ফুটবলের প্রতি অনীহাটা কখন এবং কিভাবে শুরু হয়েছে চাইলেও আজ আর মনে করতে পারবোনা। তবে তা যে একদিনে হয়নি বলাই বাহুল্য। অথচ কলেজ জীবনের দুটো বছরের প্রায় সবটা জুড়ে ছিল এই ফুটবল। মা-বাবার চৌহুদ্দি পেরিয়ে সবেমাত্র ঢাকা শহরে পা রেখেছি। এত স্বাধীনতা কোন দিকে ব্যায় করবো তার হদিস করার আগেই জড়িয়ে পরলাম ফুটবল প্রেমে। অঝোর বৃষ্টিতে মোহামেডান ও দিলকুশার পাতানো খেলার মত খেলা দেখতেও স্টেডিয়ামে ছুটে গেছি। কলেজ জীবনের শেষে লম্বা ইউরোপীয় জীবনের শুরুতে ফুটবলকে নতুন করে আবিষ্কার করি মস্কোর স্পার্তাক ও কিয়েভ ডায়নামোর গতিশীল খেলার মাঝে। বিশ্বকাপ ফুটবলের পাশাপাশি, ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, উয়েফা কাপ সহ এমন কোন খেলা ছিলান যা নিয়ে সময় ব্যায় করিনি। কিয়েভ ডায়নামের সমর্থক হয়ে স্কটল্যান্ডের ডান্ডি ইউনাইটেডের সাথে খেলা দেখতে পূর্ব হতে পশ্চিম ইউরোপে পর্যন্ত ভ্রমণ করেছি। হয়ত বিশ্ব ফুটবলের সাথে পরিচয় পর্বের সূচনাই ইতি টেনেছিল মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, বিআইডিসি, রহমতগঞ্জ ফুটবল প্রেমের। ততদিনে কোয়ানটিটির উপর রাজত্ব শুরু করেছিল কোয়ালিটি। তার নীচেই চাপা পরে যায় এক কালের ভালবাসা ঢাকাইয়্যা ফুটবল।
ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা সেই স্কুল জীবন হতে। কিন্তু তা প্রস্ফুটিত হয়নি বিভিন্ন কারণে। যার অন্যতম ছিল এই খেলার সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা। সিডনীতে বাস করতে গিয়ে বদলে গেল এই ধারণা। এসসিজির খুব কাছে সেন্টিনিয়াল পার্কের পশ্চিম দিকের একটা বাসায় অনেকদিন বাস করেছি। বিশ্বমানের ক্রিকেট খেলার সাথে পরিচয়ের সূত্রপাতটা এখানেই। তারপর আর পিছু তাকাতে হয়নি। দুর্বল হোক আর সবল হোক, বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের পদার্পণ বদলে দেয় খেলাধুলা সম্পর্কিত আমার তাবৎ সমীকরণ। যে খেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমার নিজের দেশ খেলতে পারবেনা সে খেলার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে গেল। ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটল দেশী বিদেশী সবধরনের ফুটবলের। যার ঘাতক হিসাবে ব্যাক-ড্রপে কাজ করেছিল স্বদেশী ক্রিকেটের উত্থান।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে জন্মভূমিতে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের কারণ গুলো বুঝতে এখন আর অসুবিধা হয়না। কারণ আমি নিজেও পেরিয়ে এসেছি এ পথ। মার্কিন মুলুকের এ অংশে ফুটবল খুবই জনপ্রিয় খেলা। তবে তা আমাদের দু'পা আর মাথা দিয়ে খেলা ট্র্যাডিশনাল ফুটবল নয়, ফ্রি স্টাইল রেসলিং;এর মত খেলা আমেরিকান ফুটবল। অনেদকিন পর ছুটির দিনটা ব্যায় করলাম টিভিতে ফুটবল দেখে। সমর্থন করার মত প্রিয় দল না থাকলে খেলা দেখে আনন্দ পাওয়া যায়না, তা নতুন করে উপলব্ধি করলাম। আমি বরাবরই দুর্বলের সমর্থক। টিভির সামনে বসলে দু মিনিটেই ধরে নিয়ে পারি কে দুর্বল আর কে সবল। তাই সমর্থনের পাল্লাটাও হেলে পরতে সময় লাগেনা। আর্জেন্টিনা ইরান ম্যাচে ইরানের সমর্থক হওয়া ছিল তার অন্যতম কারণ। ঘানা বরাবরই একটা শক্তিশালী দল। পাশাপাশি জার্মানির ঘরে তিন তিনটা বিশ্বকাপ শিরোপা। সংগত কারণেই ঘানার পক্ষ নিতে খুব একটা ভাবতে হয়নি। এ ছাড়াও ছাত্র জীবনে আমার ঘনিষ্ঠ দুজন বন্ধু ছিল ঘানার। সকাল হলে মাঠে নামবে যুক্তরাষ্ট্র এবং পর্তুগাল। দত্তক সূত্রে আমি মার্কিন নাগরিক। নাগরিক দায়িত্ববোধ হতেই মার্কিনীদের পক্ষ নিয়ে খেলাটা দেখতে বসবো। সমর্থন দেয়ার পরিধি আমার জন্য ব্যাপক ভাবে উন্মুক্ত। যেমন আর কোন উপলক্ষ না থাকলে এশিয়ান যে কোন দলের সমর্থক হতে আপত্তি থাকবেনা (এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও ভারত বিবেচনার বাইরে থাকবে)।
সবার জন্য শুভ কামনা।