ছোটবেলায় মার মুখে শুনেছিলাম গল্পটা। রাজ্যের একমাত্র রাজকুমারীকে অপহরণ করে নেয় কোন এক দৈত্য। উদ্ধারের জন্য ভিন দেশের এক রাজকুমার উন্মাদের মত ছুটতে থাকে দিগ্বিদিক। বন বাদর, নদী নালা, পাহাড় পর্বত পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পায় দৈত্যের ঠিকানা। কিন্তু পেলে কি হবে, দৈত্যের যে মরণ নেই! তাকে মারতে হলে নামতে হবে গভীর সাগরে। সেখানে লুকানো আছে অচিনপুর নামক দুর্ভেদ্য এক গুহা। ঐ গুহার কোন এক কক্ষে বন্দী ময়না পাখির আত্মাই দৈত্যের আত্মা। ওটাকে বধ করা গেলে বধ করা যাবে পরাক্রমশালী দৈত্যকে। হাজার বাঁধা অতিক্রম করে রাজকুমার শেষপর্যন্ত পৌছে যায় অভিষ্ট গন্তব্যে। গভীর সাগরে খুজে পায় দৈত্যরাজের লুকানো গুহা। এবং গুহার সাত প্রস্ত বাঁধা পেরিয়ে দেখা পায় ময়না পাখির। কব্জা করা মাত্র একটানে ছিড়ে ফেলে পাখির দুটি পা। ওদিকে একই সময় আপন ঠিকানায় দৈত্যেরও শরীর হতে খসে যায় দুটি পা। একে একে হাত, চোখ, কান এবং সবশেষে বের করে আনে পাখির আত্মা। পিঞ্জিরা হতে খসে যায় পাখির জান। দৈত্যের জানও উড়ে যায় পাখির সাথে। মারা যায় দৈত্যরাজ। উদ্বার হয় রাজকুমারী। তারপর রাজকুমার ও রাজকুমারী সুখে শান্তিতে বাস করতে থাকে। খুব হৃদয়বিদারক কিছু কথা বলেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। কথা গুলো না বললে হয়ত গল্পটার স্মৃতিতে ফিরে যাতাম না। বিশেষ করে মার স্মৃতি। বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার ১৫ই আগষ্ট জন্মদিন পালন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বলেছেন তিনি যখন কেক কাটেন মনে হয় কেউ তার বুকে ছুরি চালাচ্ছে। এ যেন রূপকথার দৈত্য বধের মত। পাখির পা ছিঁড়লে যেমন তার পা খসে যায়, তেমনি কেক কাটলে শেখ হাসিনার পেটেও ঢুকে যায় ছুরি। ছোট ভাই শেখ রাসেলের ৪৯তম জন্মদিনে এটাই ছিল প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম মর্মবেদনা।
মানুষ মরণশীল। ধরণীর মায়া ছেড়ে সবাইকে যেতে হয়। আপনজন হারানোর শোক আমাদের সবাইকে সমান কষ্ট দেয়। কিন্তু তাই বলে শোক চিরদিনের জন্য আমাদের স্থবির করে দেয় না। সময়ের সাহায্য নিয়ে আমরা চলতে থাকি। শেখ হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি পিতা, মাতা, ভাই সহ পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। এ দেশে প্রতিদিন কেউ না কেউ স্বপরিবারে মারা যাচ্ছে। দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছাড়াও আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশে এ ধরনের মৃত্যু এখন ডালভাত। কিন্তু তাই বলে একই পরিবার তাদের জীবন সংগ্রাম থামিয়ে দিয়ে শোকের মাতমে বাকি জীব কাটিয়ে দেয় তা নয়। পরিবারে নতুন শিশুর জন্ম হয়, কেউ বিয়ে করে, জন্মদিন পালন করে, নববর্ষের আনন্দের সাথে নিজেদের মিশিয়ে দেয়। এর নাম জীবন। জন্ম এবং মৃত্যু এখানে পাশাপাশি বাস করে। শেখ হাসিনার বেলায় ব্যাপারটা কি তাহলে ভিন্ন? শেখ মুজিব এদেশের কোটি মানুষের কাছে যেমন পিতা, তেমনি কোটি মানুষের চোখে স্বৈরাচারী একনায়ক। কোন বিচারেই তিনি অতিমানব নন। হাত, পা, মাথাওয়ালা এই সুস্থ স্বাভাবিক মানুষটাকে তারই সহকর্মীরা একদল সেনা অফিসারের সহযোগীতায় হত্যা করেছিল। এ নিয়ে সেদিন জাতি শোক ও প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল বলেও জানা নেই। বরং সহকর্মীদের কেউ কেউ উল্লাস পর্যন্ত করেছিল। শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার হাত ছিল কিনা তা জানতে আমাদের হয়ত আওয়ামী নেতা হানিফ, নাসিম, সাহারা এবং ইনুর মত ওয়ানম্যান শো দলীয় নেতাদের কাছে যেতে হবে। এ হত্যাকাণ্ডে খালেদা জিয়া সরাসরি জড়িত এবং নিজে ধানমন্ডির ৩২নং বাড়িতে উপস্থিত হয়ে গুলি চালিয়েছেন, এর প্রমাণ নিশ্চয় এসব নেতাদের