গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত দক্ষিণ সুদানের জন্য জাতিসংঘ এ বছর অতিরিক্ত ৪০০০ শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। দেশটায় ইতিমধ্যে মোতায়েন কৃত সৈন্যের সাথে নতুন ৪০০০ যোগ হলে মোট সৈন্য সংখ্যা দাঁড়াবে ১১০০০। বলার অপেক্ষা রাখেনা ইতিমধ্যে মোতায়েন কৃত সৈন্যদের একটা বিরাট কন্টিনজেন্ট বাংলাদেশ হতে নেয়া। কিন্তু নতুন নিয়োগের প্রাক্কালে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ প্রতিনিধি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমিরা হক ফলাও করে ঘোষণা দিয়েছেন এ যাত্রায় বাংলাদেশ হতে নতুন কাউকে নেয়া হবেনা। পৃথবীর বিভিন্ন সংঘাতময় অঞ্চলে স্বল্প সময়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য পাঠাতে বাংলাদেশের সমকক্ষ দ্বিতীয় কোন দেশ নেই। এ কাজে আমাদের সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে জাতিসংঘের আস্থা অর্জন করেছে। হঠাৎ করে এ আস্থায় কি এমন ঘাটতি দেখা দিল তার বিস্তারিত জানাতে সক্ষম হননি জনাবা হক। শুধু বলেছেন এ যাত্রায় উগান্ডা, কেনিয়া ও ইথিওপিয়া হতে নেয়া হবে নতুন কন্টিনজেন্ট। তবে কি জাতিসংঘের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে আমাদের সেনাবাহিনী? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নতুন কাউকে না নেয়ার সিদ্ধান্তটা ছিল রাজনৈতিক। পৃথিবীর সবকটা উন্নত দেশ ও জাতিসংঘ সহ বিশ্বব্যাংকের মত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বাংলাদেশ সরকারের টানাপোড়ন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ও ডক্টর মোহম্মদ ইউনুস প্রসঙ্গে সরকারের ভূমিকা এর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের সাথে হাসিনা সরকারের সম্পর্কের ভয়াবহ অবনতি হয় ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে। নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে সেক্রেটারি জেনারেল চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বসমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন আয়োজনের। তার সে চেষ্টা সফল হয়নি আমাদের সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার একগুঁয়েমির কারণে। সাথে যোগ হয়েছে কাদির মোল্লার ফাঁসি নিয়ে সেক্রেটারি জেনারেলের ফোন। আমাদের সরকার প্রধান দুদিন আগে দম্ভ করে ঘোষণা দিয়েছেন জামাতি নেতা কাদির মোল্লার ফাঁসি বন্ধে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন কেরি ও জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের অনুরোধ তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। চেতনার ডান্ডা যাদের ভায়াগ্রা প্রভাবে আচ্ছন্ন থাকে তারা হয়ত বাহবা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর এহেন সাহসে তালি বাজাবেন। আসলেই তো, আমাদের অপরাধীকে আমরা শাস্তি দেব তাতে আমেরিকা অথবা জাতিসংঘ নাক গলাবার কে?
সমসাময়িক পৃথিবীকে বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ। অনেক বিবেচনায় আজকের পৃথিবী খুবই ছোট। এ পৃথিবীর এক প্রান্তে কিছু ঘটলে নিমিষেই তার প্রতিফলন ঘটে অন্য প্রান্তে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি এর প্রভাব পরে বিশ্ব পুঁজি-বাজারে। বাংলাদেশও এর বাইরের কোন দেশ নয়। আমাদের শ্রম ও পোশাক রফতানি নির্ভর অর্থনীতির সবটাই নির্ভর করে দ্বিপক্ষীয় তথা বহুজাতিক সংস্থাগুলোর সাথে দেশটার সম্পর্কের উপর। সেনাবাহিনী রফতানিও অর্থনীতির জন্য একটি জরুরি ও প্রয়োজনীয় খাত। এ খাত হতেও বছরে যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করি আমরা। তাছাড়া দেশের সেনাবাহিনীর অফিসার হতে শুরু করে সিপাইরা পর্যন্ত অধীর অপেক্ষায় থাকে জাতিসংঘ মিশনের। সাইদ তারেক ও আরিফের মত যাদের খুঁটির জোর নেই তাদের জন্য জাতিসংঘ মিশনই ভাগ্য ফেরানোর একমাত্র মাধ্যম। বলাই বাহুল্য এ মাধ্যমকেও আমাদের অবৈধ সরকার প্রধান ধ্বংসের দাড়প্রান্তে নিয়ে গেছেন। দক্ষিন সুদানে নতুন বাহিনী নিয়োগ সংক্রান্ত জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করে কেবল।