্সিটি হতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুল অব গর্ভমেন্ট হতে পাবলিক রিলেসনস মাস্টার্স ডিগ্রি। কেবল পিএইচডিটা বাকি। তা করতে পারলে একাডেমিক শিক্ষার সবকটা সিড়ি ডিঙ্গানো শেষ হয়ে যেত। এত গুলো ডিগ্রি সহ একজন শিক্ষিত যুবকের বাংলাদেশের রাজনীতিতে পা রাখায় জাতি হিসাবে আমাদের আশান্বিত হওয়ার কথা। কিন্তু উচ্চ ডিগ্রিধারী এই প্রবাসী দেশে নেমেই যে ভাষন দিলেন তাতে আর যাই হোক রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেননি, বরং অদ্ভুত কথাবার্তা বলে এটাই প্রামাণ করেছেন আওয়ামী হরিলুট নেটওয়ার্কের তিনিও একজন সদস্য। অনেকে আমার সাথে দ্বিমত করবেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর সন্তান সিন্ডিকেটের একজন সাধারণ সদস্য হবেন তা কেবল অসম্ভবই নয়, অপমানজনকও বটে। অন্তত সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের কারিগরী উপদেষ্টা নিয়োগের বিড প্রসেসে সে সব বিদেশি কোম্পানী অংশ নিয়েছিল তারা তাই বলবে। আইটি উপদেষ্টার অন্তরালে গোটা দেশের ভুবনেশ্বর হয়ে মার্কিন মুলুকে ধরাছোঁয়ার বাইরে বাস করছেন তিনি। এক এইচটি ইমামের হাত দিয়েই পাচার করেছেন হাজার কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর আরেক উপদেষ্টা জনাব ইমামের কন্যা মাসে দুবার করে নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক করছেন এবং উঁচুমহলের নির্দেশে বিমানবন্দরের সবাইকে আন্ধা-কানা বানিয়ে অবাধে নিয়ে যাচ্ছেন যা নেওয়ার। অন্দর মহলে আলোচিত হয় সাংবাদিক সাগর-রুণি হত্যার পেছনের কারণও নাকি বড় অংকের পাচারের তথ্য প্রমাণ। প্রমাণ উদঘাটনের নেটওয়ার্কে জড়িত বাকিদেরও ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে না ফেরার দেশে। যাদের মধ্যে অন্যতম সিলেটের ইলিয়াস আলী ও সৌদি কূটনীতিবিদ। সবটাই গসিপ, সত্যতার পক্ষে কোন প্রমাণ অথবা স্বাক্ষী নেই। বলা হয় প্রধানমন্ত্রী যে করেই হোক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর, কারণ এ যাত্রায় ক্ষমতা ফসকে গেলে যেসব তথ্য বেরিয়ে আসবে তা কেবল রাজনৈতিক কবরই নয়, শারীরিক কবরের রাস্তাও মসৃণ করতে পারে।
দলকে আবার ক্ষমতায় আনলে তিনি নাকি বাংলার চেহারা বদলে দেবেন। কথাটা বোধহয় একেবারে মিথ্যা বলেননি। আসলেই বদলে দেবেন। গেল সাড়ে চার বছরে তিনি অনেক কিছুই বদলে দিয়েছেন। ভার্জিনিয়ার সুরম্য প্রাসাদে বসে জাতিকে ঘড়ির কাটা ঘুরাতে বাধ্য করেছেন, আড়িয়াল বিলে জেএফকে এয়ারপোর্ট বানিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব বিমান চলাচলের সেন্টার বানানোর অলীক, অসার স্বপ্ন গেলাতে বাধ্য করেছেন, দোয়েল নামক ল্যাপটপ চমকের আড়ালে শত শত কোটি টাকা লুটপাটের ব্লুপ্রিন্ট হজম করতে বাধ্য করেছেন। এই তিনিই শোনাচ্ছেন নতুন করে চেহারা বদলানোর কেচ্ছা। আওয়ামী কলেরায় জাতি এমনিতেই জর্জরিত। নতুন কোন মহামারী হজম করার মত শরীর ও স্বাস্থ্য নেই তাদের। তাই মাথায় ভাসানি টুপি আর পিতামহের কায়দায় আঙ্গুল উচিয়ে জনাব জয়ের এসব তত্ত্ব বানি আশার আলো নয়, বরং ভয় ঢুকিয়ে দেয় আমাদের অস্তিত্বে। এতগুলো নামি ডিগ্রি নিয়ে যে ব্যক্তি আজ পর্যন্ত একটা চাকরি যোগার করতে পারেনি, ১৫ কোটি জনসংখ্যার একটা জাতিকে বদলে দেয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে অন্যায় কিছু হবে বলে মনে হয়না। জনাব জয়কে বোধহয় কেউ শেখায়নি মানুষের স্বাধীনতা কেবল তার ভৌগলিক স্বাধীনতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই যে কোন স্বাধীনতার শেষ গন্তব্য। ১৯৭১ সাল ছিল ভৌগলিক মুক্তির যুদ্ধ। সে যুদ্ধে গোলাম আজমরা ছিল রাজাকার, খুনি ও ধর্ষক, যার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র নয় মাস। আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধের বয়স ৪২ বছর। জনাব জয় গংরা হচ্ছেন এই ৪২ বছর স্থায়ী মুক্তিযুদ্ধের রাজাকার। আর এদের হাতেই ধর্ষিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, অর্থনৈতিক মুক্তি। নয় মাসের অপরাধে গোলাম আজমদের ফাঁসিতে ঝুলানো গেলে, দশকের পর দশক ধরে যারা দেশকে লুটেপুটে চাটার মত খেয়ে কংকাল বানাচ্ছে তাদের দড়িতে ঝুলানোর দাবির ভেতরও যৌক্তিকতা আছে। সময় হলে নিশ্চয় উঠবে সে দাবি।
সময় এখন আওয়ামী লীগের নয়। পীর হাবিবুর রহমান যথার্থই বলেছেন, ভাসানি, সোহরাওয়ার্দী অথবা খোদ শেখ মুজিবর রহমান এলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পরাজয় এড়াতে পারবেনা। জনাব জয় যত দ্রুত সত্যটা উপলব্ধি করবেন ততই মঙ্গল, যেমন দলের জন্য তেমনি উনার ব্যক্তিগত জীবনে। বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতি করতে চাইলে দেশেই বাস করতে হবে। দেশের আলো বাতাসের সাথে পরিচিত হতে হবে। রাজনৈতিক খুন, গুম আর অন্তহীন ট্রাফিক জ্যামের ভেতর জীবন কাটাতে হবে। চুরি করলে তা-ও করতে হবে দেশে বসে। বিদেশি স্ত্রী নিয়ে হঠাৎ হঠাৎ উড়ে এসে তত্ত্ব বয়ান প্রসব করলে সে শিশু আলোর মুখ দেখবে না। দুনিয়াটা এখন খুব ছোট। মার্কিন দেশে বিনা চাকরিতে ১০ মিলিয়ন ডলারের স্থাবর সম্পত্তি বানালে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এ প্রশ্নের যোগ্য জবাব না থাকলে রাজনীতিতে না আসায়ই শ্রেয়।
মার ক্ষমতার মোহের সহায়ক হতে চাইলে ২০১৪ নয়, বরং ২০২০ সালের দিকে চোখ ফেরানো উচিৎ বিশিষ্ট এই বৈজ্ঞানিকের।