‘নাস্তিকদের কতল করা ওয়াজিব হয়ে গেছে।‘কথাটা আমার নয়, কওমি মাদ্রাসা নেতা মাওলানা শফির ইদানিং কালের বক্তব্য। সুন্নত অথবা ওয়াজিব কি এবং এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্যটা কোথায় তা কোনদিন জানার চেষ্টা করিনি। দরকার হয়নি তাই। আরবিটা আমার ভাষা নয়। এ ভাষায় নূণ্যতম দখল নেই। ছোটকালে মা-বাবা তাদের দায়িত্ব পালনের অংশ হিসাবে ধর্মশিক্ষা নিতে হুজুরের কাছে পাঠিয়েছিলেন। সেখানেই অক্ষরজ্ঞান। কোটি কোটি বাংলাদেশির মত আমিও গড়গর করে আরবী পড়ে যেতে পারি, যার এক লাইনের মর্ম উদ্ধারে আমি অক্ষম। ছোটকালে বাড়িতে ধর্মচর্চা বাধ্যতামূলক ছিল, তবে তার জন্য কোন চাপ ছিলনা। পছন্দ অপছন্দ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা উপভোগ করেই আমরা ভাই-বোনেরা বড় হয়েছি। আমি বেছে নিয়েছি ধর্মকর্মকে হিসাবের বাইরে রাখতে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে নিজের সাথে নিজের লড়াইয়ের ফয়সালা অনেক আগেই করে রেখেছি। এ নিয়ে সমাজ, সংসার অথবা পরিবারের কেউ কোনদিন আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি। হঠাৎ করে চট্টগ্রামের এক মাওলানা আমাকে কতল করার হুমকি দিচ্ছেন। ব্যাপারটা কেমন যেন গোলমেলে মনে হচ্ছে। তাই এই মাওলানাকে কটা প্রশ্ন না করলে স্বস্তি পাচ্ছি না। জনাব শফি মাওলানা, মার জরায়ু হতে বের হয়ে যেদিন ধরনীতে পা রেখেছিলাম আমার মা-বাবা কি কোন পর্যায়ে আমাকে লালন পালন করার জন্য আপনার কাছ হতে আর্থিক সহায়তা নিয়েছিল? ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছি সূর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অমানুষিক পরিশ্রম করতে। পাতে তিন বেলা তিন মুঠো খাবার তুলে দেয়ার জন্য হাট মাঠ ঘাট সহ আকাশ আর মাটি চষে বেড়াতে। যেহেতু আপনার দেয়া আর্থিক সহায়তার কাছে পরিবারিক দায়বদ্ধতা নেই, তাই আমাদের কারও ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে কথা বলার অধিকারও আপনার নেই। আপনার কষ্টের কামাই খেয়ে যারা বড় হয়েছে তাদের হয়ে কথা বলুন। জেনেশুনে পাপ করিনা। তাই দিন শেষে অনুতাপ, অনুশোচনা অথবা ক্ষমা চাওয়ার জন্য ঈশ্বরের দ্বারস্থ হতে হয়না। জীবন আমার। এর হিসাবনিকাসও আমার নিজের। সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ একজন যদি থেকেও থাকেন তার কাছে কর্মকান্ডের জবাব দিতে আমি নিজেই সক্ষম। আমার পর জন্মের পরিণতি নিয়ে আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে। জনাব মাওলানা, আপনি একবিংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থায় বাস করে কাউকে কতল করার হুমকি দিতে পারেন না। সভ্য সমাজে এ দ¨নীয় অপরাধ। বাংলাদেশ আল্লাহর দেশ না জনগণের দেশ তা নির্ধারণ করার ম্যান্ডেট আপনাকে কেউ দেয়নি। আপনার দেশ এবং পৃথিবী মাদ্রাসা চত্ত্বরে সীমাবদ্ধ। ওখানেই থাকুন। ঐ পৃথিবীর জিনের বাদশাহ হয়ে আজীবন বেচে থাকুন এ নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করবেনা। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর গোড়াতে এসে আপনি যদি পাথর যুগের শাসন কায়েম করার খোয়াব দেখান তা হবে রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক। আপনি হবেন রাষ্ট্রদ্রোহী। মৃত্যুদণ্ডই একজন রাষ্ট্রোদ্রোহির যোগ্য শাস্তি।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষার মত ধর্মও মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার কেড়ে নিয়ে একদল ধর্মীয় উন্মাদ ১৩ দফা নামক শিকল জাতির গলায় ঝুলাতে চাইছে। এখনই সচেতন না হলে জাতিকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে।
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/196120/%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A6%B2_%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE_%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%AC_%E0%A6%B9%E0%A7%9F%E0%A7%87_%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87