লেখায় কোন চরিত্রকে প্রাধান্য দেব ঠিক বুঝতে পারছিনা। একদিকে সাংসদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, অন্যদিকে প্রফেসর ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস। দুজনই স্ব স্ব ক্ষেত্রে ’মহিরুহ’। সিদ্দিকী সাহেবের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি জানা নেই। ইউনূস স্যারেরটা জানা আছে। উনি নামের আগেই সেটা ব্যবহার করেন। ’সাংসদ’ নিশ্চয় যোগ্যতার মাপকাঠি নয়, বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে। বরং আমার বিচারে এবং বাংলাদেশের সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে একজন সাংসদ মূলত চাঁদাবাজ, দখলবাজ, খুনি, ধর্ষক ও সরকারী সম্পদ লুটেরা হিসাবে পরিচিত। দুয়েকজন ব্যতিক্রম থাকলে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বেচে থাকার জন্য লেখাপড়াই যাদের একমাত্র পুঁজি তাদের কাছে ডক্টরেট ডিগ্রি অনেকটা শেষ ঠিকানার মত। বলা যায় জীবনের মঞ্জিলে মকসুদ। এ মঞ্জিলে পৌছানোর সাধ ও সাধ্য সবার থাকেনা। এ বিবেচনায় সাংসদ হওয়া অনেকটাই সহজ। অঢেল অর্থকড়ি, নামের শেষে দুয়েকটা খুন-খারাবির রেকর্ড এবং নেত্রী মনোরঞ্জনের গুন থাকলেই আসা যায় রাজনীতির মূল ধারায়। অনেকটা প্রকৃতির অমেঘো পরিণতির মতই এ ধারা একজন রাজনীতিবিদকে নিয়ে যায় সাফল্যের শেষ ঠিকানায়, মন্ত্রিত্ব। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস এবং জনাব লতিফ সিদ্দিকী নিজ নিজ ক্যারিয়ারের মেঠোপথ পেরিয়ে পৌছে গেছেন সাফল্যের শেষ চূড়ায়। একজন নিজের মেধা, গুন এবং ব্যক্তিত্বের বলে জয় করে নিয়েছেন বিশ্বের কোটি কটি মানুষের হৃদয়। অন্যজন মন্ত্রিত্বের রশ্মি ছড়িয়ে জয় করে যাচ্ছেন নেত্রীর মন। মন জয় করা মন্ত্রিত্ব নামক মৃগয়া শিকারে বাধ্যতামূলক ফ্যাক্টর। বলা হচ্ছে সামনের নির্বাচনে ১৫০ এম্পি, মন্ত্রী নমিনেশন পাচ্ছে না। সংগত কারণেই ভয় ঢুকে গেছে অনেক বিগ ফিশদের মনে। পাশাপাশি প্রসারিত হচ্ছে প্রতিযোগতার মাঠ। টিকে থাকার দৌড়ে জনাব লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান অনেকটাই পোক্ত। একদিকে যেমন যোগাড় করছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, পাশাপাশি ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মোহম্মদ বখতিয়ার খিলজির লম্বা হাতের মত মুখ ব্যবহার করে জয় করে নিচ্ছেন নেত্রী বন্দনার সব গুলো মাউন্ট এভারেষ্ট। সাভারের রানা প্লাজার সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় সরকার কমিশন বানিয়ে জানতে চেয়েছিল উপর্যুপরি এসব দুর্ঘটনার কারণ এবং এ ব্যাপারে গার্মেন্টস মালিকদের গাফলতি ও ব্যর্থতার কারণ সমূহ। কমিশনের প্রধান করা হয়েছিল পাটমন্ত্রী জনাব সিদ্দিকীকে। তদন্ত কাজ শুরুর আগেই মন্ত্রীর কাজ মন্ত্রী সেরে নেন। মালিকদের হুমকি দিয়ে ৫ কোটি টাকা নিজের নির্বাচনী ফান্ডে জমা করে নিশ্চিত করেন সাংসদ ও মন্ত্রী হওয়ার শর্ত সমূহের অন্যতম শর্ত।
ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস। পৃথিবীর অন্যতম সফল আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রামীন ব্যাংকের রূপকার। হাজার হাজার কোটি টাকা মূলধন এই ব্যাংকের। গ্রাহক রাস্তার ভিখারি হতে শুরু করে ছিন্নমূল গৃহবধূ পর্যন্ত। বিনা পয়সার গম ও ঢেউটিন বিলিয়ে আজীবন দাসত্বে রাখার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কিছুটা হলেও বৈচিত্র্য আনেন এই ব্যাংকের মাধ্যমে। দেশের সবকটা বানিজ্যিক ব্যাংক যেখানে লতিফ সিদ্দিকীদের মত সাংসদ ও মন্ত্রীদের ভয়াল থাবায় দেউলিয়া হওয়ার পথে, একই দেশে, একই আসমানের নীচে গ্রামীন ব্যাংকের ঋণ আদায়ের পরিসংখ্যান অনেকটা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল। এ ধরণের অবিশ্বাস্য ফেনোমেনন বিশ্বকে অবাক করে দেয় এবং খুব শীঘ্রই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশি এই শিক্ষকের। পশ্চিমা দুনিয়ার ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় ধুকছে। শক্তিশালী মার্কিন অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা, সিটি ব্যাংকের মত ব্যাংক গুলোও ফতুর হওয়ার দাঁড়প্রান্তে গিয়েছিল। ঠিক