হাতে আছে। ১৫ই আগষ্ট খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করে থাকেন। নেত্রীর জন্মতারিখ নিয়ে বিতর্ক আছে। আজ হতে ৬০/৭০ বছর আগে ঘটা করে এ দেশে জন্মতারিখ লিপিবদ্ধ করার রেওয়াজ কতটা চালু ছিল তা জানতে আশাকরি নেতা-নেত্রীদের দ্বারস্থ হতে হবেনা। যেহেতু তারিখ রেজিস্ট্রি করার কোন বাধ্যবাধকতা ছিলনা সেহেতু ১৫ই আগষ্ট অথবা অন্য কোনদিন জন্মদিন পালন করায় আইনগত কোন বাঁধা নেই। খালেদা জিয়ার কেক কাটা নিয়ে জনাবা হাসিনা যা বললেন তা পিতা-মাতার মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা আর অন্যকিছু নয়। রাজনৈতিক জগাখিচুড়ির মাঠে জনগণের সেন্টিমেন্ট ক্রয় করার কাজে শেখ হাসিনা ১৫ই আগস্টকে ব্যবহার করছেন এবং তাতে বলি করছেন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনকে। ১৫ই আগষ্ট ঘটা করে কারও উৎসব পালন বন্ধ করতে চাইলে দেশে আইন করতে হবে। ১৫ই আগষ্ট দেশে নতুন কোন শিশুর জন্ম বন্ধ করতে হবে, হাসপাতাল এবং ডাক্তারদের নির্দেশ দিতে হবে কোটি কোটি মার জরায়ু আটকে রাখতে। ইতিপূর্বে জন্ম নিয়েছে এমন নাগরিকদের পারিবারিক উৎসব আইন করে একদিন পেছাতে হবে। পারবেন কি? না পারলে খালেদা জিয়ার কেক কাটা নিয়ে রূপকথা ও সহানুভূতির সস্তা সুর সুরি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। বেডরুম হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব না হলে জন্মদিন পালন বন্ধ করাও সরকারের কাজ নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। এখানে কে, কবে এবং কেন জন্মদিন পালন করবে তা প্রত্যেকে নাগরিকের জন্মগত অধিকার। হোক তা সত্য অথবা ভূয়া।
একদিনেই আটজনকে হত্যা করেছে সরকারী বাহিনী। ওরা ছিল এ দেশেরই নাগরিক। নিহতদের পরিবার যদি দাবি জানায় ২৫শে অক্টোবর বাংলাদেশে কেউ জন্মদিনের মত উৎসব পালন করতে পারবেনা, খুব কি অন্যায় দাবি হবে? সরকার যাদের হত্যা করল তারও কারো না কারো পিতা, ভাই, সন্তান। তাদের কষ্ট শেখ হাসিনার কষ্টের চাইতে কম হওয়ার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী হয়ত জনগণের ভাষা পড়তে ভুল করছেন। যাবার সময় হয়েছে উনার। মামা বাড়ির আবদারের মত ক্ষমতা নিয়ে খেলতে শুরু করেছেন। পরিণতি কি হবে তা জানতে ইতিহাসের পাতা উলটাতে হবে উনাকে। হিটলার, মুসোলিনি, আইয়ুব, ইয়াহিয়া, এরশাদ, খালেদা সহ সবাই হেট গেছেন এ পথে। এবং শেষ গন্তব্য হিসাবে বেছে নিয়েছেন আস্তাকুড়। ইতিহাস তাদের কাউকে ক্ষমা করেনি। শেখ হাসিনাকেও করবেনা।
খালেদা জিয়ার জন্মদিন সম্পর্কে শেখ হাসিনা : উনি যখন কেক কাটেন মনে হয় আমার বুকে ছুরি চালাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়া ‘ভুয়া জন্মদিন’ পালন করেন। ওইদিন তিনি যখন কেক কাটেন, তখন কেক কাটার সেই ছুরি তার (প্রধানমন্ত্রীর) বুকে বিঁধে। প্রধানমন্ত্রী ছোট ভাই শেখ রাসেলের ৪৯তম জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল তিনি এ কথা বলেন বলে জানায় বাসস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন নয়। তা সত্ত্বেও উনি কেক কেটে ভুয়া জন্মদিন পালন করে থাকেন। ওইদিন তিনি যখন কেকে ছুরি চালান, তখন মনে হয় আমার বুকে সেই ছুরি চালাচ্ছেন। এ সময় আমার ছোট ভাই শেখ রাসেলের মুখটা সামনে ভেসে ওঠে। রাসেলকে হত্যার দিনে উনি (খালেদা জিয়া) কীভাবে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন!’
প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্টে ‘ভুয়া জন্মদিন’ পালন থেকে বিরত থাকার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানান। এর পরিবর্তে খালেদা জিয়াকে স্কুলের নিবন্ধনে দেয়া জন্মতারিখেই জন্মদিন পালনের আহ্বান জানান তিনি।...
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/10/24/221824#.UmjCvPmTiSE