আরও একটা ট্যুর শেষে ঢাকা ফিরছিলাম। এবার ট্রেনে করে। শান্তাহার হতে যাত্রা করে যমুনা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌছতে যে সময় লেগেছিল হিসাব করে দেখেছি এ সময়ে আমি দুবার আমার আগের গন্তব্য হতে দেশে ফিরতে পারতাম। অর্থাৎ ইংল্যান্ডের ডেভনশায়ার কাউন্টির পেইংটন হতে কোটি মানুষের শহর ঢাকায়। রেলের লকোমটিভ ক্লান্তি শেষে বিশ্রাম নেয় উপোলদ্বি ছিল নতুন। জানা অজানা কত ঘাটে যে এই ইঞ্জিন বেহুশ হয়ে পরেছিল তার ইয়াত্তা ছিলনা। যমুনা নদীর চরে আটকে নিজে বিশ্রামে যাওয়ার পাশাপাশি যাত্রীদেরও পাঠিয়েছিল অনন্তকালের বিশ্রামে। ফেরীর হাগা-মুতার ভান্ডার উপচে পরার পাশাপাশি খা খা করেছিল খাদ্য ভান্ডার। তবে কোন কিছুই থামাতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে নামক এক অকুতোভয় সৈনিকের অদম্য যাত্রা। দুই রাত একদিনের যাত্রা শেষে দিগন্তরেখায় যখন দেখা মিলল স্বপ্নের শহর ঢাকার বিশ্বজয়ের আনন্দ এসে চেপে বসলো গোটা শরীরে। কিন্তু তাতেও নিশ্চিত হওয়া গেলনা ঘরে ফেরার। কারণ শাহজাহানপুরের সামনে এসে আবার থমকে গেল। এ যাত্রায় মহাকালের থামা। একে একে দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেল। অনেক জানালা গলে লাফিয়ে নেমে গেল। মিশে গেল দুপাশের সারি সারি বস্তির কোন এক চিপা গলিতে। এলাকাটা ছিল আমার অপরিচিত, তাই সাহস করলাম না। মনে মনে গুষ্টি উদ্বার করছি ১৫ কোটি মানুষের চৌদ্দ কোটি নিরানব্বই লাখ নিরানব্বই হাজার নয় শত নিরানব্বই জনকে। বসে আছি উৎসুক হয়ে। মনোযোগ দিয়ে দেখছি জানালার বাইরের পৃথিবী। বস্তির পৃথিবী। এ নিয়ে রঙ্গিন কোন ছবি আকার অবকাশ ছিলনা। শুধু ছিল কঠিন বাস্তবতা। সাথে একমুঠো দীর্ঘশ্বাস। হঠাৎ করেই খেয়াল হল কিছু একটা ঘটছে বাইরে। প্রচন্ড চীৎকারে গম গম করে উঠল চারদিক। সাথে যোগ হল কোন এক নারীর বিভিৎষ চীৎকার, কান্না ও অভিশাপের ভয়াল সুনামি। এক সাথে এত গুলো বিশেষণ উচ্চারণ আগে কোনদিন শুনিনি। চমকিত হলাম। আমার বাংলা ভাষার অভিধান কিছুটা হলেও পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হল। হঠাৎ করে আবিষ্কার করলাম উপভোগ করতে শুরু করেছি আমার এ অনিশ্চিত যাত্রা। ভাষার কি বাহারি ব্যবহার! তার একটা বাক্য এখানে উচ্চারণ আমার চারশো ফেসবুক বন্ধুদের অন্তত দুইশত জনকে হারাতে হবে এক লহমায়। তাই বিস্তারিত লিখে নিজের ফাউন্ডেশনের উপর আঘাত করতে চাইনা। এত বছর পর ঘটনাটা মনে পড়ল বিশেষ একটা কারণে। শেখ হাসিনা।
মৃত্যুর আগে শেখ হাসিনার স্বামী সুধা মিয়া অফিসিয়ালি ডিক্লেয়ার করেছিলেন বাবার পরিচয়ে শিক্ষকদের করুণায় গ্রেস নাম্বার নিয়েই বিএ পাশ করেছিলেন উনার সহধর্মীনি। তাই নিজকে বিএ পাশ ও বহুগামী পিএইচডি ডিগ্রীধারী দাবি করলেও শেখ হাসিনার শিক্ষার দৌড় কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায় তার ইদানীংকালের কথাবার্তায়। প্রতিপক্ষ নেত্রীকে কিশোর বয়সে পড়া চটি বইয়ের নায়িকা বানাতে গিয়ে যে সব বিশেষণ উচ্চারণ করেছেন তার সাথে শাহজাহানপুর বস্তির মহিলার ভাষার ভারসাম্য খুঁজতে গেলে তা হবে অন্যায়। কারণ স্বামীর শারীরিক অত্যাচার ও নিগ্রহ হতে বাঁচার জন্য তাকে (বস্তির মহিলা) সে পথে নামতে হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনাকে সে পথে কেউ নিয়ে যায়নি। পিতার দেশে ফেরার বার্ষিকীতে কয়েক হাজার শিশু কিশোরের সামনে এই মহিলা যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা কেবল অমার্জনীয়ই নয়, বরং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আচ্ছা কেউ যদি পালটা নোংরামির আশ্রয় নিয়ে উনার বিরুদ্ধে স্বামী পেটানোর অভিযোগ আনে খুব কি অন্যায় হবে? খুব কি নোংরা হবে কেউ যদি ইঙ্গিত করে এরশাদ ও আপন বেয়াইয়ের সাথে নোংরামির? খুব কি বড় ধরণের শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে কেউ যদি সাহস করে বলতে শুরু করে কিশোরগঞ্জের জনৈক মহিলা এমপির সাথে উনার পিতার কথিত অবৈধ সম্পর্কের? ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি আর সেনাবাহিনী পরিবেষ্টিত হয়ে একজন মহিলাকে বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে, ফটকে তালা ঝুলিয়ে, হাসি তামাশা তথা নোংরামি করলে তার ফল ভোগ করার জন্যও তৈরি থাকতে হয়। কারণ গু তো কেবল টাকি মাছেই খায়না।