স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব মহিউদ্দিন খান আলমগীর নিয়মিত মদ্যপানে অভ্যস্ত। উনার চেহারাও সে স্বাক্ষী দেয়। অর্থনৈতিক বিবর্তন মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন আনে। এই ধারায় বাংলাদেশের আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠা নব্য কোটিপতিদের অভ্যাস তালিকায় মদ এখন নৈমত্তিক সংযোজন। এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করার মত দেশে খুব বেশি সমাজসেবক অবশিষ্ট নেই। কারণ কম বেশি অনেকেই এ নিষিদ্ধ জিনিসটার প্রতি আকৃষ্ট। যে সব ধর্মজীবি ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে নেশার উপর ধর্মীয় বিধিনিষেধ আউড়ে জীবিকা নির্বাহে অভ্যস্ত, ইদানিং তাদের অনেককেও আবিস্কার করা যায় এ লাইনে। মদ এখন বিত্তশালীদের বিনোদনের উপাদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং মধ্যবিত্তের আঙ্গিনা ডিঙ্গিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্তের দুয়ারে পর্যন্ত কড়া নাড়ছে। ভাল হোক অথবা মন্দ হোক মদ সংস্কৃতি ধীরে ধীরে স্থায়ী আসন করে নিচ্ছে আমাদের সমাজে। তাই ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম ও তার কন্যা এক টেবিলে বসে পানাহার করলে যেমন অবাক হইনা, তেমনি অবাক হইনা মদের পিপা সহ আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মত রাজনীতিবিদ ধরা পরলে। এক কালের চৌকশ আমলা মখা আলমগীর সদ্য গজিয়ে উঠা কোটিপতি নন। সচিব হিসাবে এ কাজটা তিনি অনেক আগেই সমাধা করে রেখেছেন। সেই তিনিই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে আহ্বান জানিয়ছেন নির্বাচনের দিন দুপুর পর্যন্ত মদ্যপান করতে (সরাবন তহুরা)। তবে এই পানাহার সেশনের সময় ও ভেনুর উপর যেহেতু কোন দিক নির্দেশনা নেই তাই আমরা ধরে নিতে পারি হয়ত নিজ বাসভবনেই দাওয়াত করেছেন। মখা আলমগীর কেবল একজন মন্ত্রী অথবা এক কালের জাদরেল আমলাই নন, উচ্চশিক্ষিত বটে। লেখাপড়ার সবকটা সিড়ি ডিঙ্গিয়ে আহরণ করেছেন পিএইচডি ডিগ্রি। বস শেখ হাসিনার মুখে যে সব খিস্তি খেউড় শোভা পায় একজন উচ্চ শিক্ষিত হিসাবে জনাব আলমগীরের মুখে একই ভাষা কতটা শোভনীয় তা বিবেচনার দাবি রাখে। শেখ হাসিনা কাগজে কলমে শিক্ষিত হলেও তার সবটাই একাডেমিক এবং শোনা যায় বাবা শেখ মুজিবকে খুশি করার জন্য উপহার হিসাবে দেয়া হয়েছিল এ ডিগ্রী। এর সত্যতার পক্ষে অবশ্য কোন প্রমাণ নেই। তবে একাডেমিক শিক্ষাই শেষ শিক্ষা নয়, একটা সভ্য সমাজে বাস করতে গেলে আন্তসামাজিক সম্পর্কের সবকটা কলকব্জা ও নাটবল্টু্র যথাযত মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সন্মান শ্রদ্ধার অপর নামই সুসম শিক্ষা। বলতে অসুবিধা নেই, এ মূল্যায়নে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা যে কোন বস্তি শিক্ষার চাইতেও নিকৃষ্ট। যেহেতু নেত্রী তুষ্টি মন্ত্রিত্বের প্রধান ও অন্যতম শর্ত, ধরে নিতে পারি মখা আলমগীর কেবল মন্ত্রিত্ব ধরে রাখার খাতিরেই এতটা নোংরামিতে নেমেছেন।
কদিন আগে অপর এক মন্ত্রী হরতালকারীদের ঘরে ঢুকে হত্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এসব হিটলার-মুসোলিনি ধাঁচের কথায় ভয় পাওয়ার চাইতে কেন জানি অসহায়ত্বটা ই বেশি প্রকাশ পায়। বিশাল সমুদ্রে মৃত্যু পথযাত্রী নাবিকেরা খড়কুটা পেলেও নাকি আকড়ে ধরতে চায়। মখা আলগীরের শরাবন তহুরা তত্ত্ব তেমনি একধরনের কুটা, যার আড়ালে আসল বাস্তবতা সাময়িক হলেও ভুলতে চাইছেন। এ মিছিলে তিনি অবশ্য একা নন। লতিফ সিদ্দিকী, হাসানুল হক ইনু, মোহম্মদ শাজাহানের মত মন্ত্রীরা যেমন আছেন, তেমনি আছেন হানিফ এবং নাসিমের মত রাজনীতিবিদেরা। আওয়ামী নৌকা ফুটা হয়ে আছে আজ প্রায় অনেকদিন। হয়ত চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনের সময় হতেই। এ ফুটা দিন দিন বড় হচ্ছে। ছাত্রলীগ যুবলীগের তান্ডব, ব্যাংক বীমা লুট, মন্ত্রী এমপিদের পাহাড় সমান দুর্নীতি, সে ফুটা বড় হয়ে বিশাল খাদের সৃষ্টি করেছে কেবল। সে খাদ জয় ওয়াজেদের সস্তা চমক আর মখা আলমগীরদের অভূতপূর্ব নোংরামি দিয়ে ভরাট করার সময় পার হয়ে গেছে। ইংরেজিতে যাকে বলে ডেমেজ হেজ অলরেডি বিন ডান। ক্ষমতার মসনদ হতে আওয়ামী লীগকে বিদায় নিতে হবে, ভাগ্যলিপি ইতিমধ্যে লেখা হয়ে গেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং করে তা বদলাতে চাইলে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের পরিণতি যেমন পাকিস্তানের পিপিপির চাইতেও ভয়াবহ হতে পারে, তেমনি ব্যক্তি হিসাবে মখা আলমগীরকেও হয়ত বরণ করতে হতে পারে লগি-বৈঠার ভাগ্য। সময়ই কথা বলবে। যতদূর জানি শরাবন তহুরা বেহেস্তের পুরস্কার। মন্ত্রীদের এখন বেহেশত নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নয়, বরং দোজখের সরবরাহ নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করার সময়। নাজিম উদ্দিন রোড অথবা কাশিমবাজার কুঠির দোজখ।
http://www.amadershomoybd.com/content/2013/09/22/news0167.htm