এমন একটা অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চুরি চামারিতে চার বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মত একটা দেশের ব্যাংক কি করে তার কো-লেটারাল বিহীন ঋণ আদায় শতকরা ৯৮ ভাগে ধরে রাখতে পারে তা গোটা বিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস নামের শুরুটা এখানেই। বিশ্বে এমন কোন রাষ্ট্র অথবা সরকার প্রধান নেই যিনি এই ডক্টরের উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে আগ্রহ দেখান নি। বিদেশে বিখ্যাত এবং স্বদেশে উপেক্ষিত এই ডক্টরের নামের নীচে চাপা পরে অকাল মৃত্যুবরণ করেন দেশের জীর্ণ, শীর্ণ, মানসিক ভাবে বিকলাঙ্গ রাজনীতির অনেক বাঘা খেলোয়াড়। প্রতিশোধ পর্বের শুরুটাও বোধহয় এখানে। যে ব্যক্তির জন্য পৃথিবীর সব দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের দরজা ২৪/৭ খোলা থাকে তার জন্য বন্ধ হয়ে গেল গ্রামীন ব্যাংকের দুয়ার। কারণ দেখানো হল উনার বয়স! অথচ গ্রামীন ব্যাংকের সেনশেসন কাটিয়ে উঠার আগেই ডক্টর মোহম্মদ ইউনূস বিশ্বকে ডাক দিলেন সোস্যাল ইনভেষ্টমেন্টে শরিক হতে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কোর্স হিসাবে পড়ানো হচ্ছে এই ইনভেস্টমেন্ট থিওরি।
জনাব লতিফ সিদ্দীকি দাবি করছেন তিনি যদি এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে জেলে পুরতেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে কথা বলে এই ডক্টর যে ’অপরাধ’ করেছেন তা নাকি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। রেফারেন্স হিসাবে টেনে এনেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর মোজাম্মেল বিচারকের রায়। আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করেন দেশে সুশাসনের মূল অন্তরায় কি, আমি বিনা দ্বিধায় উত্তর দেব দেশের বিচার ব্যবস্থা। অনেক আগে কোন এক ব্লগে লিখেছিলাম আমাকে যদি সরকার প্রধান হওয়ার সুযোগ দেয়া হয় প্রথমেই হাত দেব দেশের উচ্চ আদালতে। দলীয় ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত বিচারকদের কোন এক প্রমোদতরীতে উঠিয়ে ছেড়ে দেব বঙ্গোপসাগরে। সাথে থাকবে মদ এবং মেয়ে মানুষ। এ তরী কেবল ভাসতে থাকবে। শর্ত থাকবে কোন বন্দরে ভিড়তে পারবেনা। এভাবে সুখের সাগরে তিলে তিলে হত্যা করবো ১৫ কোটি মানুষের দেশকে নষ্ট করার মূল কারিগরদের। জনাব মোজাম্মেল এসব বিচারকদেরই একজন। তিনি নেত্রী পুজারী, রাজনীতির সেবাদাস। এসব কুলাঙ্গারদের রায়কে আইন মেনে নেয়া আর একজন দ্বিচারীনির পতি ভক্তির স্বীকৃতি একই জিনিস। জনাব সিদ্দীকি চাইলে এখুনি ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে জেলে পাঠাতে পারেন। প্রয়োজন শুধু গ্রামে গঞ্জের আদালতে একটা মামলা এবং নেত্রীর আশির্বাদ। মহিউদ্দিন খান আলমগীর সাহেব বুক চিতিয়ে এগিয়ে যাবেন হ্যান্ডকাফ নিয়ে। হয়ত বিএপির ফখরুলদের কায়দায় ডান্ডাবেড়ি ঝুলিয়ে হাজির করবেন আদালত পাড়ায়। রাজনীতির এসব উচ্ছিষ্টদের হয়ত জানা নেই পৃথিবীটা গোল এবং নিত্য ঘুরছে। ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে গ্রেফতার করার জৈব লালসা এনাকোন্ডা সাপ হয়ে ছোবল হানবে লতিফ সিদ্দীকির পশ্চাৎদেশে। এ বিষে কেবল সিদ্দীকি সাহেব নিজে নন, সাথে নিয়ে যাবেন উনার দশাননা মাকে।
পাপ মোচনের অনেক রাস্তা আছে। জেল-হাজত তার অন্যতম। পৃথিবীর যে কোন দেশে লতিফ সিদ্দীকির স্থায়ী ঠিকানা হত জেলের চার দেয়াল। ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা করার ডাক দিয়ে একজন বেজন্মা রাজনীতিবিদ মন্ত্রীর আসনে বসে থাকতে পারেন এ বোধহয় মা দূর্গার দেশেই সম্ভব। আর কটা মাস বাকি মাত্র। তারপর ধ্বস নামবে মার সিংহাসনে। দশহাত ওয়ালা মা বনে যাবেন দুই হাত ওয়ালা ঘসেটি বেগমে। জনাব লতিফ সিদ্দীকির তাফালিং কোন গঙ্গায় বিসর্জিত হয় তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকবো। তবে বিপদে পরলে ধর্ণা দিতে পারেন ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসের দুয়ারে। তিনি বড় মাপের মানুষ। কাউকে সাহায্য করতে দ্বিধা করবেন না। চাইলে গ্রামীন ব্যাংকের কোন ব্রাঞ্চে দারোয়ান পদের জন্যও তদবির করতে পারেন।