এ মুহূর্তে বাংলাদেশ বিমানকে শুধু বিমান না বলে গোটা দেশের ম্যাথম্যাটিক্যাল মডেল বললে ভুল হবেনা। ব্রিটিশ লেখিকা আগাথা কৃষ্টির মার্ডার অন দ্যা ওরিয়েন্টাল এক্সপ্রেস উপন্যাসটা যাদের পড়া তাদের বুঝতে কিছুটা সহজ হবে এ মডেলের গতি প্রকৃতি। কোন এক তুষার ঝরা রাতে ইস্তাম্বুল হতে লন্ডন গামী ট্রেনে একজন যাত্রী খুন হয়। একই ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন বিখ্যাত বেলজিক ডিটেকটিভ হারকুল পয়িরো। মৃতদেহ এবং আশপাশের প্রমানাদি পরীক্ষা পূর্বক জনাব পয়িরো উপসংহারে আসেন এ খুন একজনের কাজ নয়, বরং সে রাতে ট্রেনের বগিতে অবস্থানরত বাকি সবার হাত রয়েছে তাতে। ১৩ জন যাত্রীর সবাই একে একে ছুরি মেরেছিল নিহতের গায়ে এবং প্রতিশোধ নিয়েছিল দুরের দেশ আমেরিকায় কৃত অপরাধের। বিমান এবং বিমান বন্দর হয়ে সোনা চোরাচালানির যে নেটওয়ার্ক আমাদের গোয়েন্দারা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন তাতেও রয়েছে সে রাতের ছায়া। কেউ বাদ নেই বিমানের ডানা ভেঙ্গে দেয়ার মিশন হতে। ক্লিনার হতে শুরু। জিএম, ডিজিএম, পাইলট, বিমানবালা, মন্ত্রী, এম্পি হতে শুরু করে কথিত সরকারের গোটা নেটওয়ার্ক। জনৈক ধর্মপুত্রের সাথে দৈনিক ৬০ কেজি সোনা পাচারে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন বিমানের তিন জিএম। বিনিময়ে পেতেন দৈনিক ৫ লাখ করে। সর্বসাকুল্যে আয় করেছেন ১৬৫ কোটি। সুখের নদীতে সাতার কাটতেও সময় নেননি এসব ভাগ্যবানের দল। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, ঢাকায় আলীশান বাড়ি, দামি গাড়ি, নামে বেনামে বিনিয়োগ আরও কত কি! মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পরেছে গোটা প্রশাসন। এ পথের পথিক কি বিমান তাহলে একা? সবকিছুই কি বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা মাত্র? গোটা বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র কি বিমান তুলে ধরেনা? রেলের কালো বিড়াল কি সে ছবিরই বিমূর্ত প্রতীক নয়? বি অনেষ্ট, নিজকে প্রশ্ন করুন, নাগরিক হিসাবে আমরা প্রত্যেকে কি এই সিন্ডিকেটেড নেটওয়ার্কের সদস্য নই?
চোরাইকারবারীর আখড়া আমাদের বিমান, গন-চুরি ওপেন সিক্রেট রেলে, বাসে, সব জায়গায়। মন্ত্রণালয়ের পরতে পরতে দুর্নীতির কঠিন বাধন। বিদ্যুৎ দিয়ে বাড়ি, গাড়ি, নারী বানাচ্ছেন আমাদের রাজপুত্ররা। অথচ জেনে শুনে আমরা বিমানে চড়ছি, রেলে উঠছি, মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতার মুখ-মৈথুন করে চেতনার সরোবরে তা পবিত্র করছি। স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠবে, কে বেশি অপরাধী, বিমানের জিএম? কথিত ধর্মপুত্র? একজন ভোট ডাকাত জারজ মন্ত্রী? নাকি এদের অন্ন যোগানদাতা আমি, আপনি বাকি সবাই? ভেবে দেখুন।