তৌফিক ভাই,
শুনলাম লাঠিসোটা নিয়ে শহীদ মিনারে যাচ্ছেন পিয়াস করিমের লাশ ঠেকাতে। যেতেই পারেন। সময়টা এখন আপনাদের। ডানে পুলিশ, বায়ে আইন-আদালত আর মাথার উপর দেব-দেবীর আশীর্বাদ থাকলে এসব কাজ কোন ব্যাপার না। বরং রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এসব থ্রিলারের মজাই আলাদা। মিউনিসিপালটি অফিসে টেন্ডার ছিনতাইয়ের মত মৃত পিয়াস করিমের লাশও আপনি ছিনিয়ে আনতে পারেন। সে ক্ষমতা আপনার আছে। আমার জন্য ব্যাপারটা অবশ্য একটু ঘোলাটে। একজন প্রফেশনাল ছিনতাইকারী যখন শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষাকারীর ভূমিকায় নামে অনেকের মত আমারও সন্দেহ হয়। সন্দেহ হয় যুগ যুগ ধরে মুক্তির যে সংজ্ঞা জেনে আসছি তা নিয়ে। হয়ত এর উপর সম্যক জ্ঞান নিতে আমার মত বিভ্রান্ত মানুষকে আপনার মত স্বীকৃত চোরের দ্বারস্থ হতে হবে। চোর বলায় রাগ করবেন না প্লীজ। ব্যাপারটা যে সত্য তা আমি যেমন জানি আপনিও জানেন। আশাকরি অস্বীকার করে কাপুরুষের পরিচয় দেবেন না। রাজনীতির নামে আপনি ও আপনার ইয়ার দোস্তরা চুরি করে থাকেন। নদীতে নৌকা আটকে আপনি, আপনার এমপি, থানার ওসি, আপনার দলের সভাপতি মিলে বখরা উঠান। রাস্তার পতিতাদেরও আপনারা বাদ দেননা। তাদেরও চাঁদা দিতে হয়। তৌফিক ভাই, চুরি ও চেতনা একসাথে চলেনা। আপনি যেই হউন না কেন, যত শক্তিশালী হউন না কেন, কোন ভাবেই এই দুই বৈরী শক্তিকে এক করতে পারবেন না। নিজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সৈনিক দাবি করলেও আমার মত অনেকের কাছে আপনার আসল পরিচয় একজন লুটেরা, চাঁদাবাজ ও ধর্ষক হিসাবে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আপনার জন্য হীরন মাষ্টারের বাড়ি হতে তার বিবাহিতা স্ত্রীকে উঠিয়ে এনে গণধর্ষনের আয়োজন করার স্বাধীনতা। চেতনা আপনার জন্য কমিশন প্রাপ্তির বৈধতা, দুস্থ মাতাদের জন্য বরাদ্দকৃত গম, ঢেউটিন আত্মসাৎ করার লাইসেন্স। হতে পারে এসব নিয়েই এখন আপনার জীবন। কিন্তু আমার মত অনেকের কাছে মুক্তি মানে কথা বলার মুক্তি, ভোট দেয়ার মুক্তি, স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর মুক্তি।
তৌফিক ভাই, সাদ্দাম হোসেনের কথা মনে আছে আপনার? অথবা লিবিয়ার লৌহমানব গাদ্দাফি? সাদ্দাম হোসেনের পৃথিবী এক সময় আপনার পৃথিবীর চাইতেও রংময় ছিল। চেতনা ও রাজাকার বিভেদের মত এই শাসকও জনগণকে শিয়া, সুন্নি ও কুর্দির বেড়াজালে আটকে শাসন করতেন। নিজ গুষ্টির লোকদের স্বাধীনতা দিতেন বাকিদের বিনাশ করার। যাকে যখন প্রয়োজন প্রকাশ্যে গুলি করে মারতেন। এভাবেই চলছিল অনন্তকাল। এবং প্লাটফর্ম তৈরি ছিল সন্তান উদে কুদেদের সাম্রাজ্য বিকাশের। কিন্তু হায়, যেদিন সাপের গর্তের মত একটা গর্ত হতে বের করে আনা হয় খুব অসহায় দেখাচ্ছিল তাকে। কোথাও কোন প্রতিরোধ ছিলনা। সর্বক্ষণ পদসেবার জন্য উন্মুক্ত ভক্তের দল সেদিন ছিল অনুপস্থিত। গোত্র শাসনের আড়ালে গাদ্দাফি নিজকে লিবিয়ার ঈশ্বর ভাবতে অভ্যস্ত ছিলেন। বিদেশ হতে সুন্দরী তরুণী ভাড়া করে আনতেন দেহরক্ষী হিসাবে। নিজ গোত্রের বাইরে বাকিদের বলতেন ইঁদুর। ভাগ্যের নির্মন পরিহাস, বাচার জন্য এই একনায়ককে শেষ পর্যন্ত ইঁদুরের গর্তেই লুকাতে হয়েছিল। তাও শেষরক্ষা হয়নি। ইঁদুরের মত টিপে টিপে হত্যা করা হয়েছিল তাকে। বাহারী পোশাকের যৌনাবেদনময়ী দেহরক্ষীরা কোন কাজে আসেনি সেদিন। নির্বাচন দিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখতে পারেন তৌফিক ভাই। গায়ের চামড়া গায়ে রাখতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। কুকুর বেড়ালের মত তাড়া করবে আপনাদের। যেখানে পাবে সেখানেই আখিরাত উপহার দেবে আপনার মত চেতনাধীদের। কে এবং কারা দেবে আপনার হয়ত দ্বিধা থাকবে। কিন্তু আমার মত অনেকের কোন সন্দেহ থাকবেনা। কুকুর বেড়ালের মত আপনাদের লাশ যখন দেশের নদী-নালা খাল-বিলে ভাসতে থাকবে এই আমার মত অনেকে কিবোর্ডে আবারও হাত দেবে এবং লেখার বন্যায় ভাসিয়ে দিতে চাইবে এসব পশুত্ব। কিন্তু তখন কেউ যদি সামনে এসে দাবি করে আমরা মানুষ মারছি না মারছি আওয়ামী লীগ, খুবই কি অন্যায় হবে?
কোমরের পিস্তলটা হাতে এনে খুব শক্ত করে ধরে রাখবেন তৌফিক ভাই। বলা যায়না, পিয়াস করিমদের মৃত আত্মারা ভুত হয়ে ফিরে আসতে পারে।
শুভেচ্ছান্তে,
ওয়াচডগ