শেখ হাসিনা নামক একজন স্বদেশি এবং সরকার প্রধানের সাথে কেন জানি ইসরাইল নামক রাষ্ট্রের একটা সমান্তরাল খুজে পাই। হতে পারে এ আমার অসুস্থ মস্তিস্কের বিকৃত আবিস্কার। ইদানিং দেশে যা চলছে তাতে মস্তিস্কে সত্যি যদি ইতি উতি ঘটে থাকে খুব কি দোষ দেওয়া যাবে? কেবল আমি নই, আমার মত দেশের কোটি কোটি মানুষ এখন বিকৃতির চরম পর্যায়ে এবং প্রাত্যহিক জীবনে যা করছে অথবা বলছে তা কোনভাবেই সুস্থ নাগরিকের কাতারে ফেলা যাবেনা। এমনটাই আমাদের জীবন যার চালিকা আমাদের জাতীয় রাজনীতি। পনের কোটি জনসংখ্যার একটা জাতি একজন মহিলার ইচ্ছার উপর এতটাই জিম্মি তিনি হাসলে আমাদের হাসতে হয়, কাঁদলে চোখে মরিচ লাগিয়ে হলেও কাঁষসযায়া৪এদতে হয়। এর অন্যথা হলে একদিকে ছাত্রলীগ যুবলীগ, থানা পুলিশ এবং পাশাপাশি দেশের নিম্ন এবং উচ্চ আদালত। সত্যজিত রায় বোধহয় এমন একজনের কথা মাথায় রেখেই কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের মত হীরক রাজ্য আবিস্কার করেছিলেন। অনেকে বলবেন এ কেমন কথা, ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রের তুলনা? হীরক রানীর সাথে কোন এক হীরক রাজার তুলনা হতে পারে, তাই বলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরাইলের! আসছি সে প্রসঙ্গে।
ষাট লাখ (ষাট মিলিয়ন নয়) ইহুদি প্রাণ হারিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। হিটলারের নেত্রীত্বে নাৎসি বাহিনীর হাতে দলিত মথিত হয়েছিল তাদের জীবন। গিনিপিগের মত ব্যবহূত হয়েছিল হত্যা গবেষনায়। স্বভাবতই হিটলার বাহিনীর পরাজয়ের পর পর গোটা বিশ্বের সমবেদনা ছিল তাদের প্রতি। পুনর্বাসনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকার অনেক দেশ খুলে দিয়েছিল তাদের দুয়ার। কিন্তু সহানুভূতিকে পুঁজি করে পরবর্তীতে ইহুদিরা যা করল তার অনেকটা তুলনা করা চলে সেই নাৎসিদের সাথেই। গণহত্যায় যাদের কোন ভূমিকা ছিলনা সেই আরবদের ঘাড়ে চেপে বসল অনেকটা হায়েনার মত। তাদের জায়গা জমি দখল করে কেবল সন্তুষ্ট থাকলো না, বরং নিজ দেশে প্যালেস্টাইনিদের রিফিউজি বানিয়ে আজীবনের জন্য শোষণের যাঁতাকলে আটকে দিল। এর পরের ইতিহাস ভয়াবহ। যুদ্ধ ও গায়ের জোড়ে বদলে দিল মধ্যপ্রাচ্যের ম্যাপ। শেখ হাসিনার উত্থানটাও ছিল প্রায় একই রকম। ৭৫’এর নির্মম হত্যাকাণ্ড¨ কেড়ে নেয় মা, বাবা সহ পরিবারের প্রায় সবার জীবন। ভাগ্যক্রমে বিদেশ থাকায় সিবলিং সহ নিজে বেচে যান। সেনাবাহিনীর একদল তরুন অফিসার এবং আওয়ামী লীগের সুযোগ সন্ধানী কিছু রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে পৈশাচিকতার যে দানব জন্ম দিয়েছিলেন আজকের বাংলাদেশ তারই ধারক ও বাহক। শেখ মুজিবকে হত্যার পর জনমনে কতটা সমবেদনা অথবা ক্ষোভ জন্ম নিয়েছিল তার কোন পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। তবে সত্যকে যদি হীরক রানীর রোষানল হতে বের করা যায় এ সংখ্যা যে খুব একটা বেশি হবেনা তা বলাই বাহুল্য। আমরা যারা ৭৪-৭৫কে কাছ হতে দেখেছি, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান হিসাবে শেখ মুজিবের কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হয়েছি তাদের সবাইকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ অথবা নিম্ন-উচ্চ আদালতের খড়গ ঝুলিয়ে বোবা বানানো যাবে এমনটা ভাবা হবে বোকামি। স্বাধীনতা উত্তর প্রজন্মকে হয়ত মুজিব বন্দনার মূর্ছনায় সম্মোহিত করা গেছে, যা আবেগের রশ্মি হয়ে কবিতায়, কাব্যে, গানে অথবা চোখের পানি নাকের পানিতে একাকার হয়ে বেরিয়ে আসছে। ৭৪-৭৫ কি হাজার বছর আগের ঘটনা যা চাপার জোর আর জেল হাজতের জোর দিয়ে বদলে দেয়া যাবে? এই কি সেই শেখ মুজিব নন যিনি মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য আইন করেছিলেন? ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার জন্য তিনি কি রাতের আধারে বিশেষ বাহিনী পাঠিয়ে কারও বাবা, কারও ভাই অথবা কারও সন্তানকে অপহরণ করেন নি? অপহূত এসব হতভাগাদের কেউ কি ঘরে ফিরতে পেরেছিল? সংখ্যায় ওরা কতজন ছিল? বিনা বিচারে হত্যা করে যাদের লাশ গিলে ফেলা হয়েছিল তাদের সংখ্যা হাজার হাজার। হাতে রক্তের দাগ নিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান উপাধি বহন করার ভেতর গৌরব নেই, আছে ধাপ্পাবাজি। শাসক শেখ মুজিব যে পথে হেটে গেছেন সে পথের গন্তব্য ছিল কোথায়? ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নয় কি? সমান্তরাল হিসাবে জিম্বাবুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে সামনে আনলে কি খুব অন্যায় হবে? ইয়ান স্মিথের সাদা মাইনরিটি সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের এই নেতা। যুদ্ধ শেষে নির্যাতিত কালোদের নয়নের মনি হয়ে বসেছিলেন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। কিন্তু বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এ মনিত্ব। ক্ষমতার লোভ এই নেতাকে করেছে বর্জ্য, পরিত্যাক্ত। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে তিনি আজ অনাকাঙ্খিত। অনেকটা নিধিরাম সর্দার হয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের বুকে বাস করছেন জগদ্দল পাথরের মত। শেখ মুজিবও হাঁটছিলেন একই পথে। হয়ত অপমৃত্যু ঠেকিয়ে দিয়েছিল এই পতন। এমনটা না হলে শেখ মুজিব ল্যাগাছির কবর ছিল অনিবার্য।
শেখ মুজিবের উত্তরসূরী শেখ হাসিনা অনেকটা ইহুদিদের কায়দায় সমবেদনার ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন। ইসরায়েলিরা যেমন গণহত্যার প্রতিশোধ হিসাবে নিরীহ আরবদের বেছে নিয়েছিল তেমনি শেখ হাসিনাও বেছে নিয়েছেন দেশের ১৫ কোটি জনগণকে। নিরপরাধ মিশরীয়, সিরিয়ান, জর্ডানি ও লেবানিজ নাগরিকদের হত্যা, ধর্ষন, খুম, গুম করেই ক্ষান্ত থাকেনি ইহুদিরা, একে একে দখল নিয়েছে গোটা প্যালেস্টাইন, সিরিয়ার গোলান হাইটস এবং লেবাননের দক্ষিন অংশ। একই কায়দায় শেখ হাসিনাও প্রতিশোধ নিচ্ছেন পিতা, মাতা ও ভাই হত্যার। গোটা জাতির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন প্রাইভেট বাহিনী এবং দখল নিচ্ছেন দেশের আমলাতন্ত্র, আইন ও বিচার ব্যবস্থা। উচ্চ আদালতের বিচারকদের বানিয়েছেন হুকুমের সেবাদাস। এমপি ও মন্ত্রিদের বানিয়েছেন কর সেবক। ইহুদিদের গায়ের জোর যেমন মার্কিনিদের পকেটে শেখ হাসিনার জোরও প্রতিবেশী ভারতের নয়াদিল্লিতে। এ মাসের শেষে শেখ হাসিনা অপশাসনের পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু পিতার মতই তিনি সংসদ ও আইন আদালত ব্যবহার করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত করেছেন। সংগত কারণে জাতির ভাগ্যাকাশে ঘনিভূত হচ্ছে ভয় ভীতির কালো মেঘ। ঘরে ঘরে দেখা দিচ্ছে অনিশ্চয়তা। জন্ম নিচ্ছে হতাশা। রাজপথে তান্ডব ঘটিয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতার পথে বিটুমিন ইমালশান বিছিয়েছিলেন। এ কাজে এমন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে দ্বিতীয় কেউ আছে তা খোদ সৃষ্টিকর্তাও সমর্থন দেবে না। একজনের ইচ্ছা অনিচ্ছার পুতুল হয়ে পনের কোটি মানুষ হাসবে, কাঁদবে, ভয়ে থাকবে, ব্যবসা বানিজ্য গুটিয়ে অপেক্ষায় থাকবে সুদিনের; স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা বন্ধ করে সৃষ্টিকর্তার দরবারে ক্ষমা ভিক্ষা করতে হবে, স্বাধীনতার এটাই কি তাহলে আমাদের একমাত্র প্রাপ্তি? পাকিস্তানী বাইশ পরিবারের খপ্পর হতে বেরিয়ে এক পরিবারের একজন অযোগ্য ও গোয়ার মহিলার হুকুমের দাস হয়ে বেঁচে থাকার জন্য নিশ্চয় আমাদের জন্ম হয়নি? নিজেকে নিজে এসব প্রশ্ন করার সময় এসেছে। এবং তা হতে উত্তরনের পথ আমাদেরই খুঁজতে হবে।