ঘটনা ১)
সময়টা অধুনা রাজনীতির উচ্চমূল্যের বেশ্যা হোমো এরশাদের আমল। চারদিকে মন্ত্রী এম্পিদের ভরা যৌবন। উন্নতির জোয়ারে ভাসাতে গিয়ে দেশকে ওরা বেশ্যার শয়নকক্ষে ইজারা দেয়া সম্পূর্ণ করেছে কেবল। যাদের জানা নেই তাদের জেনে রাখা ভাল, এই দেশপসারীনির শয়নকক্ষেই তখন নির্ধারিত হত দেশের উন্নতির সূচক। সদ্য সংগৃহীত কথিত বিরোধী দলের ভাঁড় রওশন আর তার স্বামী হোসেন মোহম্মদের মধ্যে শারীরিক লেনাদেনা শয়নকক্ষে কতটা সক্রিয় ছিল কেউ জানতে না পারলেও আর্থিক লেনাদেনার মূল্যটা জানা ছিল প্রায় সবার। উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার আগে প্রথমে পেশ করা হত দুই বেশ্যার বিছানায়। এখানেই চলত দরকষাকষি। বাংলাদেশের বৃহৎ ও মাঝারি ধরনের কোন প্রকল্পই তাদের শয়নকক্ষ না হয়ে আলোর মুখ দেখতে পারেনি। বিদেশি অর্থায়নে মাতৃভূমির শরীর ভোগের কমিশন সরাসরি চলে যেত পতিতার বিদেশি একাউন্টে। লোকাল কমিশন হাঁটাহাঁটি করত রওশনের শরীরে। মান-অভিমান, হুমকি এবং দরাদরি শেষে সিদ্ধান্ত উপনীত হতে পারলেই কেবল প্রকল্পের হাঁটাচলা সক্রিয় হত। এর বাধ্যবাধকতা হতে নিজ সিপাহসালারাও মুক্ত ছিলনা। কাজী জাফর ও জামাল হায়দারদের মত বড় বড় মাছদের উত্থান ও বিবর্তনের কাহিনী ঘাঁটলে শোনা যাবে লম্বা দীর্ঘশ্বাসের কাহিনী। এক অর্থে শয়নকক্ষের কমিশন ছিল হোমোর অবৈধ যৌন জীবনের কাফফারা। ভাঁড় রওশনেক আর্থিক দন্ড দিয়ে কিনে নিতেন পুরুষাঙ্গের স্বাধীনতা। এসব অন্য এক অধ্যায়, অন্য এক পর্ব, যার সাথে এ লেখার কোন সম্পর্ক নেই। তো এমনি এক সময়ের ঘটনা।
পৃথিবী জুড়ে রাজত্ব করছে এইচআইভি ও এইডসের আতংক। অজানা অচেনা এই রোগের প্রতিকার নিয়ে শঙ্কিত উন্নত বিশ্ব। ফ্রেডি মারকারির মত বড় তারকাদের গোপন যৌন জীবনের চমক নিয়মিত উন্মোচিত হচ্ছে প্রচার মাধ্যমে এবং এইচআইভি ও এইডসের জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিকৃত যৌন মানসিকতা। হতে পারে হোসেন মোহম্মদ নিজেও চিন্তিত। তার চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও ছিল। তাই একদিন সকালে নিজ দরবারে তলব করলেন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবুচন্দ্র মন্ত্রীকে। আদেশ দিলেন জরুরি ভিত্তিতে এর উপর সচেতনতা তৈরি করতে। যে কথা সে কাজ। গবুচন্দ্রের নির্দেশে মন্ত্রণালয় আয়োজন করল বিশাল এক সেমিনারের। পোলাও-কোর্মা, কালিয়া-জর্দার পাশাপাশি কিছু সাদা চামড়ার বিশেষজ্ঞকে হাজির করা হল ওজন বাড়াতে। গবুচন্দ্রের সভাপতিত্বে সেমিনার শুরু হল। বক্তাদের অনেকেই বললেন, আন্তর্জাতিক গণ্ডি পেরিয়ে এইচআইভি/এইডস এখন বাংলাদেশেই আস্তানা গাড়তে শুরু করেছে। সেমিনারের শেষ বক্তা হিসাবে বক্তব্য দিতে দাঁড়ালেন জনাব গবুচন্দ্র। আয়োজকদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলেন। উপস্থিত স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে সরকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। এবং তারপর যা বললেন তাতে চমকে উঠলো সেমিনারের দর্শক শ্রোতাগন। আলোড়ন উঠল চারদিকে। তিনি বললেন: ‘আমার মহান নেতা, পল্লী-বন্ধু ও দেশীয় উন্নতির সিংহ-পুরুষ হোসেন মোহম্মদ এরশাদের কারণেই এখন আর বিদেশে নয়, দেশেই তৈরি হচ্ছে এইচআইভি। আগামীতে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে এই মূল্যবান সম্পদ।‘
ঘটনা ২)
