যতই গো ধরেন না কেন যেতে উনাকে হবেই। ভাগ্যলিখন উনার লেখা হয়ে গেছে। তা ৫ই জানুয়ারির আগে হোক আর পরে হোক। ক্ষমতা বদলের যে অসুস্থ পথ তিনি আবিস্কার করে গেছেন একই পথ উনাকেও মাড়াতে হবে। অস্কার ফার্নান্দোরা সময়ের কালক্ষেপণ মাত্র। অতীতের স্যার নিনিয়ান অভিজ্ঞতা তাই বলে। এরশাদ ছিলেন বুদ্ধিমান, তাই ক্ষমতার পালাবদলে শেখ হাসিনার ভূমিকায় নামেননি। প্রায় মসৃন পথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ক’বছর জেল খাটলেও রাজনীতির মাঠ হতে কেউ তাকে নির্বাসনে পাঠাতে পারেনি। প্রতিশোধের জন্য খুন করতেও কেউ পিছু নেয়নি। এরশাদ বেঁচে আছেন আপন মহিমায়। হোক তা গৌরবের অথবা কালিমার। কেমন হবে শেখ হাসিনার এক্সিট? এ নিয়ে জল্পনা করার কি সময় আসেনি? অনেকে বলবেন প্রিম্যাচিউরড হয়ে যাবে এ জল্পনা। পায়ের তলার মাটি অনেকটা ভূমি ধ্বসের মতই সরে যাচ্ছে। সরকারী সুবিধার আড়ালে উনি হম্বিতম্বি যাই করেছেন তা কেবলই বাগরম্বতা, মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ চীৎকার। উনি নিজেও তা জানেন। আসুন গণতন্ত্র ও সংবিধানের খাদেম এই স্বৈরশাসকের এক্সিট রুটের একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করি।
নিকট অতীতের ইয়াজ উদ্দিনের মত বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে সরকার প্রধান বানিয়ে নির্বাচনে গেলেন। এবং বিপুল বিক্রমে পরাজিত হলেন। যদিও বিএনপি নেত্রী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, ফলাফল ঘোষনার রাতে সে নিশ্চয়তা হুর মুর করে ভেঙ্গে পরার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাবে। অনেকের অনেক বকেয়া মেটানো বাকি নেত্রীর সাথে। তাই ইয়াজ উদ্দিন মার্কা নির্বাচন নেত্রীর এক্সিট রুটকে মোটেও মসৃন করতে পারবেনা।
দেশত্যাগ। বাই বর্ণ নৌকার সমর্থকরা নিশ্চয় চমকে উঠবেন। জননেত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, শান্তির কন্যা উপাধিতে ভূষিত এই নেত্রীর যুদ্ধের মাঠ হতে পলায়ন এক কথায় উড়িয়ে দেবেন। অতীত অভিজ্ঞতা কিন্তু তা বলেনা। তত্ত্বাবধায়ক ঝড় হতে বাঁচার জন্য তিনি কিন্তু পালিয়েছিলেন। এবং পরিবর্তনের পালে হাওয়া লাগার পরই ফিরে এসেছিলেন দেশে। প্রশ্ন, কোথায় যাবেন?
১) ভারত - ভারতীয় সরকার তার অতিথির তালিকায় শেখ হাসিনাকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে ধন্য হবে। কিন্তু সমস্যা একটা থেকে যাবে। উলফা। আসামের স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত এই দলের প্রায় প্রত্যেক নেতাকে ভারত সরকার হাতে তুলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাদের কেউ কেউ প্রতিশোধের জন্য এগিয়ে আসবেনা বিশ্বাস করা কঠিন। ভারত সরকারও চব্বিশ ঘন্টার পাহারা বসিয়ে নেত্রীকে আগলে রাখবে তারও নিশ্চয়তা নেই। তবে যাদের জন্য দেশের নদী আটকে রাস্তা করে দিয়েছিল বিনিময়ে তাদের কাছে সেফ প্যাসেজ আশা করা অন্যায় কিছু হবেনা।
১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - সন্দেহ নেই নেত্রীর প্রিয় জায়গা। আপন সন্তানেরও বাস সে দেশে। মার্কিন মুলুকে বৈধ পথে আসায় কোন বাঁধা থাকবেনা। কিন্তু সমস্যা হবে ষ্ট্যাটাস নিয়ে। ওবামা সরকারের ন্যূন্যতম প্রটোকল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা বহুমুখি কারণে। এক, তিনি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন না। দ্বিতীয়, গেল ৪ বছর ধরে মার্কিন সরকারকে যত্রতত্র হেনস্থা করে গেছেন এই নেত্রী। সে দেশের অকৃত্রিম বন্ধু এবং বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ডক্টর মোহম্মদ
ইউনূসকে অপদস্থ করা সহজভাবে নেয়নি মার্কিন সরকার ও জনগণ। তার মূল্য কিছুটা হলেও পরিশোধ করতে হবে নেত্রীকে।
৩) অন্দরমহলের খবর হচ্ছে নেত্রী আগ বাড়িয়েই নাকি সমাধা করে রেখেছেন এ সমস্যা। রাশিয়া সফর এবং সে দেশ হতে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র আমদানী তারই মূল্য শোধ। কদিন আগে মধ্যপ্রাচ্যের একটা দেশের সাথে রাশিয়ার ভোট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ রাশিয়ার পক্ষ নেয়ায় সে সন্দেহে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।
৪) পরাজয় মেনে নিয়ে বাংলাদেশে থেকে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক জনরোষ থিতিয়ে আসলেও মূল ভয় থেকে যাবে সেনাবাহিনীর তরফ হতে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর সেনানিবাস পরিদর্শনে গিয়ে নেত্রী যে বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তা ভুলে যাওয়া হবে মারাত্মক ভুল। শেখ হাসিনা ভাল করেই জানেন এই বাহিনী তার ৫৭ অফিসার হত্যাকাণ্ড এত সহজে ভুলে যাবেনা। এবং সময় সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিতে এক মিনিট দেরি করবেনা।
শেখ হাসিনার নিরাপদ প্রস্থান নিয়ে আমার মত ম্যঙ্গোদের চিন্তা করার কোন কারণ আছে বলে মনে হয়না। নেত্রী নিজেই নিজের কবর খুড়ে রেখেছেন। সে কবরে পা দেয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে শারীরিক অপমৃত্যু সব সময়ই থাকবে অনাকাঙ্খিত। কারণ এ ধরণের মৃত্যু একজন অপদার্থকে পদার্থ বানায় এবং জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় মহান বানানোর চাপ। আর এই চাপ আমাদের বাধ্য করে তার জন্মদিন, মৃত্যুদিন, আগমন, নির্গমন নিয়ে সার্কাসের আয়োজন করতে।