চোখ থাকলে চোখে যেমন পানি থাকে, হৃদয় থাকলে হৃদয়েও আবেগ থাকে। এটাই নিয়ম। এসব মিলিয়েই আমরা মানুষ। মান এবং হুস! পশুর সাথে আমাদের পার্থক্যটা বোধহয় এখানেই। এ দুইয়ের মিলনে মাঝে মধ্যে আমরা এমন কিছু করে ফেলি যার কোন ব্যাখ্যা হয়না। গুম এবং হত্যার কাহিনী গুলো আমি সাধারণত এড়িয়ে যাই। পড়তে গেলে কষ্ট লাগে। অক্ষমতা এক সময় ক্রোধের জন্ম দেয়। এবং ক্রোধ হতেই শুরু হয় উচ্চ রক্তচাপ। এ নিয়ে বহুবার ডাক্তারের সাবধান বানী শুনতে হয়েছে। তাই চেষ্টা করি ক্রোধ জন্ম দেবে এমন ঘটনায় চোখ কান বন্ধ রাখতে। কিন্তু চেষ্টা করলেই সব সময় সম্ভব হয় তাও নয়। হয়ত সপ্তাহ খানেক আগের ঘটনা। খবরের পাতায় বাসি হয়ে গেছে ঘটনা গুলো। কিন্তু ফেসবুকের মত সোশ্যাল মিডিয়াতে তা ফিরে ফিরে আসছে। এবং আমি নিশ্চিত যতদিন আমাদের কারোর ভেতর বিবেক বলে একটা জিনিষ থাকবে ফিরে আসবে কাহিনী গুলো।
খুব সাদামাটা কাহিনী। অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আজ ছয় মাস। মা-বাবা প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকে। উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়। এই বুঝি ফিরে এলো তাদের বুকের মানিক। তিন বছরে শিশু বাবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। মা তার অবুঝ শিশুকে বুঝাতে পারছেনা কোথায় গেছে তার বাবা। একটা নয়, দুটা নয়, হাজার হাজার পরিবারে আজ অপেক্ষার মাতম। নদীতে বেওয়ারিশ লাশ ভেসে উঠলে অনেকে দৌড়ে যায়। জীবিত ফিরে পাওয়ার মিথ্যা আশায় ইতি টানতে লাশের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। লাশ হয়েও ফিরে আসেনা সন্তান, বাবা, ভাই অথবা নিকট কেউ। তাদের একটাই অপরাধ, রাজনীতির মারপ্যাঁচ ও সমীকরণে তারা পরাজিত সৈনিক। ক্ষমতাসীনরা তাদের ধরে নিয়ে যায় ক্ষমতার ভাগার পরিষ্কার রাখতে। পুলিশ ও র্যাব দিয়ে খুন করায় এবং লাশ পুঁতে রাখে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, আড়িয়লাখাঁ অথবা শীতলক্ষ্যার পানিতে। ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় থাকাটা খুবই নাকি জরুরি। তা না হলে এমন সব শক্তি নাকি ক্ষমতা বসবে যাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ থাকবেনা। থাকবেনা শেখ মুজিবের নাম, থাকবেনা কথিত বঙ্গমাতার গুণকীর্তন গাওয়ার মাজার। কিন্তু একজন দুইবছরের শিশু এসবের কিছুই বুঝেনা। তার কাছে তার বাবাই সবকিছু। তার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, দেশপ্রেম, জাতির পিতা, ইতিহাস, ভূগোল সবকিছুই তার বাবা।
শেখ হাসিনা তার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে যাদের বছরের পর বছর ধরে হত্যা করে চলছেন তার কি বিচার হবেনা? আজ হতে একশ বছর পরে হলেও যদি কোনদিন এদেশে মানবতা ডানা মেলতে সক্ষম হয় আশায় থাকবো এই খুনির লাশ কবর হতে উঠিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। হোক তা কংকাল অথবা মাটিতে মিশে যাওয়া একমুঠো ধুলো। সে ধুলো বোতলে আটকে কেউ না কেউ তৈরি করবে ঘৃণার মাজার। এবং আমরা যারা সময়ের সাক্ষী ছিলাম সৌরজগতের কোন এক গ্রহ নক্ষত্রে বসে স্বস্তি ফেলবো এবং মনে করবো আমাদের অক্ষমতার দীর্ঘশ্বাস বৃথা যায়নি!