সময়টা ৫ই জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনের জারজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমল। ওয়ান-ওম্যান শো মন্ত্রীসভায় জায়গা পেতে অথবা তা ধরে রাখতে চাই ভগবানজীর লাগামহীন বন্দনা। কাজটা করতে গিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলছেন। কেউ দিনকে রাত, রাতকে দিন বানিয়ে শ্রী শ্রী ভগবানের চরণতলে এমন সব সুপদ্যয় প্রসাদ দিচ্ছেন যা হজম করতে প্রয়োজন হচ্ছে বিশেষ উদরের। তেমনি এক তৈলাক্ত প্রসাদ দিতে গিয়ে তথাকথিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম বললেন: ’দুনিয়ার কোথাও ছুটির দিনে চিকিৎসক পাওয়া যায়না। কেউ মরে গেলেও চিকিৎসক আসেনা’। ফুট লং সাব-ওয়ের এই নপুশংক স্যামৌইচ গোটা পৃথিবীকে দেবী পূজার বলি বানিয়ে এমন এক তথ্য উপহার দিলেন যার সহজ অর্থ হবে ভগবানজীর বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে ছুটির দিনেও চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। অবশ্য এই পূজারী স্বদেশে চিকিৎসক কর্তৃক রুগী ধোলাই, অথবা আন্দোলনের নামে গোটা চিকিৎসা খাত গুম করার কথা বুঝাতে চেয়েছেন কিনা তা পরিষ্কার করেন নি।
ঘটনা ৩)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের কোন এক শহর। সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা দ্বিতীয় টার্মের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন কেবল। নির্বাচনী উত্তাপ ইতিমধ্যে থিতিয়ে এসেছে। কর্মী ও ভোটাররা ফিরে গেছে নিজ নিজ জীবনে। আমার একমাত্র সন্তান লিয়ার বয়স ছয় মাস কেবল। দিনটা শনিবার। সকাল হতেই লিয়ার শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। গা গরম, সাথে সর্দি। দুপুরের দিকে শরীর আরও খারাপ হতে থাকল। গিন্নী এবং আমি দুজনেই উদ্বিগ্ন। এক পর্যায়ে গিন্নীর মনে হল লিয়া শ্বাস ফেলছে না। ভয়ে আতংকে চীৎকার করে উঠল সে। সাত পাঁচ না ভেবে আমি ৯১১’এ ফোন করলাম। সেকেন্ডের মধ্যে একজন জানতে চাইল আমার জরুরি প্রয়োজনটা কি। দুই বাক্যে বুঝিয়ে বললাম সবকিছু। ফোন না ছেড়ে ভদ্রমহিলা জানতে চাইলেন লিয়ার মেডিক্যাল ইতিহাস। এতকিছু বলার ধৈর্য ছিলনা। আমাকে আশ্বাস দেয়া হল জরুরি চিকিৎসার জন্য একটা টীম ইতিমধ্যে রওয়ানা হয়ে গেছে। এ ফাঁকে লিয়া চীৎকার করে উঠল। ৯১১ ডিস-পাচার আমাকে আশ্বাস দিলেন যেহেতু সে কাঁদতে পারছে তাই নিঃশ্বাস না ফেলার ভয় আপাতত কেটে গেছে। একটু অপেক্ষা করতে বলে শুভ কামনায় জানিয়ে ফোন রেখে দিলেন। ঠিক ছয় মিনিটের মাথায় দরজার কড়া নড়ে উঠল। ওরা হাজির। সংখ্যায় তিন জন। সিনিয়র নার্স, সাথে একজন সহযোগী ও এম্বুলেন্সের ড্রাইভার। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লিয়ার দায়িত্ব তাদের হাতে চলে গেল। জরুরি ভিত্তিতে যা করা সম্ভব তাই করা হল। পাঁচ মিনিটের মাথায় চীনা নার্স মৃদু হাসি দিয়ে ঘোষণা দিল চিন্তিত হওয়ার মত তেমন কিছু নেই লিয়ার শরীরে। চাইলে হাসপাতালে পৌঁছে দেবে আমাদের। ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় করে দিলাম তাদের। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নেমে গেছে। রোববার দুজনেরই ছুটি। তাই সকালের দিকে হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনে রাত জাগতে তৈরি হলাম। সে রাতে তেমন কিছুই হয়নি লিয়ার। ভোরের নাস্তা খেয়ে নিজ গাড়িতে রওয়ানা দিলাম হাসপাতালের দিকে। জরুরি বিভাগে নাম লেখানোর সাথে সাথে ডাক্তার, নার্সদের তৎপরতার নীচে চাপা পরে গেল আমাদের উপস্থিতি।
ভিন্ন ভিন্ন তিনটা ঘটনা। সূত্র এক, চিকিৎসা খাত। বোধহয় কার্ল মার্ক্সেরই কথা হবে, ’যদি বুঝতে পারি আমি কম জানি, চেষ্টা করি বেশি জানার’।