পরিচিত একজনের স্ট্যাটাসে তথ্যটা পড়ে যার পর নাই অবাক হলাম। নিজকে ধিক্কার দিলাম জন-গুরুত্বপূর্ণ এমন একটা তথ্য জানা নেই বলে। বিহারী ক্যাম্পে পুড়িয়ে মারা দশজনের সবাই নাকি গোলাম আজমের বংশধর এবং তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ভেতর অন্যায় কিছু নেই। ইনিয়ে বিনিয়ে তিনি যা বলতে চেয়েছেন তা হল এ হত্যা ৭১’এর হত্যারই প্রতিশোধ। প্রথমে ভেবেছিলাম নিহত দশজনের সবাই ছিল রাজাকার এবং ৭১’এর গণহত্যার সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। রক্তের বদলা রক্ত, এ নতুন কোন ঘটনা নয়। সভ্যতা বিবর্তনের অলিগলি ঘাঁটলে ভুরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে এ ধরনের প্রতিশোধের। কৌতূহলী হয়ে নিহতদের বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম। এবং খুঁজে পেলাম উপরের ছবিটা। অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন না হলে এ শিশুর রাজাকার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অবশ্য গোলাম আজমের বংশধর বলতে কেবল রাজাকার বুঝানো হয়েছে তাও নয় নিশ্চয়। হতে পারে বৃদ্ধ গোলাম আজমের সাথে শিশুটির মার অবৈধ সম্পর্ক ছিল অথবা হতে পারে জনাব আজমের ধর্ষণের ফসল এই শিশু। অথবা তার মা-বাবা গোলাম আজমকে দীক্ষা গুরু হিসাবে মানতেন এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নস্যাতের কাজে শিশুটিকে ব্যবহার করতেন। এসব তত্ত্বের পক্ষে এ পর্যন্ত কেউ সাক্ষী প্রমাণ নিয়ে জাহির হননি। স্বভাবতই ধরে নেব শিশুটি যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত রাজাকার নয়, এবং কোন বিবেচনায়ই গোলাম আজমের বংশধর না। এতদিন জানতাম শিশু কেবল শিশুই, নিরপরাধ, ইনোসেন্ট এবং সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে। চেতনার ভায়াগ্রা খেয়ে যারা জাতির পশ্চাৎ-দেশে নুর হোসেন আর আরিফ-তারিক নামক পতিতাদের ঢুকাতে ব্যস্ত, তাদের জন্য একবিংশ শতাব্দীর শিশু বিংশ শতাব্দীর রাজাকার হবে, খুব একটা অবাক হইনা।
ইলিয়াস মোল্লা। অবৈধ নির্বাচনের আরও এক জারজ ফসল। ৫ই জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন এলাকায় জন্ম নেয়া তিনশ জারজ সন্তানদের একজন। অবশ্য নিজকে দাবি করেন মিরপুর এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে। নারায়ণগঞ্জের শামীম, ফেনীর নিজাম, কক্সবাজারের বদির মত এই জারজ সন্তানের জন্মও একই মায়ের জরায়ুতে। ভৌগলিক সীমা ও কাপড়ের পতাকাই যদি একটা দেশ ঘোষণার উপকরণ হয়ে থাকে বাংলাদেশ নিশ্চয় একটা দেশ। তবে মনুষ্যত্বের আরও কিছু চাহিদা ও দাবি থাকে যা পূরণে অক্ষম একটা জাতিকে জাতি বলা যায়না। আজকের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তেমনি একটা দেশ। অক্ষম জাতির টিকে থাকার আবাসভূমি। ইলিয়াস মোল্লার জন্ম, উত্থান এবং আজকের অবস্থান নারায়ণগঞ্জের নুর হোসেনেরই কার্বন কপি। মাথায় ভাসানী টুপি, ক্লিন শেভ মুখ এবং ঠোঁটে দেলোয়ার হোসেন সায়েদী কায়দায় মুক্তিযুদ্ধের প্রলাপের আড়ালে লুকিয়ে আছে খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, দখল, উৎখাত সহ শত শত অপরাধের লৌমহর্ষক কাহিনী। একদল ক্ষুধার্ত খুনিদের নিয়ে চলাফেরা করেন। তাদের ভরন পোষণ করেন প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য। মিরপুরের প্রতিবেশী দুটি বস্তি। একটা কালসী। প্রতিবেশী বস্তিতে বিদ্যুৎ নেই। অসুবিধা কি, আছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ। অবৈধ সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা তার ক্যাডারদের অতিরিক্ত আয়-রোজগারের ব্যবস্থা হিসাবে কালসী বস্তি হতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেন প্রতিবেশী বস্তিতে। কিন্তু তাতে বাধ সাধে কালসী বস্তির বৈধ গ্রাহকরা। কারণ সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ এক বস্তির জন্যই যথেষ্ট ছিলনা। স্বভাবতই লোড সেডিং বাড়তে শুরু করে ঐ বস্তিতে। ইলিয়াস মোল্লার সশস্ত্র ক্যাডারদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় বস্তিবাসী। দুয়েক জনকে ধোলাই দিতেও পিছপা হয়নি তারা। রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হন খোদ গডফাদার ইলিয়াস মোল্লা। আদেশ দেন অবৈধ সরকারের জারজ এমপি যা বলবে তাই এ দেশের আইন। তাতেও দমে যায়নি প্রতিবাদকারীরা। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে হেনস্তা করে প্রফেশনাল মার্ডারর এই অবৈধ সাংসদকে। ঘটনাস্থল ত্যাগ করার আগে হুমকি দিয়ে যান দুদিনের ভেতর দেখে নেয়ার।
এবং কথা রাখেন ইলিয়াস মোল্লা। দুদিনের ভেতর বস্তিতে হাজির হয় সোহেল রানা। মন্ত্রীর ডান হাত। স্থানীয় যুবলীগের নেতা এবং প্রফেশনাল খুনি। এক পরিবারের সবাইকে জীবন্ত পুড়িয়ে বীর-দর্পে ফিরে যান রক্ষকের ডেরায়। তা ছাড়া রক্ষক ইলিয়াস মোল্লার অনেকদিনের চোখ বস্তির দিকে। জায়গাটা তার চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জরায়ুতে বলি দিতে চান বস্তির মাটি। তাইতো হত্যার অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে জারজ সাংসদ জানালেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্যই নাকি এসব অভিযোগ।
কালসী অথবা মিরপুরের বাকি বস্তির বাসিন্দাদের পরিচয়ে কোন রাখঢাক নেই। ওরা আটকে পড়া পাকিস্তানি। জাতিসংঘের শরণার্থী আইনে বাস করছে এ দেশে। নিজদের পরিচয়ের সাথে পাকিস্তানী গন্ধ মিশে আছে দিবালোকের মত। কিন্তু এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর মিশন নিয়ে এ বস্তিতে গেরিলা গ্রুপ জন্ম নিয়েছে এমন সাক্ষী কেউ দিতে পারবেনা। ওরা খেটে খায়। কেউ আমাদের চুল কাটে, কেউবা জুতা সেলায়। দিনান্তে আর দশটা বাংলাদেশির মতই ঘরে ফিরে যায়। তবে সে ঘর আমার আপনার মত সাধারণ ঘর নয়, বস্তি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এসব বস্তিতে। ’৭১ এ দেশের স্বাধীনতায় যে সব বিহারী পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল তাদের প্রায় সবাইকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়েছিল স্বাধীনতার পর পর। আমরা স্বীকার করতে না চাইলেও এর পক্ষে বাজারে অনেক প্রমাণ বিক্রি হচ্ছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর একই অভিযোগে শিশুদের জ্ব্যান্ত পুড়িয়ে মেরে উল্লাস করার ভেতর সততা নেই, আছে পশুত্ব, আছে অসুস্থতার লক্ষণ।
কালসী বস্তির এ শিশুটির অপরাধ সে আটকে পরা পাকিস্তানী। তার আসল দেশ তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে। কেবল মাত্র এই অপরাধে শিশুটির পৈশাচিক খুনের বৈধতা দেয়াও অপরাধ। আমাদের বর্তমান জারজ প্রধানমন্ত্রীও জীবনের অনেকটা সময় নিজ দেশে অবাঞ্ছিত ছিলেন। আশ্রয়ের সন্ধানে পৃথিবীর দেশে দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন। বৈধ আয়ের বদলে আশ্রয়দাতার দয়ার উপর বেচে ছিলেন। ইলিয়াস মোল্লাদের এসব ইতিহাস জানা থাকার কথা। না জানলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে জানানো উচিৎ।